ইলবার্ট বিলের প্রেক্ষাপট, ইলবার্ট বিল রচনা, সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠা, শ্বেতাঙ্গদের ক্ষোভ, শ্বেতাঙ্গদের আন্দোলন, ভারতসভার আন্দোলন, সভাসমিতির অনুষ্ঠান, লেখনীতে প্রতিবাদ, হেমচন্দ্রের কবিতা, ইলবার্ট বিলের পরিণতি ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।
ইলবার্ট বিল কি, আইনী আইন ইলবার্ট বিল, ইলবার্ট বিলের প্রবর্তনকাল, ইলবার্ট বিল প্রবর্তনের সময় ভারতের ভাইসরয় লর্ড রিপন, ইলবার্ট বিলের রচয়িতা স্যার ইলবার্ট, ইতিহাসে, ইলবার্ট বিলের বিরুদ্ধে ইউরোপীয়দের আন্দোলন, ইলবার্ট বিলের সমর্থনে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভারত সভার আন্দোলন, ইলবার্ট বিলের প্রত্যাখ্যান ও ইলবার্ট আন্দোলনের অবসান সম্পর্কে জানব।
ইলবার্ট বিল আন্দোলন
ঐতিহাসিক ঘটনা | ইলবার্ট বিল আন্দোলন |
প্রবর্তনকাল | ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ |
প্রবর্তক | লর্ড রিপন |
খসড়া রচনাকাল | ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দ |
খসড়া রচয়িতা | স্যার কোর্টনে পেরজিন ইলবার্ট |
ভূমিকা :- বিভিন্ন উদারনৈতিক সংস্কারকার্যাবলীর জন্য লর্ড রিপনের শাসনকাল (১৮৮০-৮৪ খ্রিঃ) বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তাঁর আমলে ইলবার্ট বিল-কে কেন্দ্র করে ভারতে এক প্রবল আলোড়ন দেখা দেয়।
ইলবার্ট বিল আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
ভারতের বড়োলাট লর্ড রিপনের (১৮৮০-৮৪ খ্রি.) শাসনকালের আগে এদেশে কোনো ভারতীয় বিচারক কোনো ইংরেজ তথা শ্বেতাঙ্গদের বিচার করার অধিকারী ছিলেন না। এতে ভারতীয়দের মনে তীব্র ক্ষোভ ছিল। ইলবার্ট বিলের দ্বারা এই ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করা হয়।
ইলবার্ট বিল
বিচারব্যবস্থায় বর্ণবৈষম্য দূর করার উদ্দেশ্যে রিপনের পরামর্শে তাঁর আইনসচিব ইলবার্ট একটি বিল রচনা করেন। এতে ভারতীয় বিচারকরা শ্বেতাঙ্গদের বিচার করারও অধিকার পায়। এটি ইলবার্ট বিল নামে পরিচিত।
সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইলবার্ট বিল
ইলবার্ট বিলের দ্বারা ভারতীয় বিচারকরা শ্বেতাঙ্গদেরও বিচার করার অধিকার পেলে ইউরোপ ও ভারতীয় বিচারকদের মধ্যে সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইলবার্ট বিলের বিরুদ্ধে শ্বেতাঙ্গদের ক্ষোভ
লর্ড রিপন ইলবার্ট বিলের মাধ্যমে ভারতের কৃষ্ণাঙ্গ বিচারকদের শ্বেতাঙ্গদের বিচার করার অধিকার দিলে শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়রা প্রচণ্ড ক্ষুদ্ধ হয়।
শ্বেতাঙ্গদের আন্দোলন ইলবার্ট বিলের বিরুদ্ধে
ইলবার্ট বিলের বিরুদ্ধে শ্বেতাঙ্গরা শীঘ্রই তীব্র আন্দোলন শুরু করে। তারা কলকাতা হাইকোর্ট -এর ব্যারিস্টার ব্রানসনের নেতৃত্বে ডিফেন্স অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করে আন্দোলন চালাতে থাকে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। আন্দোলন চালানোর উদ্দেশ্যে তারা দেড় লক্ষ টাকার বেশি চাঁদা সংগ্রহ করে। বহু স্থানে আন্দোলন হিংসাত্মক রূপ নেয় এবং রিপনের প্রাণ সংশয়ের সম্ভাবনা দেখা দেয়।
ভারতসভার আন্দোলন ইলবার্ট বিলের সমর্থনে
ইলবার্ট বিলের বিরুদ্ধে শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়রা আন্দোলন শুরু করলে লালমোহন ঘোষ, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভারত সভা ইলবার্ট বিলের সমর্থনে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই বিলের সমর্থনে দেশের নানা প্রান্তে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা সমিতির অনুষ্ঠান ইলবার্ট বিলের সমর্থনে
ইলবার্ট বিলের সমর্থনে ভারত -এর নানা স্থানে সভা-সমিতি অনুষ্ঠিত হতে থাকে এবং শ্বেতাঙ্গদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে এক প্রতি আন্দোলন শুরু হয়।
লেখনীতে প্রতিবাদ ইলবার্ট বিলের সমর্থনে
ইলবার্ট বিলের সমর্থনে অমৃতবাজার পত্রিকা এবং বেঙ্গলী পত্রিকায় প্রচার চলতে থাকে। বিলটির বিষয়ে ইউরোপীয়দের কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা করা হয়।
ইলবার্ট বিলের সমর্থনে হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা
কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ‘নেভার নেভার’ কবিতায় ইংরেজদের বিদ্রূপ করে লেখেন-
“গেল রাজ্য, গেল মান, হাঁকিল ইংলিশম্যান, ডাক ছাড়ে ব্রানসন, কেসুরিক, মিলার নেটিভের কাছে খাড়া, নেভার, নেভার।”
ইলবার্ট বিলের পরিণতি
সরকার শেষপর্যন্ত ইউরোপীয়দের কাছে নতি স্বীকার করে বিলটিতে প্রচুর সংশোধন করে। ফলে বিলটির আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়।
ইলবার্ট বিল আন্দোলনের গুরুত্ব
- (১) ইলবার্ট বিল আন্দোলন ছিল ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই আন্দোলন ইংরেজ ও ভারতীয়দের মধ্যে জাতিগত বিদ্বেষ ও জাতিবৈরিতা বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি করে।
- (২) ইউরোপীয়দের আন্দোলন থেকে ভারতবাসী উপলব্ধি করে যে, কেবল সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলনের দ্বারাই সরকারের নীতি ও কার্যাবলীকে প্রভাবিত করা সম্ভব এবং স্বাধীনতা অর্জন না করা পর্যন্ত ভারতের জাতীয় মর্যাদা লাভ করা সম্ভব নয়।
উপসংহার :- ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার মনে করেন যে, ইলবার্ট বিলকে কেন্দ্র করে ভারতীয়দের আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিলটির দ্বারা ভারতীয়রা ব্রিটিশদের প্রকৃত চেহারা চিনতে পারে।
(FAQ) ইলবার্ট বিল আন্দোলন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে।
লর্ড রিপন।
লর্ড রিপনের আইন সচিব স্যার কোর্টনে পেরজিন ইলবার্ট।
সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারত সভা।