প্রার্থনা সমাজ

প্রার্থনা সমাজ প্রতিষ্ঠা, প্রতিষ্ঠাকাল, স্থান, নেতৃত্ব, প্রার্থনা সমাজের বিশেষত্ব, আদর্শ, লক্ষ্য, কর্মসূচি, প্রার্থনা সমাজের প্রাণপুরুষ, মহাদেব গোবিন্দ রাণাডের উদ্দোগ, এন্ড্রুজের অভিমত, দক্ষিণ ভারতে প্রসার ও প্রার্থনা সমাজের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে জানবো।

প্রার্থনা সমাজ প্রসঙ্গে প্রার্থনা সমাজ প্রতিষ্ঠা, প্রার্থনা সমাজের প্রতিষ্ঠাতা, প্রার্থনা সমাজের প্রতিষ্ঠাকাল, ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কারের আন্দোলন, প্রার্থনা সমাজের নেতৃত্ব, প্রার্থনা সমাজের প্রাণপুরুষ, প্রার্থনা সমাজের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানব।

প্রার্থনা সমাজ

বিষয়প্রার্থনা সমাজ
প্রতিষ্ঠাতাড. আত্মারাম পাণ্ডুরঙ্গ
প্রতিষ্ঠাকাল১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দ
স্থানমহারাষ্ট্র
প্রাণপুরুষমহাদেব গোবিন্দ রাণাডে
প্রার্থনা সমাজ

ভূমিকা :- উনিশ শতকে মহারাষ্ট্রে সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রার্থনা সমাজ এক প্রশংসনীয় অবদান রেখে গেছে।ধর্ম সংস্কার অপেক্ষা সমাজ সংস্কারের প্রতিই প্রার্থনা সমাজ বেশি নিয়োজিত ছিল।

প্রার্থনা সমাজের প্রতিষ্ঠাতা

ব্রাহ্মনেতা কেশবচন্দ্র সেনের প্রভাবে ডঃ আত্মারাম পাণ্ডুরঙ্গ-এর নেতৃত্বে ‘প্রার্থনা সমাজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রতিষ্ঠাকাল

প্রার্থনা সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে।

প্রার্থনা সমাজ প্রতিষ্ঠা স্থান

মহারাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রার্থনা সমাজ।

প্রার্থনা সমাজের নেতৃত্ব

পরবর্তীকালে বিচারপতি মহাদেব গোবিন্দ রাণাডে ও ঐতিহাসিক রামকৃষ্ণ ভাণ্ডারকর এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন।

প্রার্থনা সমাজে বিশেষত্ব

বেদ -এর অপৌরুষেয়তা, জন্মান্তরবাদ, অবতারবাদ ও পৌত্তলিকতা-বিরোধী এবং একেশ্বর বাদের সমর্থক হলেও প্রার্থনা সমাজ কিন্তু কখনোই নিজেদের ব্রাহ্ম সমাজ -এর মতো হিন্দুধর্ম ও সমাজ-বিরোধী বলে ঘোষণা করে নি।

মূল নীতি গ্ৰহণ

রাণাডে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ এবং তুকারাম, জ্ঞানেশ্বর প্রমুখ সন্তদের আদর্শ থেকেই তাদের মূলনীতিগুলি গ্রহণ করেছিল। তারা নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনায় বিশ্বাসী ছিল এবং ধর্ম মত প্রচারের জন্য তারা পৃথক কোনও ধর্মগ্রন্থ রচনা করে নি।

প্রার্থনা সমাজের আদর্শ

এই প্রতিষ্ঠানের আদর্শ হল –

  • (১) প্রার্থনা সমাজ পাশ্চাত্য আদর্শ ও ভাবধারায় প্রভাবিত হলেও এই প্রতিষ্ঠানটি সনাতন হিন্দু সংস্কৃতি ও রীতিনীতি মেনে কাজ করত।
  • (২) এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী ছিলেন।
  • (৩) প্রার্থনা সমাজ বেদকে অভ্রান্ত বলে মনে করতেন।
  • (৪) মানবজাতির ভ্রাতৃত্বের সপক্ষে এবং জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারের পাশাপাশি সকল ধর্মের প্রতি সহনশীলতার নীতিতে আস্থাশীল ছিল।

প্রার্থনা সমাজের লক্ষ্য

হিন্দু ধর্ম ও সমাজ থেকে ধর্ম ও সমাজের সংস্কার এবং জাতিভেদ প্রথা, কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ, অস্পৃশ্যতা প্রভৃতি দূর করাই ছিল প্রার্থনা সমাজের মূল লক্ষ্য।

প্রার্থনা সমাজের কর্মসূচি

এই প্রতিষ্ঠানের আসল কৃতিত্ব ছিল সমাজ সংস্কারে। সমাজ উন্নয়ন ও নারী কল্যাণের ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।যেমন –

  • (১) অসবর্ণ বিবাহ ও বিধবা বিবাহ প্রচলন, অস্পৃশ্যতা ও পর্দাপ্রথা বর্জন, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ রদ, পণপ্রথা ও মদ্যপান নিবারণকরা।
  • (২) সমাজের দুঃস্থদের উন্নয়ন, স্ত্রীশিক্ষা বিস্তার, নারীমুক্তির আদর্শ প্রচার এবং শিশুসদন, অনাথ আশ্রম, বিধবা আশ্রম, নৈশ বিদ্যালয়, চিকিৎসালয় স্থাপন প্রভৃতি কর্মসূচি গ্রহণ করে।

প্রার্থনা সমাজের প্রাণপুরুষ

বোম্বাই হাইকোর্ট -এর বিচারপতি মহাদেব গোবিন্দ রাণাডে ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের প্রাণ-পুরুষ।

গোবিন্দ রাণাডের উদ্দোগ

  • (১) মহাদেব গোবিন্দ রাণাডের উদ্যোগে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে বিধবা বিবাহ সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • (২) তিনি বাল্য-বিধবাদের স্বার্থরক্ষা ও বিধবাদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তারে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। এই উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত ‘সারদা সদন’ নামক সংস্থাটিকে তিনি সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করেন।
  • (৩) স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে তিনি পুণা শহরে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
  • (৪) শিক্ষাবিস্তারের উদ্দেশ্যে তিনি ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে ‘দাক্ষিণাত্য শিক্ষা সমাজ’ (‘Deccan Education Society’) গঠন করেন এবং এই সংস্থার উদ্যোগে সরকারি সাহায্য ব্যতিরেকেই প্রতিষ্ঠিত হয় পুণার ফারগুসন কলেজ এবং সাংলি-র উইলিংডন কলেজ।
  • (৫) ভারতবাসীর রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার জন্য তিনি ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে পুণায় সার্বজনিক সভাপ্রতিষ্ঠিত করেন।

এন্ড্রুজের অভিমত

ভারত প্রেমিক দীনবন্ধু এন্ড্রুজ-এর মতে, সংস্কারক হিসেবে মহাদেব গোবিন্দ রাণাডে রামমোহন রায়স্যার সৈয়দ আহমদ খান-এর প্রায় কাছাকাছি ছিলেন।

দক্ষিণ ভারতে প্রার্থনা সমাজের আদর্শ প্রসার

প্রখ্যাত তেলুগু সংস্কারক ও লেখক বীরেশলিঙ্গম পান্তুলু, যিনি দক্ষিণ ভারতের বিদ্যাসাগর নামে পরিচিত, এই প্রার্থনা সমাজের আদর্শ দক্ষিণ ভারতে ছড়িয়ে দেন।

প্রার্থনা সমাজের জনপ্রিয়তা

মহারাষ্ট্র, মাদ্রাজ ও অন্ধ্রের তেলেগু ভাষা ভাষী অঞ্চলে প্রার্থনা সমাজ বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

উপসংহার :- বাস্তবকে অস্বীকার করে যুক্তির আশ্রয়ে সংস্কারমূলক কাজ অর্থহীন।সেই দিক থেকে বাস্তব ও গঠনাত্মক কর্মপ্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে প্রার্থনা সমাজ উনিশ শতকের মহারাষ্ট্রের সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে স্মরণীয় হয়ে আছে।

(FAQ) প্রার্থনা সমাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. প্রার্থনা সমাজ কে প্রতিষ্ঠা করেন?

ড. আত্মারাম পাণ্ডুরঙ্গ।

২. প্রার্থনা সমাজ কবে কোথায় প্রতিষ্ঠিত হয়?

১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে মহারাষ্ট্রে।

৩. প্রার্থনা সমাজের প্রাণপুরুষ কে ছিলেন?

মহাদেব গোবিন্দ রাণাডে।

৪. মহারাষ্ট্রের সমাজ সংস্কারক কে ছিলেন?

মহাদেব গোবিন্দ রাণাডে।

৫. প্রার্থনা সমাজের দুজন নেতার নাম লেখ।

মহাদেব গোবিন্দ রাণাডে ও ঐতিহাসিক রামকৃষ্ণ ভাণ্ডারকর।

Leave a Comment