রাজপুত সামন্ত প্রথা

রাজপুত সামন্ত প্রথা প্রসঙ্গে সামন্ত প্রথার প্রসার, চান্দেল্ল সামন্ত প্রথা, চৌহান সামন্ত প্রথা, রাজপুত সামন্ত প্রথার বৈশিষ্ট্য, সম্পর্কে জানবো।

রাজপুত সামন্ত প্রথা

ঐতিহাসিক ঘটনারাজপুত সামন্ত প্রথা
গঙ্গ সামন্তনায়েক
সূর্য মন্দিরদ্বিতীয় নরসিংহদেব
চান্দেল্ল ব্রাহ্মণরণক বা ঠাকুর
রাজপুত সামন্ত প্রথা

ভূমিকা :- পশ্চিম ইউরোপ -এ ক্যারোলিঞ্জীয় সাম্রাজ্য ভেঙ্গে গেলে যে অবস্থা দেখা দেয়, প্রতিহার বংশ ধ্বংস হলে উত্তর ভারত -এর বিভিন্ন অঞ্চলে ভারতে সেই অবস্থা দেখা দেয়।

রাজপুত সামন্ত প্রথার প্রসার

  • (১) ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজপুত রাজ্যগুলির মধ্যে অবিরাম সংঘাত চলতে থাকে। এর ফলে বিভিন্ন রাজপুত রাজ্যগুলিতে সামন্ত প্রথা দ্রুতবেগে বৃদ্ধি পায়। যুদ্ধে সেনা সংগ্রহের জন্য রাজপুত রাজারা সামন্তদের জমি বন্দোবস্ত দেয়।
  • (২) এই যুগে বাংলার কৈবর্ত জাতীয় সামন্ত শক্তির উদ্ভব হয়। উড়িষ্যায় বহু সামন্ত শক্তির উদ্ভব হয়। খিঞ্জলী তাম্রলিপি থেকে দেখা যায় যে, ভঞ্জ সামন্তরা নানাবিধ অধিকারসমূহ ভূমি পট্টলী মহাসামন্ত নামধারী যোদ্ধাদের দান করে।
  • (৩) গঙ্গ রাজারা নায়েক উপাধিকারী সামন্তদের ভূমি বন্দোবস্ত দেয়। এরূপ একজন সামন্ত ছিল বৈশ্য গণপতি নায়ক। ত্রয়োদশ শতকে উড়িষ্যার গঙ্গ রাজাদের শাসন ব্যবস্থা পুরা সামন্ততান্ত্রিক হয়ে যায়।
  • (৪) কোনার্কের সূর্য মন্দিরের নির্মাতা (১২৯৫ খ্রি) দ্বিতীয় নরসিংহদেব তাঁর মন্ত্রী কুমার মহাপাত্রকে বহু গ্রাম দান করেন। এই গ্রামের জন্য শ্রেষ্ঠী, তাম্বুলী ও তাম্রকার নির্ধারণ করা হয়।

চান্দেল্ল রাজপুত সামন্ত প্রথা

চান্দেল্ল রাজারাও তাদের সামরিক কর্মচারীদের ভূমি দান করতেন। ধঙ্গ ও কীর্তিবর্মন এরূপ বহু ভূমি দান করেন। এর বিনিময়ে গ্রহীতা প্রভূকে সামরিক সেবা দিত। গাহড়বাল মদনপাল ও গোবিন্দচন্দ্র ব্রাহ্মণ কর্মচারীদের বহু গ্রাম দান করেন। এই সকল ব্রাহ্মণদের উপাধি ছিল রণক বা ঠাকুর। ক্ষত্রিয়দেরও ভূমি দান করা হত।

চৌহান রাজপুত সামন্ত প্রথা

চৌহান ভূমিপট্টলীগুলি প্রধানত রাজ পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য দেওয়া হত। ১১৬১ খ্রিস্টাব্দে নারোল ভূমিপাট্টা থেকে দেখা যায় যে, ১২টি গ্রাম চিরতরে রাজকুলের লোকেদের দেওয়া হয়। এই সঙ্গে সকল প্রকার সামন্ততান্ত্রিক অধিকারও বর্তায়। ডঃ দশরথ শর্মার মতে, এর বিনিময়ে নারোলের রাজকুল রাজার শাসন বিভাগে কাজ করত।

রাজপুত সামন্ত প্রথার বৈশিষ্ট্য

রাজপুত সামন্ত প্রথা আলোচনা করে কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যেমন –

  • (১) রাজপুত রাজারা রাজকার্য ও সামরিক কার্যের বিনিময়ে জমির সামন্তীকরণ করতেন। এটি রাজপুত সামন্ত প্রথার সাধারণ বৈশিষ্ট্য।
  • (২) গ্রহীতারা সামন্ত রাজার সকল অধিকার ভোগ করত এবং বিনিময়ে কর, সেবা ও সামরিক সাহায্য দিত।
  • (৩) সামন্ত প্রভুদের গ্রামবাসীরা বেগার, শ্রমদান, খাদ্য ও আশ্রয় দিতে বাধ্য থাকত।
  • (৪) চৌহান ও পারমার সামন্তরা সামরিক ও অসামরিক সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় কর্তব্য কাজ করত।
  • (৫) সামরিক কর্তব্যই ছিল রাজপুত সামন্তদের প্রধান কাজ।

উপসংহার :- ধর্মপাল -এর তিলকমঞ্জরী, প্রবন্ধ চিন্তামনি থেকে জানা যায় যে, রাজা সামন্ত পরিবৃত হয়ে এবং সামন্ত সেনাসহ মেদিনী কাঁপিয়ে চলতেন। কৈবর্ত ভীমের বিরুদ্ধে সাহায্যের জন্য রামপালকে তাঁর সামন্তদের কাছে সাহায্য ভিক্ষা করতে হয়।

(FAQ) রাজপুত সামন্ত প্রথা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কৈবর্ত ভীমের বিরুদ্ধে রামপালকে কাদের সাহায্য নিতে হয়েছিল?

সামন্তদের।

২. কৈবর্ত জাতীয় সামন্ত শক্তির উদ্ভব হয় কখন?

রাজপুত যুগে।

৩. গঙ্গ রাজাদের সময় সামন্তদের উপাধি কি ছিল?

নায়েক।

৪. কোনারকের সূর্যমন্দির কে নির্মাণ করেন?

দ্বিতীয় নরসিংহদেব।

Leave a Comment