আলিনগরের সন্ধি -র সময়কাল, স্থান, স্বাক্ষরকারী দুই পক্ষ, আলিনগরের সন্ধির পটভূমি হিসেবে নবাবের কলকাতা দখল, ইংরেজদের কলকাতা পুনর্দখল, সিরাজদ্দৌলার কলকাতা অভিযান, আলিনগরের সন্ধি স্বাক্ষর, আলিনগরের সন্ধির শর্ত, সিরাজদ্দৌলার সন্ধি স্বাক্ষরের কারণ, সন্ধি সম্পর্কে ক্লাইভের অভিমত ও আলিনগরের সন্ধির গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।
আলিনগরের সন্ধি (১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ)
ঐতিহাসিক ঘটনা | আলিনগরের সন্ধি |
সময়কাল | ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ |
স্থান | কলকাতা |
দুই পক্ষ | ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও বাংলার নবাব সিরাজ উদ্দৌলা |
ভূমিকা :- ১৭৫৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলার নবাব সিরাজ উদ্দৌলা ও ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে আলিনগরের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।
আলিনগরের সন্ধির পটভূমি
এই সন্ধির পটভূমি ছিল নিম্নরূপ –
(১) নবাবের কলকাতা দখল
১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দ (১৮-২০ জুন) কলকাতা আক্রমণ করে ইংরেজদের কলকাতা শহর থেকে বিতাড়িত করেন। তিনি এই শহরের নতুন নামকরণ করেন আলিবর্দি খানের নাম অনুসারে আলিনগর।
(২) ইংরেজদের কলকাতা পুনর্দখল
মাদ্রাজ থেকে ক্লাইভ এবং ওয়াটসন-এর অধীনে অতিরিক্ত সৈন্যবাহিনী কলকাতায় উপনীত হয় এবং কলকাতা পুনর্দখল করে (২ জানুয়ারি ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ)
(৩) সিরাজ দ্দৌলার কলকাতা অভিযান
এরপর নবাব সিরাজদ্দৌলা কলকাতা অভিমুখে যাত্রা করেন। কিন্তু কলকাতার কাছে খুব ভোরে ইংরেজরা আকস্মিক আক্রমণ করলে নবাব পশ্চাদপসরণ করেন।
আলিনগরের সন্ধি স্বাক্ষর
কয়েকদিন যুদ্ধের পর নবাব সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের সঙ্গে আলিনগরের সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য হন (৯ই ফেব্রুয়ারি, ১৭৫৭ খ্রিঃ)।
আলিনগরের সন্ধির শর্ত
এই সন্ধির শর্তানুসারে,
- (১) নবাব ১৭১৭ সালের ফারুখ শিয়ারের ফরমানে প্রদত্ত সকল সুবিধা ইংরেজদেরকে দেবেন।
- (২) কোম্পানির দস্তক এর আওতায় বাংলার ভেতর দিয়ে যেসব পণ্যদ্রব্য অতিক্রম করবে সেগুলির ওপর থেকে শুল্ক তুলে নিতে হবে।
- (৩) নবাব বিনা বাধায় কলকাতার ইংরেজ দুর্গটিকে সুরক্ষিত করার অনুমতি দেবেন।এবং
- (৪) কলকাতায় ইংরেজগণ স্বাধীনভাবে মুদ্রাঙ্কন করতে পারবে।
নবাবের সন্ধি স্বাক্ষরের কারণ
সিরাজ উদ্দৌলার জন্য এই চুক্তি কিছুটা অপমানকর হলেও তিনি এটি মেনে নেন। তিনি আহমদ শাহ আবদালীর নেতৃত্বে আসন্ন আফগান আক্রমণের আশঙ্কায় আলিনগরের সন্ধি স্বাক্ষর করেছিলেন।
সন্ধি সম্পর্কে ক্লাইভের অভিমত
১৭৫৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ক্লাইভ সিলেক্ট কমিটির কাছে লেখেন যে, এই সন্ধির শর্তাবলি কোম্পানির জন্য ‘একই সঙ্গে সম্মানজনক ও সুবিধাজনক’।
আলিনগরের সন্ধির গুরুত্ব
- (১) এই সন্ধির ফলে ইংরেজদের প্রভাব – প্রতিপত্তি বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। তাদের হাতে নবাবের পরাজয় তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে প্রবলভাবে বৃদ্ধি করে।
- (২) এতদিন পর্যন্ত কলকাতা ছিল নবাবের অধীনস্থ একটি জমিদারি-মাত্র, কিন্তু যুদ্ধে নবাবের পরাজয়ের ফলে কলকাতা হয়ে উঠল একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, যার কর্তা ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।
উপসংহার :- এই চুক্তি বেশি দিন স্থায়িত্বলাভ করে নি। এর প্রধান কারণ, ইংরেজরা এর শর্তাবলি মেনে চলে নি। ফলে চুক্তিটি ভেঙ্গে যায় এবং ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
(FAQ) আলিনগরের সন্ধি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
নবাব সিরাজউদ্দৌলা।
৯ ফেব্রুয়ারি, ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ।
বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে।