খানুয়ার যুদ্ধ -এর সময়কাল, অবস্থান, বিবাদমান পক্ষ, পটভূমি, রাজপুত নেতা, বাবর ও সংগ্রাম সিংহের লক্ষ্য, মুঘল ও রাজপুত সৈন্য, যুদ্ধ কৌশল, বাবরের জয়লাভ ও যুদ্ধের গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।
ইতিহাস বিখ্যাত খানুয়ার যুদ্ধ প্রসঙ্গে খানুয়ার যুদ্ধের সময়কাল, খানুয়ার যুদ্ধে বিবাদমান পক্ষ, খানুয়ার যুদ্ধের স্থান, খানুয়ার যুদ্ধের সময় রাজপুত নেতা, খানুয়ার যুদ্ধের পটভূমি, খানুয়ার যুদ্ধে রাজপুত ও মোঘল সৈন, খানুয়ার যুদ্ধে রাজপুত রাণা সঙ্গের পরাজয় ও মোঘল সম্রাট বাবরের জয়লাভ এবং খানুয়ার যুদ্ধের গুরুত্ব।
১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের খানুয়ার যুদ্ধ
সময়কাল | ১৫ মার্চ, ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দ |
স্থান | খানুয়া, বর্তমান রাজস্থানের ভরতপুর জেলা |
বিবাদমান পক্ষ | মুঘল সম্রাট বাবর ও রাজপুত রাজা রানা সংগ্রাম সিংহ |
ফলাফল | বাবরের জয়লাভ |
ভূমিকা :- ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দের পানিপথের প্রথম যুদ্ধ -এ ইব্রাহিম লোদীর পরাজয় মুঘল সম্রাট বাবরকে দিল্লীর অধিপতি করলেও ভারতবর্ষ -এর “সম্রাট” করতে পারেনি। কারণ, লোদী ছাড়াও সেই সময় রাজপুত জাতি ছিল ভারতবর্ষে বাবরের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী।
খানুয়ার যুদ্ধের সময়কাল
১৫২৭ সালের ১৫ই মার্চ খানুয়ার যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
খানুয়ার যুদ্ধের স্থান
বর্তমান ফতেপুর সিক্রির নিকট খানুয়াতে সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক খানুয়ার যুদ্ধ।
খানুয়ার যুদ্ধে বিবাদমান পক্ষ
মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর এবং রাজপুত রাজা রানা সংগ্রাম সিংহের মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
খানুয়ার যুদ্ধের সময় রাজপুত নেতা
সেই সময় রাজপুতদের নেতা ছিলেন মূলত দু’জন। একজন মেওয়াটের রাজা হাসান খান এবং অন্যজন মেবারের রাজা রানা সংগ্রাম সিংহ। রানা সংগ্রাম সিংহ বেশি প্রভাবশালী হলেও হাসান খানের সাথে তার কোনো বিরোধ ছিল না। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত হাসান খান আর সংগ্রাম সিংহ এক সাথেই লড়াই করেছেন।
খানুয়ার যুদ্ধে সংগ্রাম সিংহের লক্ষ্য
রাজপুত জাতি কেবল রাজস্থান নয় বরং সমগ্র ভারতবর্ষ শাসন করবে – এটাই ছিল সংগ্রাম সিংহের একমাত্র লক্ষ্য। আর একারণেই শক্তিশালী লোদীকে পরাজিত করতে বহিরাগত শত্রুর সাহায্য নিতেও পিছপা হননি তিনি।
খানুয়ার যুদ্ধে বাবরের লক্ষ্য
বাবরও কেবল দিল্লী আর আগ্রার শাসক হতে হিন্দুস্তানে আসেননি। তারও স্বপ্ন ছিল সমগ্র হিন্দুস্তানের অধিকর্তা হবার। তাই পানিপথের যুদ্ধ চলাকালীন সময়েই বাবরের সাথে হওয়া চুক্তি থেকে সরে আসেন সংগ্রাম সিংহ।
খানুয়ার যুদ্ধের পটভূমি
যুদ্ধের কারণ সম্পর্কে ইতিহাসবিদদের ভিন্ন মত রয়েছে।
(১) চুক্তি ভঙ্গ
পানিপথের যুদ্ধ -এর আগে বাবর ও রানা সংগ্রাম সিংহের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল ইব্রাহিম লোদির বিরুদ্ধে পরে রাণা সংগ্রাম সিংহ তা প্রত্যাহার করেছিলেন।
(২) সম্রাটের স্বীকৃতি
রাণা সংগ্রাম সিংহ বাবরকে দিল্লির সম্রাট হিসাবে বিবেচনা করেন নি। ফলে বাবরের পক্ষে তা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।
(৩) উচ্চভিলাষ
কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন যে, এই যুদ্ধ বাবর এবং রানা সংগ্রাম সিংহের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার ফলস্বরূপ ছিল খানুয়ার যুদ্ধ।
(৪) বাবর ও রাণা সংগ্রাম সিংহের লক্ষ্য
বাবর পুরো ভারতকে পদদলিত করতে চেয়েছিলেন, আর রানা সংগ্রাম সিংহ তুর্কি-আফগান রাজ্যের ধ্বংসাবশেষের উপর একটি হিন্দু রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, যার ফলে ১৫ ই মার্চ, ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে খানুয়াতে দুই বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।
খানুয়ার যুদ্ধে সৈন্যদের উৎসাহ
মুঘল বাহিনীকে বিভিন্ন ভাবে উদ্দীপ্ত করতে থাকেন শক্তিশালী রাজপুতদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। তাছাড়া রাজপুতরা সংখ্যায় ছিল মুঘলদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এজন্য মুঘল সৈন্যরাও আগ্রহী ছিলো না তাদের সাথে যুদ্ধে জড়ানোর।
বাবরের জিহাদ ঘোষণা
সংগ্রাম সিংহের নেতৃত্বে রাজপুত বাহিনী কয়েক জায়গায় হামলা চালিয়ে মসজিদে আগুন দেয়, আর হত্যা করে ইমামদের। এই ঘটনাকে পুঁজি করে রাজপুতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে বাবর জিহাদ হিসেবে ঘোষণা করেন।
খানুয়ার যুদ্ধে মুঘল ও রাজপুত সৈন্য
সেই সময় মুঘল সৈন্যের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫ হাজার। আর রাজপুতদের সৈন্য ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার, অর্থাৎ ৫গুণ বেশি।
খানুয়ার যুদ্ধ কৌশল
বাবরের অসামান্য যুদ্ধ কৌশলের কাছে মার খেতে থাকে রাজপুত বাহিনী। বাবরের দুই সন্তান হুমায়ুন এবং হিন্দালও বীর বিক্রমে যুদ্ধ চালিয়ে যায় সংগ্রামের বাহিনীর বিরুদ্ধে। সকালে শুরু হওয়া যুদ্ধ দুপুরের মধ্যেই মুঘল বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
খানুয়ার যুদ্ধে বাবরের জয়লাভ
মুঘলদের মুহুর্মুহু কামানের গোলাবর্ষণ আর চারদিক থেকে সংঘবদ্ধ আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পিছু হটতে থাকে রাজপুতরা। বেশ ক’জন রাজপুত রাজা ও নেতার মৃত্যুর ফলে সৈনিকরা সঠিক দিকনির্দেশনাও পাচ্ছিল না। সবকিছু মিলিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই খানুয়ার যুদ্ধে জয় লাভ করেন সম্রাট বাবর।
খানুয়ার যুদ্ধের গুরুত্ব
- (১) খানুয়ার যুদ্ধের গুরুত্ব পানিপথের প্রথম যুদ্ধ অপেক্ষা বেশী। কারণ, পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয়লাভের ফলে বাবরের ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য স্থাপনে প্রথম ধাপ সংগঠিত হলেও মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠা ঘটেনি। কিন্তু খানুয়ার যুদ্ধে জয়লাভের ফলে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীর পরাজয় ঘটে।
- (২) খানুয়ার যুদ্ধে জয়লাভ বাবরকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিল ও তিনি আগ্রাকে তাঁর রাজধানীতে পরিণত করলেন এবং এই যুদ্ধে জয়লাভের ফলে ভারতে রাজপুত প্রাধান্য স্থাপনের আশা চিরতরে বিলুপ্ত হয়েছিল।
- (৩) খানুয়ার যুদ্ধে জয়ী হয়ে বাবর সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেন ভারতের সম্রাট হতে তার সামনে কার্যত আর কোন বাধা রইল না। এই যুদ্ধের পর বাবর সুলতান উপাধি ত্যাগ করে ‘পাদশাহ’ বা ‘বাদশাহ ‘ উপাধি গ্রহণ করেন।
উপসংহার :- অধ্যাপক ঈশ্বরী প্রসাদ -এর ভাষায় বলা যায় যে, “The battle of Khanwa one of the decisive battle on Indian history”.
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “খানুয়ার যুদ্ধ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) খানুয়ার যুদ্ধ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে, মুঘল সম্রাট বাবর ও রাজপুত রাজা রানা সংগ্রাম সিংহের বাহিনীর মধ্যে।
১৫২৭ সালে।
এই যুদ্ধে জয়লাভের ফলে রাজপুত শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বাবরের পক্ষে ভারতে সাম্রাজ্য স্থাপনের আর কোনও বাধা থাকল না।
১৫২৭ সালে।