ফিরোজ শাহ তুঘলকের সিংহাসন লাভের তাৎপর্য

ফিরোজ শাহ তুঘলকের সিংহাসন লাভের তাৎপর্য প্রসঙ্গে বংশানুক্রমিক বৈধতার প্রশ্ন গৌণ, খলজিদের বৈধ উত্তরাধিকারী, নির্বাচন প্রথার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আফিফের অভিমত, ডঃ হোসেনের অভিমত, উলেমা সমর্থন নিয়ে ফিরোজের সিংহাসন লাভ, ফিরোজের সিংহাসন দখল বেআইনি, নিঃসন্তান মহম্মদ বিন তুঘলক ও বংশানুক্রমিক বৈধতা সম্পর্কে জানবো।

ফিরোজ শাহ তুঘলকের সিংহাসন লাভের তাৎপর্য

ঐতিহাসিক ঘটনা ফিরোজ শাহ তুঘলকের সিংহাসন লাভের তাৎপর্য
সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক
সিংহাসন লাভ ১৩৫১ খ্রিস্টাব্দ
রাজত্ব ১৩৫১-১৩৮৮ খ্রি:
ফিরোজ শাহ তুঘলকের সিংহাসন লাভের তাৎপর্য

ভূমিকা :- ডঃ আর. পি. ত্রিপাঠীর মতে ফিরোজ শাহ তুঘলকের সিংহাসন লাভ একথা প্রমাণ করে যে, “পিতার সিংহাসনে পুত্রের অধিকার থাকলেও, অভিজাত ও উলেমাদের দ্বারা প্রার্থীর নির্বাচন অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ।”

বংশানুক্রমিক বৈধতার প্রশ্ন গৌণ

ফিরোজ শাহ অভিজাত ও উলেমাদের নির্বাচিত প্রার্থী ছিলেন। এজন্য সিংহাসনে তাঁর উত্তরাধিকার বংশানুক্রমিক অর্থে বৈধ কিনা এই প্রশ্ন গৌণ হয়ে পড়ে।

খলজিদের বৈধ উত্তরাধিকারী

বলবনের আমল থেকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী স্থির করার সময় বংশানুক্রমিক অধিকার প্রথাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছিল। খলজি শাসন উচ্ছেদ করে তুঘলকরা সিংহাসনে এলেও তুঘলকরা এমন ভাব দেখাতেন যেন তারা খলজিদের বৈধ উত্তরাধিকারী।

নির্বাচন প্রথার পুনঃপ্রতিষ্ঠা

ফিরোজকে অভিজাত ও উলেমারা সম্মিলিতভাবে নির্বাচন করায় বংশানুক্রমিক অধিকার অপেক্ষা নির্বাচন প্রথাই প্রাধান্য পায়।

আফিফের অভিমত

আফিফের মতে, আমীর ও মালিকরা ফিরোজ শাহকে সিংহাসনে বসার অনুরোধ জানালে, ফিরোজ প্রথমে অরাজী হন। ফিরোজের এই অনিচ্ছা আন্তরিক কিনা এ সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা সন্দেহ প্রকাশ করেন।

ডঃ হোসেনের অভিমত

ডঃ আগা মেহেদি হোসেনের মতে, মহম্মদের জীবিতকালে ফিরোজ সিংহাসন লাভের জন্য সুন্নী উলেমাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে চক্রান্ত করেন।

ডঃ দের অভিমত

ডঃ ইউ এন দের মতে, ফিরোজ আগাগোড়া উলেমা প্রমুখ রক্ষণশীল গোষ্ঠীর সহায়তায় সিংহাসন লাভের জন্য সচেষ্ট ছিলেন।

উলেমা সমর্থন নিয়ে ফিরোজের সিংহাসন লাভ

মহম্মদের মৃত্যুর পর সেনাপতিরা তাঁকে সিংহাসনে বসতে অনুরোধ জানালে, তিনি উলেমা গোষ্ঠীর সমর্থন সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে মত দিতে চান নি। এজন্যই তিনি প্রথমে মৌখিক অনিচ্ছা দেখান।

বৈধতার প্রশ্ন

এই কারণে প্রশ্ন আসে যে, প্রয়াত মহম্মদের সিংহাসন কি ফিরোজ বে-আইনীভাবে দখল করেন? অথবা ফিরোজ শাহ কি সিংহাসনের বৈধ উত্তরাধিকারী ছিলেন?

ফিরোজের সিংহাসন দখল বেআইনি

স্যার উলসলী হেইগের মতে, মৃত সুলতান মহম্মদের প্রকৃত পুত্র ছিল সেই বালক যাকে উজীর খান-ই-জাহান সিংহাসনে বসাবার চেষ্টা করেন। যদি এই বালককে ন্যায্য উত্তরাধিকারী ধরা হয়, তবে ফিরোজ নিঃসন্দেহে বে-আইনীভাবে সিংহাসন অধিকার করেন।

নিঃসন্তান মহম্মদ বিন তুঘলক

সমকালীন অধিকাংশ মালিক মনে করতেন যে, মহম্মদের কোনো পুত্র সন্তান ছিল না। মহম্মদের কোনো পুত্র সন্তান ছিল কিনা বরণী তা স্পষ্টভাবে বলেন নি। ইসামি অবশ্য দ্বিধাহীন ভাষায় বলেছেন যে মহম্মদের কোনো পুত্র সন্তান ছিল না। আফিফের মতে মহম্মদের মাত্র একটি কন্যা সন্তান ছিল।

বংশানুক্রমিক বৈধতা

সুতরাং বংশানুক্রমিক অধিকারের দিক থেকে বিচার করলে এক্ষেত্রে বৈধ দাবী ছিল মহম্মদের নিজ ভগিনী খোদাবন্দজার পুত্রের। খোদাবন্দজা সিংহাসনে তাঁর পুত্রের দাবী তোলার ব্যর্থ চেষ্টা করেন।

উপসংহার :- আসল কথা হল যে, সুলতানি সিংহাসনের বংশানুক্রমিক দাবী একমাত্র নিয়ম ছিল না। কোনো প্রার্থী অভিজাত ও উলেমাদের দ্বারা নির্বাচিত হলে তাকেও বৈধ প্রার্থী মনে করা হত। সেই দিক থেকে ফিরোজকে জবরদখলকারী বলা যায় না।

(FAQ) ফিরোজ শাহ তুঘলকের সিংহাসন লাভের তাৎপর্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. সুলতানী যুগের আকবর কাকে বলা হয়?

ফিরোজ শাহ তুঘলক।

২. ফিরোজ শাহ তুঘলকের রাজত্বকাল কত?

১৩৫১-১৩৮৮ খ্রিস্টাব্দ।

৩. খলজিদের বৈধ উত্তরাধিকারী হিসেবে কারা দাবি করত?

তুঘলকরা।

Leave a Comment