আবদুল হামিদ লাহোরি

আবদুল হামিদ লাহোরি প্রসঙ্গে লাহোরি সম্পর্কে তথ্য, গ্ৰন্থের দুই খণ্ড, শাহজাহানের রাজত্বকালের নির্ভরযোগ্য দলিল, দরবারি ইতিহাস রচনা, খুররমের বিদ্রোহের বর্ণনা, তথ্য আহরণ, সমস্ত ঘটনার উল্লেখ, নিখুঁত ও খাঁটি তথ্য, লাহোরির ইতিহাস চর্চার সার্থকতা, গ্ৰন্থের বিষয় ও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা সম্পর্কে জানবো।

আবদুল হামিদ লাহোরি

ঐতিহাসিকআবদুল হামিদ লাহোরি
সময়কালমুঘল যুগ
গ্ৰন্থপাদশাহনামা
বর্ণনাশাহজাহানের রাজত্বকাল
অনুসরণআবুল ফজল
আবদুল হামিদ লাহোরি

ভূমিকা :- বিখ্যাত ঐতিহাসিক আবদুল হামিদ লাহোরি রচিত পাদশাহনামা গ্রন্থটি খুব উচ্চমানের লেখা। আবদুল হামিদ আবুল ফজলের সমপর্যায়ের লেখক ছিলেন।

লাহোরি সম্পর্কে তথ্য

আবদুল হামিদ লাহোরি সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য অবগত হওয়া যায় না। আমা-ই-সালেহ-এর লেখক মহম্মদ সালিহর লেখা থেকে জানা যায় যে আবদুল হামিদ তাঁর লিখনশৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন।

গ্ৰন্থের দুটি খণ্ড

এই গ্রন্থের দুটি খণ্ডে আবদুল হামিদ শাহজাহানের জীবন ও কার্যাবলি এবং প্রথম কুড়ি বছরের শাসনকালের বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছেন। আবদুল হামিদ শাহজাহানের জীবনেরও বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছেন।

শাহজাহানের রাজত্বকালের নির্ভরযোগ্য দলিল

শাহজাহানের প্রথম কুড়ি বছর রাজপুত্র হিসেবে এবং সম্রাট হিসেবে লাহোরির পাদশাহনামা গ্রন্থটিই শাহজাহানের রাজত্বকালের ‘the final official history’ হিসেবে বিবেচিত। এই গ্রন্থখানি শাহজাহানের রাজত্বকালের সব থেকে নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক দলিল।

দরবারি ইতিহাস রচনা

লাহোরি ছিলেন সেই যুগের একজন বিদগ্ধ পণ্ডিত এবং আবুল ফজলের মতো খ্যাতনামা ব্যক্তি। দুজনেই দরবারের ইতিহাস লিখেছেন। হয়তো দরবারি ইতিহাসচর্চায় অতিরঞ্জন ও আবুল ফজলকে অনুসরণ করেছিলেন একথা সত্য।

খুররমের বিদ্রোহের বর্ণনা

রাজপুত্র খুররম যে পিতা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন তার বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছেন। এই বিদ্রোহের জন্য তিনি নুরজাহানকে দায়ী করেছেন।

তথ্য আহরণ

তিনি দরবারের গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলি থেকে তথ্য আহরণ করেছিলেন এবং ইতিহাসচর্চায় ইতিহাসের সত্য উদ্ঘাটনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন।

সমস্ত ঘটনার উল্লেখ

তিনি জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালের সমস্ত ঘটনাই উল্লেখ করেছেন। এমনকি যে সামরিক অভিযানগুলির চূড়ান্ত বিপর্যয় ঘটেছিল সেগুলিরও উল্লেখ করেছেন।

নিখুঁত বর্ণনা ও তথ্য

লাহোরির গ্রন্থ দরবারি ইতিহাসের যে ত্রুটি থাকে তা থেকে মুক্ত নয়, কিন্তু তিনি যে ইতিহাস লিখেছেন তাতে দরবারের বর্ণনা ও তথ্য নিখুঁত।

লাহোরির ইতিহাস চর্চার সার্থকতা

লাহোরি তাঁর গ্রন্থে এমন তথ্য ও পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন যা পরবর্তীকালের লেখকদের অনুসরণ করতে হয়েছে। এখানেই লাহোরির ইতিহাসচর্চার সার্থকতা।

লাহোরির ছাত্র

  • (১) এর পরেই মহম্মদ ওয়ারিস-এর লেখা পাদশাহনামা গ্রন্থটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক গ্রন্থ হিসেবে পরিচিত হয়। মহম্মদ ওয়ারিস ছিলেন আবদুল হামিদের ছাত্র ও সহযোগী। আবদুল হামিদ বয়সের ভারে যখন ন্যুব্জ, তখন তাঁর সুযোগ্য ছাত্র এই ওয়ারিসই শাহজাহানের রাজত্বকালের পূর্ণ ইতিহাস রচনা করেন।
  • (২) ওয়ারিস শাহজাহানের প্রথম কুড়ি বছরের ইতিহাস তাঁর গুরু আবদুল হামিদকে অনুসরণ করে লেখেন। কিন্তু শাহজাহানের শেষ দশ বছরের শাসনকালের ইতিহাস তিনি নিজে স্বাধীনভাবে অপর এক খণ্ডে সমাপ্ত করেন।

গ্ৰন্থের বিষয়

  • (১) আবদুল হামিদ লাহোরির পাদশাহনামা একটি বিশাল ইতিহাস গ্রন্থ যা বিলোকি ইণ্ডিকা থেকে ১৬৬২ পৃষ্ঠায় দুখণ্ডে প্রকাশিত হয়। সম্রাট শাহজাহানের গৃহীত প্রত্যেকটি পদক্ষেপের বিশদ বিবরণ এই গ্রন্থে আলোচিত হয়েছে।
  • (২) সম্রাট কর্তৃক রাজকীয় পরিবারের সদস্যদের ভাতা ও সম্মাননা প্রদান, অমাত্যগণকে উপাধিতে ভূষিতকরণ, আফিম বণ্টন এবং পদমর্যাদানুসারে ‘মনসব’ প্রদান প্রভৃতি বিষয় এই গ্রন্থের বিবরণের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
  • (৩) এমনকি রাজকীয় পরিসরে বিভিন্ন উৎসব, জন্মদিন ও শোভাযাত্রার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে এই গ্রন্থে। এমনকি যেসব বিষয় ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় সেগুলোও তিনি তুলে ধরতে শৈথিল্য প্রদর্শন করেন নি।

উচ্ছ্বসিত প্রশংসা

পরবর্তী লেখকগণ তাঁর পাদশাহনামা থেকে উপাদান গ্রহণ করে তাঁদের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। শাহজাহানের কুড়ি বছরের শাসনকালের বিবরণের একমাত্র অনন্য ও বিশ্বাসযোগ্য আকরগ্রন্থ হল আবদুল হামিদ লাহোরির পাদশাহনামা। তাঁর পরবর্তী নব্য ও প্রতিযোগী লেখক মহম্মদ শালিহ পাদশাহনামার রচয়িতার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।

উপসংহার :- মুন্তাখাব-উল-লুবাব গ্রন্থের রচয়িতা কাফি খান শাহাজাহানের রাজত্বকালের এই কুড়ি বছরের ইতিহাস বর্ণনায় সম্পূর্ণরূপে পাদশাহনামার উপর নির্ভর করেছেন। এখানেই লাহোরি ইতিহাসচর্চায় এক অনন্য স্থান অধিকার করে আছেন।

(FAQ) আবদুল হামিদ লাহোরি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. শাহজাহানের রাজত্বকালের শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক উপাদান কোনটি?

পাদশাহনামা।

২. পাদশাহনামা গ্ৰন্থের রচয়িতা কে?

আবদুল হামিদ লাহোরি।

৩. আবদুল হামিদ লাহোরি কাকে অনুসরণ করেছিলেন?

আবুল ফজলকে।

Leave a Comment