সূর্যা

ঋক বৈদিক যুগের বিদুষী নারী সূর্যা প্রসঙ্গে সূর্যা কর্তৃক সূক্ত রচনা, রৈভী নামক ঋক গুলি সূর্যা কর্তৃক আয়ত্ত, সূর্যার রৈভী নামক ঋক বা মন্ত্রের তাৎপর্য, সূর্যার পতি গৃহে গমন, সূর্যার রচিত ২৩ তম মন্ত্রের তাৎপর্য ও বিবাহের সময় সূর্যার মন্ত্র পাঠ সম্পর্কে জানবো।

ঋক বৈদিক যুগের বিদুষী নারী সূর্যা

ঐতিহাসিক চরিত্রসূর্যা
পরিচিতিবিদুষী নারী
আয়ত্তরৈভী নামে ঋক
খ্যাতিঋকবেদের সূক্ত রচনা
মন্ত্রের বৈশিষ্ট্যবরবধূর শুভ কল্যাণ কামনা
ঋক বৈদিক যুগের বিদুষী নারী সূর্যা

ভূমিকা :- বৈদিক যুগ -এ যে সকল মহিলারা নারী-ঋষি নামে পরিচিতা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম মহিলা সূর্যা ছিলেন প্রধান। তার মন্ত্রগুলি বরবধুর শুভ কল্যাণ কামনা ও আশীর্বাদে পূর্ণ।

সূর্যা কর্তৃক সূক্ত রচনা

ঋগ্বেদ-এর দশম মণ্ডলের ৮৫ সংখ্যক সূক্তটি সূর্যা ঋষি কর্তৃক সঙ্কলিত। সূর্যার সঙ্কলিত এই মন্ত্রগুলি বরবধুর শুভ কল্যাণ কামনা ও আশীর্বাদে পূর্ণ।

রৈভী নামক ঋক গুলি সূর্যা কর্তৃক আয়ত্ত

সূর্যার বিবাহ সময়ে রৈভী নামক ঋকগুলি সূর্যার সহচরী হয়েছিল। নরাশংসীনাম্নী ঋক গুলি তার দাসী হয়েছিল। তার মনোহর বদনখানি সামগান দ্বারা পবিত্র ও উদ্দীপ্ত হয়েছিল।

বিদুষী সূর্যার রৈভী নামক ঋক বা মন্ত্রের তাৎপর্য

  • (১) এই মন্ত্রের তাৎপর্য এই যে বিবাহের সময় পাত্রীর সমবয়স্কা কয়েকটি সঙ্গিনী তার চিত্তের সন্তোষ বিধানার্থে সহচরী হয়ে থাকে। পতিগৃহে যাবার সময় পাত্রীর সঙ্গে একটি দাসী যায়, বিবাহসময় পাত্রী উজ্জ্বল পট্টবস্ত্র পরিধান করে থাকে, কিন্তু সূর্যার বিবাহের সময় এই সকলের কোনো প্রয়োজন হয় নি।
  • (২) কারণ সূর্যা ছিলেন সর্বগুণালঙ্কৃতা বিদুষী মহিলা। রৈভী নামে ঋক গুলি তার সম্পূর্ণ আয়ত্ত ছিল। তিনি সুমধুর সুরে রৈভী নামক মন্ত্রগুলি গান করতে পারতেন। এই মন্ত্রগুলিই তাঁর সহচরীর কার্য করত, কাজেই নারী সহচরীর আর কোনো প্রয়োজন হয় নি। এই ভাবে নরাশংসী (নামক ঋকগুলি) তাঁর দাসী হল।

সূর্যার পতিগৃহে গমন

এক কথায় সূর্যার পবিত্র কর্মজীবনই তাঁর বিবাহের উপঢৌকন স্বরূপ হয়েছিল। সূর্যার স্নিগ্ধ শান্ত নয়নযুগল, পতিগৃহে প্রেরণীয় তৈল হরিদ্রাদি অভ্যঞ্জন দ্রব্য স্বরূপ হয়ে তার সাথে যায়। তার পবিত্র প্রশান্ত মনই তার পতিগৃহে গমনের শকটস্বরূপ হয়েছিল। অনন্ত আকাশ হয়েছিল ঊর্ধ্বচ্ছাদন-স্বরূপ, দুই শুক্র অর্থাৎ দুইটি শুকতারা তাঁর শকটবাহী হল। এইরূপে পূর্বা তার পতিগৃহে যেতে উন্নত হয়ে মনঃস্বরূপ শকটে আরোহণ করলেন। এইরূপে ব্রহ্মবাদিনী সূযা পতিগৃহে গমন করলেন।

বিদুষী সূর্যার ২৩ তম মন্ত্রের অর্থ

  • (১) ত্রয়োবিংশতি মন্ত্রের অর্থ এই যে আমাদের বন্ধুগণ বিবাহের জন্য পাত্রী অন্বেষণে যে পথে গমন করেন, সেপথ যেন নিরাপদ হয়। হে ইন্দ্রাদি দেবগণ ! পতিপত্নীর মিলন যেন দৃঢ় হয় ও অক্ষয় হয়।
  • (২) এই কন্যাকে পিতৃকুল হইতে মোচন করিয়া স্বামীকুলে গ্রথিত করিলাম । হে বৃষ্টিবর্ষণকারী ইন্দ্র! এই কন্যা যেন পতিগৃহে সৌভাগ্যবতী হয়। হে কন্যা ! পুষা দেবতা তোমার হস্ত ধারণ করে তোমাকে পিতৃগৃহ হতে পতিগৃহে নিয়ে যান। গৃহে গিয়ে গৃহের কর্ত্রী হও। তোমার গৃহের সকলের উপর প্রভু হয়ে প্রভুত্ব কর।
  • (৩) যারা শত্রুতাচরণ করার জন্য এই পতিপত্নীর নিকট আসবে তারা বিনষ্ট হউক। এই দম্পতি যেন আপনাদের পুণ্যের দ্বারা সমুদয় বিপদকে কাটিয়ে উঠে। এদের নিকট হতে শত্রুগণ যেন দূরে পলায়ন করে।
  • (৪) এই নবপরিণীতা বধু অতি সুলক্ষণা। তোমরা সকলে মিলে এসে এই বন্ধুকে দেখ। এই সৌভাগ্যবতী হউন, স্বামীর প্রিয়পাত্রী হউন, এই আশীর্বাদ করে তোমরা গৃহে গমন কর।
  • (৫) হে নবদম্পতি! তোমরা দুজনে একস্থানে থাক, পরস্পর পৃথক হও না। নানা সুখ-ভোগ-বিলাসে পুত্রপৌত্রাদির সঙ্গে আমোদ-আহলাদ করে তোমাদের জীবন যেন শান্তিতে অতিবাহিত হয়।
  • (৬) প্রজাপতির শুভ আশীর্বাদে তোমাদের সস্তান-সন্ততি জন্মগ্রহণ করুক। অর্য্যমা দেবতা তোমাদেরকে বৃদ্ধাবস্থা পর্যন্ত সম্মিলিত করে রাখুন।
  • (৭) হে বধু! তুমি কল্যাণসম্পন্ন হয়ে পতিগৃহে অধিষ্ঠান কর। দাসদাসী, পশু প্রভৃতির প্রতি মঙ্গল বিধান কর।
  • (৮) হে বধু ! তোমার নেত্রদ্বয় যেন দোষশূন্য হয়। তুমি পতির কল্যাণকারিণী হও, পশুদের মঙ্গলদায়িনী হও। তোমার মন যেন সর্বদা প্রফুল্ল থাকে। তোমার দেহ যেন লাবণ্যপূর্ণ উজ্জ্বল হয়। তুমি বীরপুত্র প্রসবিনী হও এবং দেবতাদের প্রতি যেন তোমার অচলা ভক্তি থাকে।
  • (৯) হে ইন্দ্র! এই নারীকে তুমি উৎকৃষ্ট পুত্রবতী ও সৌভাগ্যবতী কর। এর গর্ভে যেন দশটি পুত্র জন্মে এবং এর পতিকে নিয়ে যেন একাদশ ব্যক্তিমতী হয়।
  • (১০) হে বধূ ! তুমি শ্বশুরের উপর প্রভুত্ব কর, শ্বশ্রূকে বশ কর, ননদ ও দেবরগণের উপর সম্রাজ্ঞীর ন্যায় হও।
  • (১১) ইন্দ্রাদি দেবতাগণ তোমাদের উভয়ের হৃদয়কে মিলিত করে দিন। বায়ু, ধাতা ও বাগ্দেবী তোমাদের উত্তমরূপে একত্র সম্মিলিত করে রাখুন এটাই আমাদের একান্ত প্রার্থনা।
  • (১২) এই কন্যারূপ পুষ্পটি পিতৃকুলরূপ তরু হতে উত্তোলিত করিয়া পতির হস্তে গ্ৰথিত হল।
  • (১৩) হে সৌভাগ্যবতী নারি। তুমি কখন মলিন বসন পরিধান করবে না, কারণ মলিন বসন পরিধান করা দারিদ্রের লক্ষণ। পরমেশ্বরের প্রতি ভক্তিমান ধার্মিকগণকে তোমাদের সাধ্যানুযায়ী ধন দান করো। হে হিতৈষী বন্ধুগণ, তোমরা সকলে দেখ, পত্নী, পতির সহিত অভিন্ন রূপা হয়ে পতিগৃহে চলেছেন।
  • (১৪) এই নবপরিণীতা বধূ অতি সুলক্ষণা, এই সৌভাগ্যবতী নারী, বিদুষী, তোমরা সকলে মিলিত হয়ে এস, ‘আশীর্বাদ কর, যেন এই বধূ স্বামীর প্রিয়পাত্রী হন, এইরূপ আশীর্বাদ করে তোমরা নিজ নিজ গৃহে গমন কর।

সূর্যার মন্ত্র বিবাহের সময় পাঠ

এই সূক্তের মন্ত্রগুলি পাঠ করতে করতে বর্তমান যুগের স্ত্রী-আচার আদর্শের সাথে সেকালের স্ত্রী-আচার ও আদর্শের যে অনেকটা সামঞ্জস্য থেকে গেছে তা বেশ বুঝতে পারা যায়। এই সূক্তের অনেক অংশ পূর্বকালে বিবাহের সময় মন্ত্রের ন্যায় পাঠ করা হত এইরূপ অনুমান করা যেতে পারে।

উপসংহার :- সেই সুদূর অতীতে কবে কোন্ শুভ মিলনবাসরে নবপরিণীত বরবধূ, দেবতার নিকট যে শুভ আশীর্বাদ ভিক্ষা করে জীবনপথে অগ্রসর হয়েছেন, সূর্যা ঋষির সেই পবিত্র বাণী যুগযুগান্তরের তিমিররাশি ভেদ করে আজও আমাদের গৃহে গৃহে ধ্বনিত হচ্ছে।

(FAQ) সূর্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. সূর্যা কে ছিলেন?

ঋকবৈদিক যুগ-এর একজন বিদুষী নারী।

২. ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের ৮৫ সংখ্যক সূক্তটি কে রচনা করেন?

সূর্যা ঋষি।

৩. সূর্যার সঙ্কলিত মন্ত্রগুলির বৈশিষ্ট্য কি?

তার মন্ত্রগুলি বরবধুর শুভ কল্যাণ কামনা ও আশীর্বাদে পূর্ণ।

৪. রৈভী নামক ঋক গুলি কার আয়ত্তে ছিল?

সূর্যা ঋষি।

Leave a Comment