বেসিনের সন্ধি -র সময়কাল, স্থান, স্বাক্ষরকারী দুই পক্ষ, বেসিনের সন্ধির পটভূমি হিসেবে মারাঠা সামন্ত-নৃপতিদের স্বাধীন রাজত্ব, মাহাদজি সিন্ধিয়া, নানা ফড়নবীশ, মারাঠা সামন্তদের আত্মকলহ, হোলকার ও সিন্ধিয়ার বিবাদ, হোলকারের পুণা আক্রমণ, বেসিনের সন্ধি স্বাক্ষর, বেসিনের সন্ধির শর্ত ও বেসিনের সন্ধির গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।
বেসিনের সন্ধি প্রসঙ্গে বেসিনের সন্ধি স্বাক্ষরের সময়কাল, কবে কাদের মধ্যে বেসিনের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়, ব্রিটিশদের সাথে পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও এর বেসিনের সন্ধি স্বাক্ষর, বেসিনের সন্ধি দ্বারা দ্বিতীয় বাজিরাও এর অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহণ, বেসিনের সন্ধি দ্বারা প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের সমাপ্তি, বেসিনের সন্ধির শর্ত ও বেসিনের সন্ধির গুরুত্ব সম্পর্কে জানব।
বেসিনের সন্ধি (১৮০২ খ্রিস্টাব্দ)
ঐতিহাসিক ঘটনা | বেসিনের সন্ধি |
সময়কাল | ১৮০২ খ্রিস্টাব্দ |
স্থান | বেসিন |
দুই পক্ষ | ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও |
ভূমিকা :- প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ -এর পর পেশোয়া মাধব রাও নারায়ণের আমলে নানা ফড়নবীশ ছিলেন মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রকৃত শাসক। ঐতিহাসিক গ্রান্ট ডাফ তাঁকে ‘মহান রাজনীতিবিদ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি মারাঠা সাম্রাজ্যকে বিস্তৃত করেছিলেন।
বেসিনের সন্ধির প্রেক্ষাপট
এই সন্ধির প্রেক্ষাপট ছিল নিম্নরূপ –
(১) মারাঠা সামন্ত-নৃপতিদের স্বাধীন রাজত্ব
এই সময় থেকে মারাঠা সামন্ত-নৃপতিগণ ক্রমেই স্বাধীন হয়ে উঠছিলেন। বেরারের ভোঁসলে, বরোদার গাইকোয়াড় এবং ইন্দোরের মলহর রাও হোলকারের বিধবা পুত্রবধূ অহল্যাবাঈ কার্যত স্বাধীনভাবে রাজত্ব চালাচ্ছিলেন।
(২) মাহাদজি সিন্ধিয়া
মারাঠা সামন্ত-নৃপতিদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ছিলেন গোয়ালিয়রের মাহাদজি সিন্ধিয়া। তিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হোলকারকে পরাজিত করেন এবং নানা ফড়নবীশের প্রাধান্য হ্রাসের জন্য পুণায় অভিযান পাঠান।
(৩) নানা ফড়নবীশ
মাহাদজি সিন্ধিয়ার মৃত্যুর পর (১৭৯৪ খ্রিঃ) নানা ফড়নবীশ মারাঠা সাম্রাজ্যের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী শাসকে পরিণত হন।
(৪) পেশোয়া
পেশোয়া মাধব রাও নারায়ণের মৃত্যুর পর (১৭৯৬ খ্রিঃ) রঘুনাথ রাও-এর পুত্র দ্বিতীয় বাজিরাও (১৭৯৬-১৮১৮ খ্রিঃ) পেশোয়া পদে অভিষিক্ত হন। তাঁর সঙ্গে নানা ফড়নবীশের বিবাদ শুরু হয়।
(৫) মারাঠা সামন্তদের আত্মকলহ
১৮০০ খ্রিস্টাব্দে নানা ফড়নবীশের মৃত্যুর পর মারাঠাদের অন্তর্দ্বন্দ্ব জটিল আকার ধারণ করে এবং মারাঠা সামন্তগণ বিচারবুদ্ধিহীন হয়ে ঘোরতর আত্মকলহে লিপ্ত হন।
(৬) হোলকার ও সিন্ধিয়ার বিবাদ
পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও ছিলেন দুর্বলচিত্ত ও ষড়যন্ত্রপ্রিয় ব্যক্তি। যশোবন্ত রাও হোলকার ও দৌলত রাও সিন্ধিয়ার বিবাদে তিনি ইন্ধন যোগাতে থাকেন।
(৭ )হোলকারের পুণা আক্রমণ
পেশোয়া সিন্ধিয়ার পক্ষ অবলম্বন করে হোলকারের বিরোধিতা করলে হোলকার পুণা আক্রমণ করে পেশোয়া ও সিন্ধিয়ার যুগ্মবাহিনীকে পরাজিত করেন। পেশোয়া আত্মরক্ষার্থে পলায়ন করেন এবং ইংরেজদের শরণাপন্ন হন।
বেসিনের সন্ধি স্বাক্ষর
এই পরিস্থিতিতে ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজদের সঙ্গে পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও বেসিনের সন্ধি স্বাক্ষর করেন।
বেসিনের সন্ধির শর্ত
এই সন্ধির শর্ত অনুসারে,
- (১) পেশোয়া ইংরেজদের সঙ্গে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির চুক্তিতে আবদ্ধ হন।
- (২) পেশোয়াকে রক্ষার জন্য পুণায় ৬ হাজার ইংরেজ সৈন্য রাখার ব্যবস্থা হয়।
- (৩) ইংরেজ সেনার ব্যয়নির্বাহের জন্য তিনি নিজ রাজ্যের একাংশ ছেড়ে দেন।
- (৪) পেশোয়া কোম্পানিকে বেসিন, সুরাট এবং তাপ্তি ও নর্মদার মধ্যবর্তী অঞ্চল ও আরও কিছু স্থান ছেড়ে দেন।
- (৫) কোম্পানির বিনা অনুমতিতে অপর কোনও শক্তির সঙ্গে মিত্রতা না করার অঙ্গীকার করেন।
- (৬) কোম্পানির অনুমতি ভিন্ন সেনাদলে কোনও ইওরোপীয়কে নিয়োগ না করার অঙ্গীকার করেন এবং
- (৭) নিজাম, গায়কোয়াড় প্রভৃতি শক্তির সঙ্গে বিরোধ বাধলে তিনি ইংরেজদের মধ্যস্থতা মেনে নিতে সম্মত হন। এই সন্ধির দ্বারা ইংরেজ সেনাদলের মাধ্যমে তিনি পেশোয়া পদে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হন।
বেসিনের সন্ধির গুরুত্ব
ভারত-এর ইতিহাসে বেসিনের সন্ধির গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন –
- (১) এই সন্ধির দ্বারা ইংরেজদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মারাঠা শক্তির মূলেকুঠারাঘাত করা হয়। মারাঠা সাম্রাজ্যে ব্রিটিশ সেনার উপস্থিতি ও মারাঠা বৈদেশিক সম্পর্কের ওপর ইংরেজ নিয়ন্ত্রণ মারাঠা শক্তিকে খর্ব করে এবং ইংরেজরা মারাঠা সামন্তদের ধ্বংস করতে সচেষ্ট হয়।
- (২) ঐতিহাসিক এডওয়ার্ডস্ (Edwards) বলেন যে, বেসিনের সন্ধির দ্বারা ভারতের অভ্যন্তরস্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভারতীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে পরিণত হয়।
- (৩) ঐতিহাসিক আওয়েন (Owen ) বলেন যে, বেসিনের সন্ধি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভারতে কোম্পানির সার্বভৌমত্ব স্থাপন করে।
উপসংহার :- বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি ডান্ডার্স যথার্থই মন্তব্য করেন যে, অসন্তুষ্ট ও দুর্বল পেশোয়ার সহযোগিতায় মারাঠা সাম্রাজ্য শাসন করা কোম্পানির পক্ষে সহজ ব্যাপার ছিল না। অবশ্য এই সন্ধির পরের বছরই দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ শুরু হয়।
(FAQ) বেসিনের সন্ধি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
বেসিনের সন্ধি (১৮০২)।
১৮০২ খ্রিস্টাব্দে।
পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও এবং ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।
লর্ড ওয়েলসলি।