পাঞ্জাবে কুকা বিদ্রোহ প্রসঙ্গে ওয়াহাবি আন্দোলনের সাদৃশ্য, আন্দোলনের সূচনা, প্রাথমিক উদ্দেশ্য, আন্দোলনের গতিপথ পরিবর্তন, কুকাদের অধিনায়ক রাম সিংহ, কুকাদের প্রতি পাঞ্জাবের অধিবাসীদের সহানুভূতি, জম্মুতে কুকাদের সামরিক সংস্থা স্থাপন, ব্রিটিশ সরকারের হস্তক্ষেপ ও কুকাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ সম্পর্কে জানবো।
পাঞ্জাবে কুকা বিদ্রোহ
ঐতিহাসিক ঘটনা | কুকা বিদ্রোহ |
স্থান | পাঞ্জাব |
সময়কাল | ১৮৪০ এর দশক |
অধিনায়ক | রাম সিংহ |
প্রাথমিক উদ্দেশ্য | ধর্মের শুদ্ধিকরণ |
ভূমিকা :- অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে কৃষকদের বিদ্রোহ নতুন কিছু নয়। তবে এর মধ্যে নতুন ধরনের কৃষক আন্দোলনের প্রথম সূত্রপাত ঘটে পাঞ্জাবে কুকা বিদ্রোহের মধ্যে।
কুকা আন্দোলনের সঙ্গে ওয়াহাবি আন্দোলনের সাদৃশ্য
ওয়াহাবি আন্দোলন-এর সঙ্গে কুকা আন্দোলনের অনেক সাদৃশ্য ছিল। ধর্মের শুদ্ধিকরণের জন্য উভয় আন্দোলনই শুরু হয় এবং শেষ পর্যন্ত আন্দোলনকারিগণ ভারত-এ বিদেশী শাসনের অবসানের জন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
কুকা আন্দোলনের সূচনা
সম্ভবত ব্রিটিশ শক্তি কর্তৃক পাঞ্জাব অধিকৃত হওয়ার অব্যবহিত ঊনবিংশ শতাব্দীর চারের দশকে শিয়ান সাহেব নামে বিশেষভাবে পরিচিত ভগৎ জওহর মল কুকা আন্দোলন শুরু করেন।
কুকা আন্দোলনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য
শিখধর্ম থেকে বিভিন্ন কুসংস্কার দূর করে গুরু গোবিন্দ সিংহ-এর নির্দেশিত ধর্মমত পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য কুকা সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিগণ সচেষ্ট হয়ে ওঠে।
কুকা আন্দোলনের গতিপথ পরিবর্তন
পাঞ্জাবে ব্রিটিশ অধিকার স্থাপিত হওয়ার পর কুকা সম্প্রদায়ের আন্দোলনের গতিপথ পরিবর্তিত হয় এবং তারা ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে পাঞ্জাবে পুনরায় শিখকর্তৃত্ব স্থাপনের জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে।
কুকাদের অধিনায়ক রাম সিংহ
- (১) ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে রাম সিংহ কুকাদের অধিনায়কত্ব লাভ করেন এবং নিজেকে গুরু গোবিন্দ সিংহের অবতার বলে দাবি করেন। তিনি ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ করে খালসা রাজত্ব স্থাপনের প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন।
- (২) জাঠ এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের নিম্নবর্ণের বহু লোক তাঁর দলে যোগ দেয়। তিনি তাঁর অনুচরদের ব্রিটিশ শাসকদের সঙ্গে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করতে নির্দেশ দেন। তিনি আরও ঘোষণা করেন যে, একলক্ষ পঁচিশ হাজার কুকা সৈন্য সংগৃহীত হলেই তিনি ইংরেজদের বিতাড়িত করতে সমর্থ হবেন।
- (৩) লুধিয়ানা শহরের ২২ কিলোমিটার দূরে ভৈনি আলা নামক স্থানে তিনি তাঁর প্রধান কর্মকেন্দ্র স্থাপন করে বিভিন্ন অঞ্চলে কুকাদের নতুন ঘাঁটি তৈরী করার জন্য সুবা ও নায়েব সুবা নামধারী কর্মচারীদের প্রেরণ করেন।
কুকাদের প্রতি পাঞ্জাবের অধিবাসীদের সহানুভূতি
এই আন্দোলনের প্রথম দিকে পাঞ্জাবের অধিবাসীদের অনেকেই কুকাদের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন ছিল। কিন্তু পরে কুকা সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম নৈতিক অধঃপতন দেখা দিলে অনেকেই তাদের প্রতি বিরূপ হয়ে ওঠে।
জম্মুতে কুকাদের সামরিক সংস্থা স্থাপন
সম্ভবতঃ রাম সিংহ নেপাল রাজসভার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর অনুচরদের সামরিক শিক্ষায় পারদর্শী করে তোলার জন্য জম্মুতে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন। এই সংবাদে ব্রিটিশ সরকার বিশেষভাবে বিচলিত হয়ে পড়ে।
কসাইদের সঙ্গে কুকাদের সংঘর্ষ
ইতিমধ্যে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে গোহত্যা ও গোমাংস বিক্রির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কসাইদের সঙ্গে কুকাদের সংঘর্ষ দেখা দিলে কুকাদের হাতে কয়েকজন কসাই নিহত হয়।
কুকাদের কার্যকলাপে ব্রিটিশ সরকারের হস্তক্ষেপ
ব্রিটিশ সরকার এই সময় সর্ব প্রথম কুকাদের কার্যকলাপে হস্তক্ষেপ করে। ন’জন কুকাকে ফাঁসি দেওয়া হয় এবং দু’জন কুকাকে দ্বীপান্তর পাঠান হয়। কিন্তু রাম সিংহের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নি।
কুকাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ
১৮৭২ খ্রীস্টাব্দে কুকাদের একটি দল পাতিয়ালা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। রামসিংহ তাঁর অনুচরদের কার্যকলাপ সমর্থন করতে পারেন নি। সুতরাং তিনি গোপনে ব্রিটিশ সরকারকে এই সংবাদ জানিয়ে দেন। ফলে তাঁর অনুচরদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
কুকাদের অধিনায়ক রাম সিংহের নির্বাসন
কিন্তু ব্রিটিশ সরকার রামসিংহের কার্যকলাপ সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য প্রথমে তাঁকে ভৈনি আলায় অন্তরীণ করেন এবং পরে তাঁকে রেঙ্গুনে নির্বাসিত করেন। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে রামসিংহ রেঙ্গুনে মৃত্যুমুখে পতিত হন।
উপসংহার :- পাতিয়ালার ঘটনা ও রামসিংহের নির্বাসনের ফলে আকস্মিকভাবে কুকা বিদ্রোহের অবসান হয়।
(FAQ) পাঞ্জাবে কুকা বিদ্রোহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
পাঞ্জাবে।
উনিশ শতকের চারের দশকে।
রাম সিংহ।
রেঙ্গুন।