মহম্মদ কাশিম ফিরিস্তা

মহম্মদ কাশিম ফিরিস্তা প্রসঙ্গে জন্ম, ভারতে আগমন, সহপাঠী, দাক্ষিণাত্যের ইতিহাস রচনায় মনোনিবেশ, গ্ৰন্থ রচনা সম্পন্ন, উৎসর্গ ও নামকরণ, প্রত্যক্ষদর্শী লেখক, গ্ৰন্থের পর্যালোচনা, দাক্ষিণাত্যের বর্ণনা, দক্ষিণের আঞ্চলিক ইতিহাসের ক্ষেত্রে আকর গ্ৰন্থ, তথ্য ভিত্তিক বর্ণনা ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

মহম্মদ কাশিম ফিরিস্তা

ঐতিহাসিকমহম্মদ কাশিম ফিরিস্তা
সময়কালমুঘল যুগ
গ্ৰন্থতারিখ-ই-ফিরিস্তা
উৎসর্গইব্রাহিম আদিল শাহ
মহম্মদ কাশিম ফিরিস্তা

ভূমিকা :- মুঘল সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক গ্ৰন্থ প্রসঙ্গে মহম্মদ কাশিম ফিরিস্তার লেখা তারিখ-ই-ফিরিস্তা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

কাশিম ফিরিস্তার জন্ম

মহম্মদ কাশিম ফিরিস্তা কাস্পিয়ান সাগরের তীরে ইরানের অস্ত্রাবাদ নামক স্থানে আনুমানিক ১৫৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা গোলাম আলি হিন্দু শাহ একজন বিদ্বান ব্যক্তি ছিলেন।

কাশিম ফিরিস্তার ভারতে আগমন

উন্নত জীবিকার সন্ধানে তার পিতা ভারত-এ আসেন এবং দাক্ষিণাত্যে আহমদনগরে উপস্থিত হন। আহমদনগরের সুলতান মর্তুজা নিজাম শাহ তাঁর নিজের পুত্র রাজকুমার মিরন হোসেনের গৃহশিক্ষক নিযুক্ত করেন।

মহম্মদ কাশিম ফিরিস্তার সহপাঠী

তিনিও তাঁর পিতার নিকট শিক্ষালাভ করেন এবং শাহজাদা মিরন হোসেনের সহপাঠী হওয়ার গৌরব লাভ করেন।

কাশিম ফিরিস্তার সহপাঠী মিরনের মৃত্যু

পিতার মৃত্যুর পর মিরন সিংহাসনে আরোহণ করেন কিন্তু এক বছরের মধ্যেই মিরন হোসেন নিহত হন। এই সময় ফিরিস্তার বয়স সতের বছর।

দাক্ষিণাত্যের ইতিহাস রচনায় কাশিম ফিরিস্তার মনোনিবেশ

তিনি শিয়া মতাবলম্বী ছিলেন। তিনি আহমদনগরের পরিস্থিতি অনুকূল নয় বুঝে বিজাপুরের রাজধানীতে গমন করেন। সেখানে সুলতান ইব্রাহিম আদিল শাহের পৃষ্ঠপোষকতায় দাক্ষিণাত্যের ইতিহাস রচনায় মনোনিবেশ করেন।

কাশিম ফিরিস্তার গ্ৰন্থ রচনা সম্পন্ন

তিনি আনুমানিক ১৫১৬ খ্রিস্টাব্দে ২৬ বছর বয়সে বিজাপুর সুলতানদের ইতিহাস সমাপ্ত করেন এবং তাঁর পরিকল্পিত ইতিহাসের অবশিষ্টাংশ পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করেন।

কাশিম ফিরিস্তার গ্ৰন্থ উৎসর্গ ও নামকরণ

ফিরিস্তা তাঁর ইতিহাস গ্রন্থকে তাঁর পৃষ্ঠপোষক ইব্রাহিম আদিল শাহের নামে উৎসর্গ করেন এবং নামকরণ করেন সুলতান-ই ইব্রাহিমী। ফিরিস্তা বইটির আর একটি নামকরণ করেছিলেন নওরুসনানা। কিন্তু গ্রন্থটি তারিখ-ই-ফিরিস্তা নামেই সমধিক পরিচিত।

কাশিম ফিরিস্তার রচনার অবলম্বন

এই গ্রন্থটি তবাকাৎ-ই-আকবরী ও পাদশাহনামা গ্রন্থের অনুরূপ বিষয়বস্তু অবলম্বনে রচিত এবং জাহাঙ্গির-এর রাজ্যলাভ পর্যন্ত ঘটনাবলি এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী লেখক কাশিম ফিরিস্তা

লেখক বহু ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। বিশেষ করে মধ্যযুগে দাক্ষিণাত্যের ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে এই গ্রন্থের মূল্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কাশিম ফিরিস্তার গ্ৰন্থের পর্যালোচনা

  • (১) কাশিম ফিরিস্তা তাঁর এই গ্রন্থ রচনা করতে তবাকাত-ই-আকবরী সহ প্রায় ৩৫ খানা ইতিহাস গ্রন্থ অধ্যয়ন করেছেন। তাঁর ইতিহাস গ্রন্থটি একটি ভূমিকা ও উপসংহার বাদে ১২টি অধ্যায়ে বিভক্ত।
  • (২) ফিরিস্তার এই গ্রন্থে অঞ্চলভিত্তিক ইতিহাস রচনার ধারাকে গ্রহণ করে ভারতের ধারাবাহিক ইতিহাস উপস্থাপনের প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। উপসংহারে ভারতের ভৌগোলিক পরিষেবা ও আবহাওয়ার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর এই গ্রন্থটি একটি সংকলিত গ্রন্থ।

মহম্মদ কাশিম ফিরিস্তার রচনায় দাক্ষিণাত্যের বর্ণনা

  • (১) তিনি দাক্ষিণাত্য সম্পর্কে যে বিবরণ দিয়েছেন তাতে তাঁর নিজস্ব পর্যবেক্ষণ শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। দাক্ষিণাত্য সম্পর্কে তিনি এমন সব তথ্য দিয়েছেন যা তাঁর গ্রন্থতেই একমাত্র পাওয়া যায়। তিনি ধর্মীয় বা রাজনৈতিক প্রভাবে প্রভাবিত না হয়ে নিরপেক্ষভাবে ঘটনা তুলে ধরার প্রয়াস করেছেন।
  • (২) তিনি অত্যধিক প্রশস্তি করে কারো সন্তুষ্টি বিধানের চেষ্টা করেন নি। এমনকি তিনি তাঁর পৃষ্ঠপোষক সুলতান ইব্রাহিম আদিল শাহের তোষামোদ করেন নি। অথবা তাঁর মনোরঞ্জনের জন্য কোনো অতিশয়োক্তিকে তাঁর গ্রন্থে স্থান দেন নি।

কাশিম ফিরিস্তার রচনা দক্ষিণের আঞ্চলিক ইতিহাসের ক্ষেত্রে আকর গ্ৰন্থ

ফিরিস্তার বর্ণনার মধ্যে কিছু অসংগতি থাকলেও দাক্ষিণাত্যের আঞ্চলিক ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে এই গ্রন্থটি পণ্ডিতদের কাছে আকরগ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত।

মহম্মদ কাশিম ফিরিস্তার রচনায় তথ্যভিত্তিক বর্ণনা

অনেকক্ষেত্রে তাঁর বর্ণনা তথ্যভিত্তিক ও জ্ঞানকোষে নতুন সংযোজন হিসাবে আদৃত। ফিরোজ শাহ তুঘলক-এর সময় দিল্লি ও আগ্রাতে অধিকসংখ্যক শিক্ষায়তন নির্মাণের যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন তা বাস্তবসম্মত এবং অন্যান্য উৎস হতে তা সমর্থিত।

কাশিম ফিরিস্তার রচনায় বিভ্রান্তিকর বর্ণনা

মুঘলদের প্রশাসক সম্পর্কে তাঁর বর্ণনা বিভ্রান্তিকর। ভারতের মুসলমানদের ও সুফিদের সাংস্কৃতিক জীবনেও পরিচয় পাওয়া যায়। তবে সার্বিক পর্যালোচনায় কিছু বিচ্যুতি বাদ দিলে গ্ৰন্থটির ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম।

কাশিম ফিরিস্তার মৃত্যু

ফিরিস্তা ১৬২৩ খ্রিস্টাব্দে পরলোক গমন করেন।

উপসংহার :- জন ব্রিগস কর্তৃক তারিখ-ফিরিস্তা চারখণ্ডে “History of the Rise of the Muhammadan Power in India” নামে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। ঐতিহাসিকদের নিকট গ্ৰন্থটি আকর গ্ৰন্থ হিসেবে স্বীকৃত।

(FAQ) মহম্মদ কাশিম ফিরিস্তা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. তারিখ-ই-ফিরিস্তা গ্ৰন্থের রচয়িতা কে?

মহম্মদ কাশিম ফিরিস্তা।

২. কাশিম ফিরিস্তা তাঁর গ্ৰন্থটি কার নামে উৎসর্গ করেন?

ইব্রাহিম আদিল শাহ।

৩. তারিখ-ই-ফিরিস্তা গ্ৰন্থটি কয়টি অধ্যায়ে রচিত?

১২ টি।

Leave a Comment