শিক্ষক দিবস

৫ই সেপ্টেম্বর ভারতে উদযাপিত শিক্ষক দিবস, পালন করার কারণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন এবং এই দিনটির তাৎপর্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানুন।

ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ্ ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিনে ভারতে উদযাপিত শিক্ষক দিবস, বিভিন্ন বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটির উদযাপন, শিক্ষক মহাশয়দের প্রতি সম্মান ও শ্রর্দ্ধাঘ্য প্রদান, ৫ ই সেপ্টেম্বর দিনটির গুরুত্ব, তাৎপর্য, উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা।

জাতীয় শিক্ষক দিবস

ঐতিহাসিক ঘটনাশিক্ষক দিবস
তারিখ৫ সেপ্টেম্বর
সংঘটনপ্রতি বছর
প্রথম উদযাপন৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ
সম্মাননাড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ
শিক্ষক দিবস

ভূমিকা :- শিক্ষকদের সম্মানার্থে পালিত একটি বিশেষ দিবস হল শিক্ষক দিবস। এই দিন শিক্ষকদেরকে তাদের নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য সম্মাননা দেওয়া হয়।

শিক্ষক দিবস পালন

বাংলাদেশ এবং ভারত সহ পৃথিবীর বহু দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে উদযাপিত হয় শিক্ষক দিবস। ভিন্ন ভিন্ন দিনে উদযাপিত হলেও ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত বিশ্ব শিক্ষক দিবসহল ৫ অক্টোবর।

ভারতে শিক্ষক দিবস উদযাপন

ভারতে ১৯৬২ সাল থেকে ৫সেপ্টেম্বর আদর্শ শিক্ষক ড. সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিনে শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে আসছে।

রাধাকৃষ্ণণ

ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ একজন সমাজকর্মী, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষক ছিলেন। তিনি একটি সুস্থ দেশ ও সমাজ গড়তে শিক্ষকের অবদানকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

ভারতে ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালনের কারণ

  • (১) ড. সর্বপ্ললী রাধাকৃষ্ণন দেশের রাষ্ট্রপতি হবার পর, তার প্রাক্তন ছাত্ররা প্রতি বছর ৫ই সেপ্টেম্বর রাধাকৃষ্ণন জয়ন্তী উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
  • (২) কিন্তু তিনি তার জন্মবার্ষিকী পালনের পরিবর্তে ৫ই সেপ্টেম্বর ‘শিক্ষক দিবস’ হিসাবে উদযাপন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
  • (৩) তার ইচ্ছাকে সম্মান জানাতে ১৯৬২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আমাদের দেশে প্রথম বার শিক্ষক দিবস পালিত হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর এই দিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

শিক্ষক দিবস পালনের উদ্দেশ্য

বিদ্যালয়ের শিক্ষক দিবস পালনের উদ্দেশ্য গুলি হল –

  • (১) সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা।
  • (২) শিক্ষার্থীরা ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জীবনী, শিক্ষক রূপে তাঁর অবদান, তাঁর নীতি, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের বাণী ও আদর্শ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করবে।
  • (৩) কেন ৫ ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালিত হয় তার আসল কারণ জানবে।
  • (৪) শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনে শিক্ষক হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা জাগানো।
  • (৫) শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগ্ৰত করা।
  • (৬) শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহধর্মিতার মনোভাব গড়ে তোলা।

শিক্ষক দিবস পালনের প্রয়োজনীয়তা

রাধাকৃষ্ণণের মতো আদর্শবান শিক্ষকের জন্ম দিবসকে সামনে রেখে শিক্ষক দিবস পালনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন –

  • (১) একজন শিক্ষক হলেন সুন্দর,সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার পথিক। সামাজিক অসাম্য, কুসংস্কার, অশিক্ষা দূরীভূত করে সমাজকে সুন্দর ও সুস্থ পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কান্ডারি হলেন তিনি।আর এই বিষয়ে তাঁরা পথ প্রদর্শক হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীদের কাছে।
  • (২) শিক্ষার্থীরা তাঁদের দিনের সেরা সময়টি অতিবাহিত করে বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সান্নিধ্যে। তাই তারা শিক্ষকদের থেকে জ্ঞান লাভ করে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করে ও ভবিষ্যৎ জীবনে এগিয়ে চলার প্রয়াসী হয়।
  • (৩) শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীদের নিজেদের পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে,ভালো থেকে আরো ভালোতে উত্তীর্ণ হতে বছরে এই বিশেষ দিনটিকে পালন করা হয়।
  • (৪) শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সম্মান নিবেদন করে শিক্ষকদের চরণে।

শিক্ষক দিবসের তাৎপর্য বা গুরুত্ব

দেশ ও জাতীয় জীবনে এমন কতকগুলি দিন আসে যেগুলো আমাদের নতুনভাবে উজ্জীবিত করে।ঠিক সেই রকম একটি দিন হল ৫ ই সেপ্টেম্বর বা শিক্ষক দিবস।

  • (১) ভারতের সারস্বত সাধনার অন্যতম মহান শিক্ষক ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্ম দিবস উদযাপনের মধ্যে দিয়ে শুধুমাত্র সেই মহান শিক্ষককেই শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় তাই নয়,এইউপলক্ষ্যেশিক্ষাব্রতে ব্রতী অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের সম্মানিত করা হয়।
  • (২) সমাজ গঠনের কারিগর শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর এবং দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয় এই ধরনের অনুষ্ঠান উদযাপনের মধ্যে দিয়ে।
  • (৩) শিক্ষকদের হাতে আক্রান্ত শিক্ষার্থী বা শিক্ষার্থীদের হাতে আক্রান্ত শিক্ষকদের নতুন কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলি একেবারে নির্মূল হয়ে যেতে পারে শিক্ষক দিবসের মতো তাৎপর্যপূর্ণ অনুষ্ঠান সুন্দর ভাবে সংগঠিত করলে।
  • (৪) শিক্ষার্থীদের মনের অন্ধকার দূর করে জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালানোর কাজ করেন শিক্ষকরাই, দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কান্ডারীদের গড়ে তোলার কাজটি বছরভর করে থাকেন তাঁরা। এক্ষেত্রে বছরের এই দিনটি তাঁদের জন্য কিছু করতে পেরে আনন্দিত হয় শিক্ষার্থীরা।
  • (৫) শিক্ষকতা শুধুমাত্র জীবিকা নয়, এক মহান ব্রত। তাই শিক্ষা যজ্ঞের মহান ঋত্বিকদের শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে শুধু শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকেরা খুশি হয়।
  • (৬) শিক্ষক দিবস উদযাপন গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে তখনই যখন শুধুমাত্র উৎসব বা অনুষ্ঠান নয়, দিনটি হয়ে ওঠে নতুন করে শপথ গ্রহণের।
  • (৭) শিক্ষক দিবস উদযাপনের মাধ্যমে প্রতিবছরই শিক্ষকের প্রতি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের নতুন করে মূল্যায়নের চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়।
  • (৮) শিক্ষক দিবস একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন।এই দিনটি আমাদের জীবন ও সমাজে শিক্ষকদের অমূল্য অবদানকে সম্মান জানানোর দিন।
  • (৯) শিক্ষকতা পেশা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন পেশাগুলির মধ্যে একটি কারণ, তাদের ওপরে দেশের নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত করার দায়িত্ব রয়েছে।
  • (১০) একজন আদর্শ শিক্ষক সবসময় তার ছাত্রদের স্বার্থ বিবেচনা করে তাদের কাজের দক্ষতা উন্নত করতে উৎসাহিত করে। ছাত্রের ব্যক্তিত্ব, আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতার স্তরকে উন্নত করতে শিক্ষকের যথেষ্ট ভূমিকা থাকে।
  • (১১) শিক্ষকরা ভবিষ্যত প্রজন্মকে যেকোনো অসুবিধা এবং সমস্যার মুখোমুখি হতে পারার জন্য সক্ষম করে তোলে। এজন্য এই দিনটি শুধুমাত্র শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য নিবেদিত।

শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান

শিক্ষক দিবসের দিন দেশের সমস্ত স্কুল ও কলেজে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিক্ষকদের প্রতি সন্মান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক শিক্ষিকারাও এই সব কর্মসূচিতে পূর্ণ উৎসাহ নিয়ে অংশ গ্রহণ করেন।

উপসংহার :- শিক্ষক দিবস শিক্ষক এবং শিষ্যের মধ্যে সুন্দর সম্পর্কের সৃষ্টি করে।তাই গুরু শিষ্য দুজনের জন্যই শিক্ষক দিবস খুবই আনন্দের একটাদিন।

(FAQ) শিক্ষক দিবস সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. শিক্ষক দিবস কেন পালন করা হয়?

শিক্ষক মহাশয়দের প্রতি সম্মান ও শ্রর্দ্ধাঘ্য প্রদান করার জন্য শিক্ষক দিবস পালন করা হয়।

২. ভারতে শিক্ষক দিবস কবে পালিত হয়?

৫ ই সেপ্টেম্বর।

৩. বিশ্ব শিক্ষক দিবস কবে পালিত হয়?

৫ ই অক্টোবর।

৪. কার জন্মদিনে শিক্ষক দিবস পালন করা হয়?

আদর্শ শিক্ষক, ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি ও দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মদিনে।

৫. জাতীয় শিক্ষক দিবস কবে পালিত হয়?

৫ ই সেপ্টেম্বর।

৬. শিক্ষক দিবসের কয়েকটি অনুষ্ঠানের নাম লেখ।

কবিতা আবৃতি, সঙ্গীত পরিবেশন, শিক্ষামূলক বক্তৃতা ইত্যাদি।

Leave a Comment