তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা

ভারতের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা -র সময়কাল, তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য, তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য, তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার বরাদ্দ, তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সাফল্য, তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ত্রুটি, ব্যর্থতার কারণ, তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব ও অমলেশ ত্রিপাঠীর মন্তব্য সম্পর্কে জানবো।

তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৬১-৬৬)

ঐতিহাসিক ঘটনাতৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা
সময়কাল১৯৬১-৬৬ খ্রিস্টাব্দ
প্রধানমন্ত্রীপণ্ডিত জওহরলাল নেহরু
লক্ষ্যজাতীয় আয় বৃদ্ধি
বরাদ্দ১১৬০০ কোটি টাকা
তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা

ভূমিকা:- প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৬১-৬৬ খ্রি.) গ্রহণ করে।

প্রথম ও দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা

এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, নানা ত্রুটি ও ব্যর্থতা সত্ত্বেও প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাদ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ভারতীয় অর্থনীতিকে অনেকটা সুদৃঢ় ও আত্মনির্ভর করে তুলেছিল।

তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা

একই উদ্দেশ্যের দিকে নজর রেখে তৃতীয় পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করা হয়। এর সময়-সীমা হল ১৯৬১ সালের ১লা এপ্রিল থেকে ১৯৬৬ সালের ৩১শে মার্চ পর্যন্ত।

তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য

এই পরিকল্পনার লক্ষ্য ছিল মোট পাঁচটি। এগুলি হল –

  • (১) পরিকল্পনাকালে প্রতি বছর জাতীয় আয় ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি এবং পরবর্তী পরিকল্পনাকালে যাতে এই হার বজায় থাকে সেই ভাবে বিনিয়োগ করা।
  • (২) খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং শিল্প ও রপ্তানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাবার মত কৃষিজ পণ্য উৎপাদন করা।
  • (৩) আগামী ১০ বছরের মধ্যে যাতে শিল্পায়নের জন্য ভারতের অভ্যন্তরে মূলধনী দ্রব্য ও প্রয়োজনীয় উপকরণ পাওয়া যায় তার জন্য ইস্পাত, রাসায়নিক দ্রব্য, শিল্প যন্ত্রপাতি, শক্তি ও জ্বালানির উৎপাদন যথাসাধ্য বৃদ্ধি করা।
  • (৪) দেশের জনশক্তির পূর্ণতম ব্যবহার এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা।
  • (৫) আর্থিক বৈষম্য হ্রাস করে অর্থনৈতিক ক্ষমতার সুষম বণ্টন।

ভারতের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য

তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন –

  • (১) এই পরিকল্পনায় কৃষিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, কারণ পূর্ববর্তী পরিকল্পনাগুলির অভিজ্ঞতায় দেখা গেছেযে কৃষিজ উৎপাদনের হার কম হওয়ায় ভারতীয় অর্থনীতির ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব হয় নি।
  • (২) গ্রামীণ সমাজ ও অর্থনীতির পরিবর্তনে গ্রাম পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ ও সমবায় সমিতিগুলি দায়িত্ব পালন করবে। এই কারণে এধরনের সমিতিগুলির সম্প্রসারণের দিকে নজর দেওয়া হয়।
  • (৩) ভারী বুনিয়াদি শিল্প এবং সেই সঙ্গে ক্ষুদ্র শিল্পের ব্যাপক উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া হয়।
  • (৪) শিক্ষা ও সমাজসেবামূলক কাজের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
  • (৫) কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব প্রদান এই পরিকল্পনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় মোট ব্যয় বরাদ্দ

এই পরিকল্পনায় মোট ব্যয় ধরা হয় ১১,৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি খাতে ৭,৫০০ কোটি টাকা এবং বেসরকারি উদ্যোগে ৪,১০০ কোটি ব্যয় ধরা হয়। সরকারি ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে ব্যয় হয় ৮,৬১১ কোটি টাকা।

ভারতের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সাফল্য

তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সাফল্যগুলি হল –

  • (১) কৃষি উৎপাদনে গুরুত্ব বাড়ানাে হয়।
  • (২) গ্রামীণ অর্থনীতির পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ, সমবায় সমিতি প্রভৃতির সম্প্রসারণ ঘটানাে হয়।
  • (৩) ক্ষুদ্র ও ভারী বুনিয়াদি শিল্পের বিকাশে উদ্যোগ নেওয়া হয়।
  • (৪)  শিক্ষার প্রসার ও কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব বাড়ানাে হয়।

ভারতের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ত্রুটি

তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বহু ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়। তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রধান ত্রুটি গুলি ছিল নিম্নরূপ। –

  • (১) জাতীয় আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বার্ষিক ৫ শতাংশ ধরা হলেও বাস্তবে বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ২.২ শতাংশ।
  • (২) কৃষিক্ষেত্রে শােচনীয় ব্যর্থতা দেখা যায়। খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি টন। কিন্তু বাস্তবে মাত্র ৬ কোটি ৩০ লক্ষ টন উৎপাদিত হয়।
  • (৩) ইস্পাত, কয়লা, সিমেন্ট, বিদ্যুৎ প্রভৃতি উৎপাদনও আশানুরূপ হয়নি।
  • (৪) পরিকল্পনার শেষে ব্যাপক সংখ্যায় কর্মসংস্থান করা সম্ভব হয়নি।
  • (৫) সেচ, বিদ্যুৎ, গৃহনির্মাণ, সংগঠিত শিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রেও লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করা সম্ভব হয়নি।
  • (৬) এই পরিকল্পনাকালে যথেষ্ট পরিমাণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। দ্রব্যমূল্য কোনো কোনাে ক্ষেত্রে ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ব্যর্থতার কারণ

চিন কর্তৃক ভারত আক্রমণ (ভারত-চীন যুদ্ধ, ১৯৬২ খ্রি.), ভারত-পাক যুদ্ধ (১৯৬৫ খ্রি.), ব্যাপক খরা (১৯৬৫-৬৬ খ্রি.) প্রভৃতি ঘটনা এই ব্যর্থতার জন্য বহুলাংশে দায়ী ছিল।

ভারতের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব

বিভিন্ন ব্যর্থতা সত্ত্বেও তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কয়েকটি গুরুত্ব লক্ষ্য করা যায়। যেমন –

  • (১) এই পরিকল্পনার দ্বারা ঔপনিবেশিক অর্থনীতির গতিহীনতা দূর হয়।
  • (২) জাতীয় আয় ৬২.১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
  • (৩) শিল্পক্ষেত্রে নানা বৈচিত্র্য আসে।

তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সম্পর্কে অমলেশ ত্রিপাঠীর মন্তব্য

ডঃ অমলেশ ত্রিপাঠী বলেন, তৃতীয় পরিকল্পনায় কৃষি উৎপাদন হল “a dismal failure.”। তবে এ কথা অবশ্যই মানতে হবে যে, এই ব্যর্থতার একমাত্র কারণ হল প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা খরা।

উপসংহার:- তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ভারতের অর্থনৈতিক কাঠামোতে নানা পরিবর্তন আসে। শিল্প কাঠামোতে আসে নানা বৈচিত্র্য ও নতুনত্ব। সুতরাং ভারতীয় জাতীয় জীবনে এই পর্ব কোনক্রমেই উপেক্ষণীয় নয়।

(FAQ) তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ভারতের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময়কাল কত?

১৯৬১-৬৬ খ্রিস্টাব্দ।

২. ভারতের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্ৰহণকালে প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?

পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু।

৩. ভারতের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ব্যয়ের পরিমাণ কত ছিল?

১১,৬০০ কোটি টাকা।

Leave a Comment