জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

একজন বিশিষ্ট বাঙালি লেখক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী এবং সমাজ সংস্কারক ছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪৯-১৯২৫)। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় ভাই এবং ঠাকুর পরিবারের প্রগতিশীল চিন্তাধারার ধারক ছিলেন। তাঁর রচিত নাটক ও সংগীত বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে অমূল্য সংযোজন। তিনি গদ্যসাহিত্য, অনুবাদ এবং নাট্যশিল্পে অবদান রেখেছেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর নারীদের শিক্ষার প্রসার এবং সমাজ সংস্কারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কর্মসমূহের মধ্যে রয়েছে নাটক “সরোজিনী”, অনুবাদ “শকুন্তলা”, এবং বহু দেশাত্মবোধক গান।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

ঐতিহাসিক চরিত্রজ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর
জন্ম৪ মে ১৮৪৯ খ্রি
জন্মস্থানকলকাতা, ব্রিটিশ ভারত
পেশানাট্যকার, লেখক, সঙ্গীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, সমাজসংস্কারক
উল্লেখযোগ্য নাটকসরোজিনী, শর্মিষ্ঠা, আশ্রুফুল
অনুবাদকালিদাসের অভিজ্ঞান শকুন্তলম
চিত্রশিল্পজলরঙের চিত্রকর্মে দক্ষতা
সমাজসংস্কারনারীদের শিক্ষার প্রসার ও প্রগতিশীল চিন্তাধারার প্রচার
মৃত্যু৪ মার্চ ১৯২৫ খ্রি

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা :- বাংলার সমাজ সাহিত্য সংস্কৃতি স্বদেশানুরাগ ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির অবদান ছিল অপরিসীম। উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণ-এর যুগে এই পরিবারের প্রতিভাধর পুরুষদের পথিকৃতের ভূমিকা ইতিহাসের এক একটি অধ্যায় রূপে চিহ্নিত হয়ে আছে। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের পঞ্চম পুত্র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর জ্যোতিদাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথও ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রশিল্প, নাটক, জাতীয় ভাবোদ্দীপক সামাজিক উদ্যোগ, ব্যবসায় সংগঠন প্রভৃতি ক্ষেত্রে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ অবিস্মরণীয় কীর্তি স্থাপন করেন।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম

১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ মে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জন্ম।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা

ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য দেবেন্দ্রনাথ বাড়িতেই পাঠশালার বন্দোবস্ত করেছিলেন। সেখানেই গুরুমশায়ের কাছে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর ইংরাজি শিক্ষার হাতেখড়িও বাড়িতেই অন্য শিক্ষকের কাছে হয়। প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে ভর্তি করে দেওয়া হয় সেন্ট পলস স্কুলে। সেখান থেকে পরে তিনি মন্টেগু অ্যাকাডেমি ও হিন্দুস্কুলে পড়াশুনা করেন। সব শেষে ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা কলেজ থেকে এন্ট্রাস পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজ-এ ভর্তি হন।

সাহিত্যিক জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের শরীর চর্চা

ঠাকুর বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী ছেলেদের লেখাপড়ার পাশাপাশি নিয়মিত শরীর চর্চা ইত্যাদিও করতে হত। ডন-বৈঠক, মুগুর ভাঁজা, সাঁতারকাটা ইত্যাদিতে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের প্রবল উৎসাহ ছিল। তাঁর শরীর স্বাস্থ্য সকলেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করত।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবল উৎসাহ

ঠাকুর বাড়ির পরিবেশ ছিল কবিতা গান অভিনয় প্রভৃতির আনন্দ-কোলাহলে প্রাণবন্ত। সেই পরিবেশের সঙ্গে জ্যোতিরিন্দ্রনাথও বাল্যবয়স থেকেই একাত্ম হয়ে উঠেছিলেন। গান, ছড়া-কবিতা রচনা, অভিনয় সব বিষয়েই তাঁর ছিল প্রবল উৎসাহ।

থিয়েটার সংগঠনের কাজে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়ার সময়েই পারিবারিক জোড়াসাঁকো থিয়েটার সংগঠনের কাজে উদ্যোগী হন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। ফলে কলেজের পড়াশুনা ইস্তফা দিতে হয়।

আমেদাবাদে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

ইতিমধ্যে তাঁর অগ্রজ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর আই সি এস পাস করে উচ্চপদস্থ সিভিলিয়ান হয়ে বিলেত থেকে দেশে ফিরে আসেন। ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ সত্যেন্দ্রনাথের কর্মস্থান আমেদাবাদে চলে যান। কলেজের বিধিবদ্ধ পড়াশুনা না থাকলেও আমেদাবাদে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ প্রবল উৎসাহে অধ্যয়ন ও বিদ্যাচর্চায় মনোনিবেশ করেন। বাছাই করা ইংরাজি ও সংস্কৃত বই পড়ার সঙ্গে ফরাসী ও মারাঠী ভাষাও শিক্ষা করতে থাকেন। একজন গুজরাতি মুসলমান শিল্পীর কাছে তিনি নিয়মিত সেতারও শিখেছেন।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ও গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর

কলকাতায় ফিরে এসে সেতারের সঙ্গে পিয়ানো ও হারমোনিয়াম বাজানোও ভালভাবে রপ্ত করেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবা গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সমবয়সী। কোন বিষয়ে ঝোঁক চাপালে দুজনে মিলেই তাতে হাত লাগাতেন। প্রায় সময়েই মজার মজার ছড়া কবিতা লিখে তাঁরা বাড়ির সকলকে চমকে দিতেন।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটকে অভিনয়

একবার রোখ চাপল নাটক অভিনয়ের দিকে। ‘অমনি দুই ভাই মিলে বাড়িতেই একটা নাটকের দল করে ফেললেন। নাম দিলেন কমিটি অব ফাইভ। এই নাটুকে দল ঠাকুর বাড়ির অবৈতনিক মঞ্চেই অভিনয় করত। দর্শক আসনে থাকতেন ঠাকুরবাড়িরই লোকজন। প্রথমে অভিনীত হল মধুসূদন দত্তর কৃষ্ণকুমারী নাটক। পরে হল একেই কি বলে সভ্যতা। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ কৃষ্ণকুমারী নাটকে অহল্যাদেবী ও সার্জেনের ভূমিকায় অভিনয় করে সকলের প্রশংসা পান।

নটীর ভূমিকায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের অভিনয়

সেইকালে সমাজে কৌলিন্য ও বহুবিবাহ প্রথার বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন চলছিল। রামনারায়ণ তর্করত্নের বহুবিবাহ প্রথাকে ব্যঙ্গ করে লেখা কুলীনকুলসর্বস্ব নাটক সমাজে প্রবল আলোড়ন তুলেছিল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ তর্করত্ন মশায়কে অনুরোধ করে লিখিয়ে নিলেন নবনাটক নামের একটি ব্যঙ্গাত্মক নাটক। যথারীতি কয়েকমাসের রিহার্সেলের পর নাটকটি ঠাকুর বাড়ির মঞ্চে অভিনীত হল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ এই নাটকে নটীর ভূমিকায় অভিনয় করে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা লাভ করেন। পরবর্তীকালে যিনি নাট্যসাহিত্যে অনন্যসাধারণ কীর্তির জন্য স্মরণীয় হবেন, এভাবে চরিত্রাভিনয়ের মাধ্যমেই তাঁর নাটকের জগতে প্রবেশ লাভ ঘটেছিল।

হিন্দু মেলার অন্যতম উদ্যোক্তা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

সেইকালে রাজনারায়ণ বসু, নবগোপাল মিত্র প্রমুখ সমাজহিতৈষী ব্যক্তিদের উদ্যোগে বেলগাছিয়ায় আশুতোষ দেবের বাগান বাড়িতে চৈত্রমেলা বা হিন্দু মেলার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এই মেলা সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বদেশীয় ভাবধারার প্রচার। দেশবাসীর মনে জাতীয়তাবোধের উদ্দীপনা সঞ্চারের উদ্দেশ্যে মেলা প্রাঙ্গণে প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হত। সেই সঙ্গে থাকত, দেশীয় ক্রীড়া কৌতুক ও ব্যায়াম প্রদর্শনের আয়োজন। এই মেলার সংগঠক-উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাট্যকার জীবনের সূত্রপাত

১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে হিন্দুমেলার দ্বিতীয় অধিবেশন উপলক্ষে নবগোপালবাবুর উৎসাহে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ একটি জাতীয় ভাবোদ্দীপক কবিতা লেখেন। মেলায় তিনি উদ্বোধন নামের কবিতাটি আবৃত্তি করে সকলের প্রশংসা লাভ করেন। পরে এই মেলা প্রাঙ্গণেই তাঁর রচিত জাতীয় ভাবোদ্দীপক ঐতিহাসিক নাটক পুরুষবিক্রম-এর সাফল্য মন্ডিত অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তাঁর নাট্যকার জীবনের সূত্রপাত হয়। ১৮৭৪-৭৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি এই মেলার যুগ্মসম্পাদক নিযুক্ত হন।

নাট্যকার জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিবাহ

সেইকালের রীতি অনুযায়ী মাত্র উনিশ বছর বয়সেই ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বিবাহ হয়। তাঁর স্ত্রীর নাম কাদম্বরী দেবী। রবীন্দ্রনাথের জীবনে কাদম্বরী দেবীর প্রভাব ও প্রেরণা ছিল অপরিসীম।

উদারপন্থী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

রক্ষণশীল পরিবারের সন্তান হিসাবে প্রথম দিকে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ নারী স্বাধীনতার বিরোধী ছিলেন। পরে দাদা সত্যেন্দ্রনাথের সাহচর্যে পাশ্চাত্যের উদার চিন্তায় প্রভাবিত হন এবং পরে স্টুয়ার্ট মিলের রচনা পাঠ করে উদারপন্থী নব্যচিন্তার অনুসারী হয়ে ওঠেন।

নারীমুক্তি আন্দোলনের পুরোধা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সাহিত্যক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ ঘটেছিল স্ত্রী স্বাধীনতার বিরোধী কিঞ্চিৎ জলযোগ নামক প্রহসন রচনার মাধ্যমে। এই প্রহসন কলকাতার সমাজে আলোড়ন তুলেছিল। পরে রক্ষণশীলতার গন্ডী ভেঙ্গে আধুনিক উদার ভাবধারায় প্রবুদ্ধ জ্যোতিরিন্দ্রনাথই হয়ে উঠলেন নারীমুক্তি আন্দোলনের পুরোধা পুরুষ। কিঞ্চিৎ জলযোগ রচনার জনাও তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ নারী স্বাধীনতার আদর্শ প্রচার তাঁর গৃহ থেকেই শুরু করেছিলেন। বিবাহের পর স্ত্রী কাদম্বরিকে শিক্ষার সুযোগ দিয়েছিলেন, ঘোড়ায় চড়া শিক্ষা দিয়েছিলেন। সকল সামাজিক বাধা উপেক্ষা করে তিনি স্ত্রীর সঙ্গে পাশাপাশি ঘোড়ায় চড়ে কলকাতার প্রকাশ্য গড়ের মাঠে বেড়াতে যেতেন।

স্বদেশী সংগঠন প্রতিষ্ঠায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ গুপ্ত স্বদেশী সংগঠন সম্ভবতঃ জ্যোতিরিন্দ্রনাথের চেষ্টাতেই এদেশে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত সঞ্জীবনী নামক এই সভার সভাপতি হন রাজনারায়ণ বসু। সঞ্জীবনী সভার কর্মতৎপরতায় গোড়ার দিকে দেশলাই প্রস্তুত ও দেশী কাপড় বোনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ব্যবসায়ী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ প্রবল উৎসাহে নীলচাষ ও পাটের ব্যবসায়ে অর্থলগ্নি করে ইংরাজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামলেন। কিন্তু অনভিজ্ঞতার খেসারত গুণতে হল আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ কিন্তু দমলেন না। তাঁর প্রতিভা ছিল খেয়ালী। যখন যে বিষয়ে ঝোঁক চাপত, তাই নিয়েই মেতে উঠতেন। সাহেবরা নানা ব্যবসার ফাঁদ পেতে দেশীয় লোকেদের শোষণ করছে, তাদের শোষণের হাত থেকে দেশের স্বার্থকে রক্ষা করতে হবে এই খেয়ালের বশবর্তী হয়ে এক এক সময়ে এক এক ব্যবসায় নেমে পড়েছেন। তাঁর উদ্যোগ আয়োজনকে স্বভাবতঃই সাহেবরা পথের কাঁটা বলে বিবেচনা করত। প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসায়ীকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য তারাও নানা অপচেষ্টা অবলম্বন করত। উৎসাহ উদ্যম উপযুক্ত চেষ্টা ও অর্থবিনিয়োগ সত্ত্বেও প্রধানতঃ অভিজ্ঞতার অভাব ও ইংরাজদের চক্রান্তেই জ্যোতিরিন্দ্রনাথের দেশীয় ব্যবসায়ের চেষ্টা সফল হতে পারে নি।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের জাহাজ ব্যবসা

  • (১) ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ স্থির করলেন, নদীপথে দেশী স্টিমার সার্ভিস চালু করবেন, টেক্কা দেবেন সাহেব কোম্পানিগুলির সঙ্গে। খুলনা থেকে বরিশাল পর্যন্ত নদীপথে জাহাজ চালাবার উদ্দেশ্যে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ একটা পুরনো জাহাজ নিলামে কিনে নিলেন।
  • (২) খোল নলচে বদলাতে হবে। সরকারি ইঞ্জিনিয়ার বুশবি সাহেবকে দেখানো হল। দেখেশুনে তিনি সুপারিশ করলেন, কেলসো স্টুয়ার্ট কোম্পানি এই পুরনো জাহাজকে একেবারে নতুন করে তৈরি করে দিতে পারবে। তাঁর পরামর্শ মত সেই কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হল।
  • (৩) কিন্তু দিনের পর দিন যায়, জাহাজ তৈরির কাজ আর শেষ হয় না। নানা অছিলায় কোম্পানি একের পর এক জাহাজ ডেলিভারি দেবার দিন বদল করতে লাগল। শেষমেশ ঘন ঘন তাগাদা দিয়ে যে জাহাজটি পাওয়া গেল, তাতে ধরা পড়তে লাগল নানান খুঁত।
  • (৪) ইঞ্জিন সারাই হয় তো বয়লার নয়তো কলকব্জা বিগড়োয়। দেশি সারেঙরা তাদের সীমিত জ্ঞানবুদ্ধি নিয়ে যতটা পারে সামাল দেবার চেষ্টা করে। এভাবে তো আর নিয়মিত স্টীমার সার্ভিস চালানো যায় না।
  • (৫) বিরক্ত হয়ে শেষপর্যন্ত জ্যোতিরিন্দ্রনাথ একজন ফরাসী কমান্ডার নিয়োগ করলেন। তার চেষ্টায় একদিন জাহাজ জলে ভাসল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ তাঁর এই জাহাজের নাম রাখলেন সরোজিনী।

স্বদেশী জাহাজের ভাড়া কমিয়ে দিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

ইতিমধ্যে খুলনা বরিশাল রুটে ফ্লোটিল্লা নামে নতুন এক কোম্পানি জাহাজ চালাতে শুরু করে দিয়েছে। তাদের সঙ্গে টেক্কা দেবার জন্য জ্যোতিরিন্দ্রনাথ তাঁর স্বদেশী জাহাজের ভাড়া কমিয়ে দিলেন। বাঙালী মালিকের জাহাজ জলে নামায় বরিশালের ছাত্র ও যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে প্রবল উত্তেজনার সৃষ্টি হল। তাদের প্রচারে জাহাজে যাত্রীর চাপ দিন দিনই বাড়তে লাগল।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবসার রমরমা

উৎসাহিত হয়ে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ পর পর আরও চারটি জাহাজ কিনে একই রুটে নামিয়ে দিলেন। সরোজিনীর সঙ্গে তারাও নতুন নাম পেল ভারত, স্বদেশী, বঙ্গলক্ষ্মী, লর্ড রিপন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের পাঁচখানি জাহাজ সাহেব কোম্পানিগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে লাগল। কম ভাড়ায় হলেও দেশীয় যাত্রীদের সোৎসাহ সহযোগিতায় রমরম করে চলতে লাগল ব্যবসা।

দেশে জাহাজ ব্যবসায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের লোকসান

দেখেশুনে প্রমাদ গুণল ইংরাজ জাহাজ কোম্পানিগুলি। তারাও ভাড়া কমাতে বাধ্য হল। তাতেও এঁটে উঠতে পারল না জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সঙ্গে। চলতে লাগল ভাড়া কমানোর প্রতিযোগিতা। শেষ পর্যন্ত জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঘায়েল হলেন অন্য দিক থেকে। একদিন মালবোঝাই স্বদেশী জাহাজটি জেটিতে ধাক্কা খেয়ে নদীতে ডুবে গেল। জাহাজডুবির ফলে আর্থিক লোকসান এমনই দাঁড়াল যে জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে বাধ্য হয়ে সরে আসতে হল জাহাজের ব্যবসা থেকে।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যচর্চা

সঙ্গীত ও নাটক রচনার মাধ্যমে সাহিত্যচর্চার সূত্রপাত হলেও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ রচনা করেছেন ইতিহাস, দর্শন ও ভ্রমণ কাহিনী। তিনি ফরাসী ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করে ছিলেন। ফরাসী সাহিত্যের বহু উল্লেখযোগ্য গল্প ও উপন্যাস তিনি বাংলায় অনুবাদ করে বঙ্গভারতীর ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেছেন। জোতিরিন্দ্রনাথের বহু বিস্তৃত সাহিত্যকর্মের মধ্যে বিখ্যাত নাটকগুলি হল, পুরুষবিক্রম, স্বপ্নময়ী, সরোজিনী, অশ্রুমতী ইত্যাদি। অনেকগুলি নাটক হিন্দী, মারাঠী, গুজরাটী ভাষাতে অনুদিত হয়ে বাংলা সাহিত্যের গৌরববৃদ্ধি করেছে। অলীক বাবু, আর করব না ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রহসন। তাঁর একাধিক নাটক পেশাদার রঙ্গমঞ্চ ন্যাশনাল থিয়েটারে সাফল্যের সঙ্গে মঞ্চস্থ হয়।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতিতে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

সাহিত্য চর্চার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতির জন্যও তিনি সচেষ্ট ছিলেন। এই উদ্দেশ্যে তাঁর উদ্যোগে বিদ্বজ্জন সমাগম (১৮৭৪ খ্রিঃ) ও সারস্বত সমাজ (১৮৮২ খ্রিঃ) নামে দুটি সক্রিয় সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রধানতঃ তাঁর উদ্যোগেই ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতী পত্রিকার জন্ম ও যাত্রা শুরু হয়। ১৯০২-৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সহ সভাপতি ছিলেন।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রাঙ্কন

চিত্রাঙ্কনেও জ্যোতিরিন্দ্রনাথের পারদর্শীতা ছিল অসাধারণ। তাঁর অঙ্কিত প্রায় দু হাজার চিত্রের অধিকাংশই রবীন্দ্রভারতী সমিতির সংগ্রহে সংরক্ষিত রয়েছে। প্রতিকৃতি অঙ্কনের ক্ষেত্রে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন। বহু খ্যাত অখ্যাত ব্যক্তির প্রতিকৃতি তিনি খাতাবন্দি করেছেন। বিখ্যাত ইংরাজ শিল্পী রোদেনস্টাইন জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অঙ্কিত চিত্রাবলী দেখে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তিনি রবীন্দ্রনাথকে বলেছিলেন, “তোমার দাদা তোমাদের দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পী।” তাঁরই আগ্রহ ও উদ্যোগে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের চিত্রাবলীর একটি স্বনির্বাচিত সংগ্রহ বিলাত থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের প্রতিকৃতি অঙ্কনে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বৈশিষ্ট্য ছিল যে তিনি প্রতিকৃতির মুখের রেখা পর্যবেক্ষণ করে মানুষটির চরিত্রের ব্যাখ্যা দিতে পারতেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের এই ক্ষমতা শিরোমতি বিদ্যা-এর অন্তর্ভুক্ত।

সাধনা পত্রিকায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখালেখি

তিনি সাধনা পত্রিকায় প্রায় নিয়মিতই লিখতেন। এখানে তাঁর আধুনিক মস্তিস্কতত্ত্ব ও ফ্রেনলজি ও লোকচেনা জাতীয় রচনাদিও প্রকাশিত হয়েছে। দেশের প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব, রাজা মহারাজা থেকে অখ্যাত অপরিচিত মানুষের মুখ তাঁর খাতার পাতায় ঠাঁই পেয়েছে।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ফ্রেনলজির চর্চা

ফ্রেনলজির চর্চা করে বিলেতে স্পারপিন সাহেব সুখ্যাত হয়েছিলেন। রাজা রামমোহন রায়-এর মস্তিস্কের গঠন পরীক্ষা করে এক সময় তিনি তাঁকে এক অসাধারণ প্রতিভাবান ব্যক্তি বলে অভিহিত করেছিলেন। স্পারপিন সাহেবের কৃতিত্বের নজির দেখেই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ফ্রেনলজি বিষয়ে বিশেষ ভাবে আগ্রহী ও উৎসাহিত হয়ে উঠেছিলেন। মানুষের করোটি, মস্তিষ্কের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এমনই মেতে উঠেছিলেন যে আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিত জনেরা ঠাকুর বাড়িতে আসতে রীতিমতো শঙ্কা বোধ করতেন

মানুষের চরিত্র বিচারে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের দক্ষতা

যাকেই সামনে পেতেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ তাকে ধরে সামনে বসিয়ে নিবিষ্ট একাগ্রতায় মাথা টিপে টিপে ছবি এঁকে মানুষটির স্বভাব ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি পর পর বলে দিতেন। একবার গাজীপুরের জেলের ডাক্তার রবার্টসন সাহেবের আগ্রহে ও অনুরোধে তিনি জেলের দাগী খুনে কয়েদিদের মাথার স্কেচ অঙ্কন করে ও মস্তিষ্কের গঠন পরীক্ষা করে তাদের চরিত্র বিচার করে সাহেবকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের খেয়ালী প্রতিভা

ব্যবসায়ী জ্যোতিরিন্দ্রনাথের খেয়ালী প্রতিভা এমনই ছিল যে যখন যেটা মাথায় চাপত তার চূড়ান্ত করে ছাড়তেন। কাজের লাভক্ষতি নিয়ে কখনও বিশেষ মাথা ঘামাতেন না। তাঁর স্বভাবের এই বিশেষ দিকটিকে নিয়ে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অগ্রজ সত্যেন্দ্রনাথ একবার একটি মজার ছড়া রচনা করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন –

বেয়ালা কি মিঠে

অমৃতের ছিটে

ঐ হাতটাতে শুনায়।

পিয়ানো চং চং

চং চং চং

সেতার গুনগুনায়।

মাথার তত্ত্ব খুঁজি,

পুঁথি করেন পুঁজি,

মাথা পেলে আর কিছু চান না,

লন যবে ছবি

মনে ভাবে কবি

হইয়াছে, থামো – আন্না।

চক্ষে আসিয়াছে মোর কান্না।

সঙ্গীতে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

  • (১) জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সাংগীতিক অবদান বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। ঠাকুরবাড়ির সঙ্গীত শিক্ষক বিষ্ণুপদ চক্রবর্তীর কাছে তাঁর সঙ্গীত শিক্ষা। বোম্বাইতে দাদার কাছে থাকার সময় তিনি সেতার বাদন শিক্ষা করেছিলেন। কলকাতায় ফিরে এসে পিয়ানো, বেহালা ও হারমোনিয়াম রপ্ত করেন।
  • (২) পরে সঙ্গীতশাস্ত্রে তাঁর দক্ষতা এতটাই হয়েছিল যে তিনি নতুন নতুন সুর সৃষ্টি করতেন। তাঁর সুরে কথা বসিয়ে রবীন্দ্রনাথ গান রচনা করতেন। কবির প্রথম দিকের অনেক গানই জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সুরে গঠিত হয়েছে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ অনেকগুলি ব্রাহ্মসঙ্গীত রচনা করেন এবং তাতে নিজেই হিন্দী ধ্রুপদাঙ্গের অনুসরণে সুর যোজনা করেন।
  • (৩) বাংলার সঙ্গীতক্ষেত্রে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্মরণীয় অবদান আকারমাত্রিক স্বরলিপির উদ্ভাবন ও প্রচলন। তাঁর রচিত স্বরলিপি ‘গীতিমালা’ পুস্তক সমসাময়িক কালে বিশেষ সমাদৃত হয়েছিল। কালীচরণ সেন সঙ্কলিত ব্রহ্মাসঙ্গীত স্বরলিপি পুস্তকে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অনেক গান স্থান পেয়েছে।

ভারতীয় সঙ্গীত সমাজ প্রতিষ্ঠায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভারতীয় সঙ্গীত সমাজ। তাঁর এই অসামান্য কীর্তি বাংলার সঙ্গীত ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। সঙ্গীত বিষয়ে দুটি মাসিকপত্রও জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সম্পাদনায় প্রকাশিত হত। পত্রিকা দুটি হল ‘বীণাবাদিনী’ ও ‘সঙ্গীত প্রকাশিকা’।

পোশাক নির্বাচনে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

জ্যোতিরিন্দ্রনাথের খেয়ালী প্রতিভা একবার মেতে উঠল সর্বসাধারণের পোশাকের নমুনা নির্বাচন নিয়ে। পায়জামার সঙ্গে একখণ্ড কাপড় পাট করে মালকোচার মতো ব্যবহার করা যায় কিনা এ নিয়ে মাথা ঘামালেন বেশ কিছুদিন। শেষমেশ ভাবনাচিন্তা করে এক অভিনব টুপি তৈরি করলেন। তা তৈরি হল সোলার টুপি আর পাগড়ি মিলিয়ে। এই উদ্ভট মস্তক-আচ্ছাদন তৈরি করেই নিরস্ত হলেন না জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। সে বস্তু নিজেই মাথায় চাপিয়ে কলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে লাগলেন।

কবি রবীন্দ্রনাথের মজার লেখা

রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনস্মৃতি গ্রন্থে এ সম্পর্কে মজাদার বর্ণনা দিয়েছেন – “দেশের জন্য প্রাণ দিতে পারে, এমন বীরপুরুষ থাকিতে পারে, কিন্তু দেশের মঙ্গলের জন্য সর্বজনীন পোষাক পরিয়া গাড়ি করিয়া কলকাতার রাস্তা দিয়া যাইতে পারে, এমন লোক নিশ্চয়ই বিরল।”

শোক ও আঘাতে জর্জরিত জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

এমনি নানা কর্মব্যস্ততার মধ্যেই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ তাঁর সুদীর্ঘ জীবন অতিবাহিত করেছেন। পরমায়ু পেয়েছিলেন পঁচাত্তর বছর। সে জীবন বড় সুখের ছিল না। শোক আর আঘাতে বার বার জর্জরিত হয়েছেন। যুবা বয়সেই, মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর তখন তাঁর বয়স, পত্নী কাদম্বরীর অকাল মৃত্যুতে মর্মান্তিক শোকের আঘাত সইতে হয়েছে তাঁকে। পত্নী বিয়োগের পর নিঃসন্তান জ্যোতিরিন্দ্রনাথ এমনই ভেঙ্গে পড়লেন যে নিজেকে স্বেচ্ছায় সংসার থেকে দূরে সরিয়ে নিলেন।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ জীবন

শেষ জীবন রাঁচিতেই নির্জনে কাটাবেন বলে স্থির করলেন তিনি। তাঁর অভিপ্রায় অনুযায়ী রাঁচীর মোরাবাদী পাহাড়ের ওপরে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হল শান্তিধাম ও উপাসনা মন্দির। সেখানেই অবশিষ্ট জীবন অতিবাহিত করেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ।

চিত্রকর জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যু

নব্য বাংলার অন্যতম পুরোধাপুরুষ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর পরলোক গমন করেন ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ৪ মার্চ।

উপসংহার :- জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলা সাহিত্য, সংগীত, নাট্যকলা এবং সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে এক অনন্য প্রতিভা। তাঁর বহুমুখী প্রতিভা এবং কর্মধারা শুধু ঠাকুর পরিবারকেই সমৃদ্ধ করেনি, বরং বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে অমূল্য সংযোজন করেছে। তিনি নারীর শিক্ষা ও সমাজে তাঁদের অবস্থার উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন এবং প্রগতিশীল চিন্তাধারার প্রচার করেছেন। তাঁর নাটক, গান, অনুবাদ এবং চিত্রকর্ম বাংলা সংস্কৃতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে সৃজনশীল এবং চিন্তাবিদ, যাঁর জীবন ও কাজ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে চলেছে। তাঁর বহুমুখী অবদান তাঁকে বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

(FAQ) জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম নাটক কোনটি?

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম নাটক ছিল “আলালের ঘরের দুলাল”-এর মঞ্চ রূপান্তর।

২। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন ধরনের সংগীতে অবদান রেখেছেন?

তিনি দেশাত্মবোধক এবং বাংলা সংগীতের প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।

৩। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুবাদ কর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কী?

তিনি কালিদাসের “অভিজ্ঞান শকুন্তলম” বাংলায় অনুবাদ করেন।

৪। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর নারীর শিক্ষা নিয়ে কী করেছেন?

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ নারীর শিক্ষা ও সমাজে তাঁদের অগ্রগতির জন্য কাজ করেছেন এবং এই বিষয়ে প্রচার চালিয়েছেন।

৫। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পর্ক কী?

তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় ভাই এবং তাঁকে সাহিত্য ও সংগীতে প্রভাবিত করেছিলেন।

৬। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন চিত্রশিল্পের জন্য পরিচিত?

তিনি জলরঙের চিত্রকর্মে দক্ষ ছিলেন এবং এ ক্ষেত্রেও অবদান রেখেছেন।

Leave a Comment