উত্তরাধিকার যুদ্ধে ঔরঙ্গজেবের সাফল্যের কারণ প্রসঙ্গে মুরাদের দুর্বলতা, সুজার বিলাস ব্যসন, পুত্রস্নেহাতুর শাহজাহান, দারার ধর্মীয় উদারতা, ঔরঙ্গজেবের সুন্নি মতবাদ, যশোবন্তের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, ঔরঙ্গজেবের গোলন্দাজ বাহিনী ও সৈন্য পরিচালনা সম্পর্কে জানবো।
উত্তরাধিকার যুদ্ধে ঔরঙ্গজেবের সাফল্যের কারণ
বিষয় | উত্তরাধিকার যুদ্ধে ঔরঙ্গজেবের সাফল্যের কারণ |
সময়কাল | শাহজাহানের রাজত্বকাল |
ভ্রাতৃদ্বন্দ্ব | দারা, সুজা, ঔরঙ্গজেব, মুরাদ |
বিজয়ী | ঔরঙ্গজেব |
ভূমিকা :- ভ্রাতৃদ্বন্দ্বে ঔরঙ্গজেবের দূরদর্শিতা, কূটনীতিজ্ঞান, দলগঠনের ক্ষমতা, শৃঙ্খলাপরায়ণতা সর্বোপরি তাঁর সামরিক প্রতিভা তাঁর সাফল্যকে অনিবার্য করে তুলেছিল। পক্ষান্তরে তাঁর প্রতিপক্ষদের মধ্যে এই গুণের অভাব ছিল।
মুরাদের দুর্বলতা
মুরাদের দেহে সিংহের মতো বল থাকলেও, রাজনীতিতে তিনি ঔরঙ্গজেবের তুলনায় শিশু ছিলেন।
সুজার বিলাসব্যসন
সুজা সামরিক দক্ষতার দিক থেকে ঔরঙ্গজেবের সমকক্ষ হলেও, সতেরো বছর বাংলার সুবাদার হিসেবে মদ ও নারী নিয়ে ডুবে থাকার ফলে, তাঁর সামরিক শক্তি ও রাজনৈতিক জ্ঞানে মরচে পড়ে গিয়েছিল। উপরন্তু তাঁর বিলাসব্যসন তাঁকে অনিবার্যরূপে শোচনীয় পরিণামের দিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল।
পুত্রস্নেহাতুর শাহজাহান
- (১) শাহজাহান-এর অত্যধিক পুত্রস্নেহ-প্রবণতা, দারার প্রতি অতিরিক্ত অনুগ্রহ প্রদর্শন ও বিদ্রোহী পুত্রদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা অবলম্বনে দ্বিধাগ্রস্ত মনোভাব ঔরঙ্গজেবের সাফল্যে সহায়তা করেছে। বিদ্রোহী হলেও পুত্রদের প্রতি তাঁর স্নেহের ঘাটতি ছিল না।
- (২) ঔরঙ্গজেব ও মুরাদের বিরুদ্ধে যশোবন্ত সিংহকে প্রেরণ করেও, পাছে তিনি পুত্রদ্বয়ের কোনো ক্ষতি করে বসেন, এই আশঙ্কায় শাহজাহান স্বতন্ত্র ক্ষমতা দিয়ে কাশিম খানকে যশোবন্ত সিংহের রাশ টেনে ধরার জন্য সঙ্গে পাঠান।
- (৩) সুজার বিরুদ্ধে সুলেমান শুকোকে পাঠিয়েও সম্রাট অনুরূপ আশঙ্কায় পড়েছিলেন। এইজন্য প্রধান সেনাপতি জয়সিংহকে সুলেমানের ‘আতালিক’ বা অভিভাবক নিযুক্ত করে যুদ্ধচালনার সম্পূর্ণ ভার তাঁর ওপর ন্যস্ত করেছিলেন।
- (৪) উদ্দেশ্য, সুলেমানের হাতে সুজার কোনো ক্ষতি হবার আশঙ্কা দেখা দিলে, জয়সিংহ তা নিবারণ করবে। পুত্রস্নেহাতুর বৃদ্ধের এইসব অযৌক্তিক ব্যবস্থা দারার পক্ষে ক্ষতির কারণ হয়েছিল।
দারার ধর্মীয় উদারতা
দারা ধর্মের ব্যাপারে উদারতার পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু রাজনীতির ক্ষেত্রে উদারতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হন। সপ্তদশ শতাব্দীতে এই ধর্মীয় উদারতার বাধা অতিক্রম করার ক্ষমতা দারার ছিল না।
ঔরঙ্গজেবের সুন্নী মতবাদ
ঔরঙ্গজেব সপ্তদশ শতাব্দীর কঠিন বাস্তব পরিস্থিতি উপলব্ধি করে, ‘সুন্নি’ মতবাদকে গ্রহণ করে তাঁর প্রতিপক্ষ দারাকে চরম আঘাত করেন। ‘সুন্নি’ মতবাদকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ঔরঙ্গজেব নির্বিঘ্নে তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হতে সক্ষম হয়েছিলেন।
যশোবন্তের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ
যশোবন্ত সিংহ দারাকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েও সরে দাঁড়াবার ফলে, ঔরঙ্গজেবের পক্ষে জয়লাভ সহজ হয়েছিল।
ঔরঙ্গজেবের গোলন্দাজ বাহিনী
উত্তরাধিকার যুদ্ধে ঔরঙ্গজেবের গোলন্দাজ বাহিনী দারার গোলন্দাজ বাহিনীর চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরী ছিল। তাছাড়া দারার অধীনে রাজপুত ও মুঘলবাহিনীর মধ্যে কোনো সমন্বয় ছিল না। এরই ফলে তারা কার্যকরী যুদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়।
ঔরঙ্গজেবের সৈন পরিচালনা
শাহজাহান পুত্র ঔরঙ্গজেব দারার থেকে সৈন্য পরিচালনায় অনেক বেশি কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। দারার সেনাবাহিনী যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ত, তখনই ঔরঙ্গজেব তাঁর সেনাবাহিনীকে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে নির্দেশ দিতেন।
উপসংহার :- তাই ড. ঈশ্বরীপ্রসাদ ঔরঙ্গজেবের বিজয়কে “Was the victory of action over supineness, of intrepidity over inertia, and of organisation and discipline over confusion and incoherence” বলে অভিহিত করেছেন।
(FAQ) উত্তরাধিকার যুদ্ধে ঔরঙ্গজেবের সাফল্যের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ঔরঙ্গজেব।
ঔরঙ্গজেব, দারা, সুজা ও মুরাদ।
সুজা।