জন মিলটন

ইংরেজ কবি জন মিলটন প্রসঙ্গে তার জন্ম, ছেলেবেলা, শিক্ষা, শেকসপীয়রের সাথে সাক্ষাৎ, গ্ৰামের বাড়িতে গমন, ইতালি ভ্রমণ, যাজকদের বিরুদ্ধে কলম ধারণ, শোষণের বিরুদ্ধে কলম ধারণ, রাজার নির্দেশ, তার স্বপ্ন ও মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

ইংরেজ কবি জন মিলটন

ঐতিহাসিক চরিত্রজন মিলটন
জন্ম৯ ডিসেম্বর, ১৬০৮ খ্রি:
দেশইংল্যান্ড
পরিচিতিকবি ও গদ্য লেখক
প্রসিদ্ধ কাব্যপ্যারাডাইস লস্ট
মৃত্যু৮ নভেম্বর, ১৬৭৪ খ্রি:
ইংরেজ কবি জন মিলটন

ভূমিকা :- “একজন মহৎ কবি হবার জন্য অবশ্যই তোমাকে একজন মহৎ মানুষ হতে হবে।” সমালোচক টেনির এই উক্তি সম্ভবত একটি মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তিনি ইংল্যান্ডের কবি জন মিলটন।

মিলটনের জন্ম

৯ ই ডিসেম্বর ১৬০৮ সালে লন্ডনের ব্রড স্ট্রীটের একটি বাড়িতে জন মিলটন জন্মগ্ৰহণ করেন। বাড়ির পাশেই ছিল সেন্ট পল ক্যাথিড্রাল গীর্জা। গীর্জার ঘণ্টাধ্বনির ছন্দ শুনতে শুনতে জন্মমুহূর্ত থেকেই মিলটনের মনে জেগে উঠেছিল কবিতার ছন্দ।

কবি মিলটনের সাথে শেকসপীয়রের সাক্ষাৎ

মিলটনের যখন জন্ম হয়, সমগ্র লন্ডন তখন শেকসপীয়রের সৃষ্টির বর্ণচ্ছটায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। শোনা যায় মিলটনের সাথে একবার শেকসপীয়রের সাক্ষাৎ হয় তখন মিলটন সাত বছরের বালক, শেকসপীয়র পঞ্চাশ বছরের প্রৌঢ়।

মিলটনের ছেলেবেলা

পিতা-মাতার ছয় সন্তানের মধ্যে মিলটন ছিলেন তৃতীয়। বাড়ির পরিবেশ ছিল মুক্ত স্বাধীন। শিক্ষা ও সঙ্গীতের একটা পরিমণ্ডল গড়ে উঠছিল বাড়িতে। তিনি লিখেছিলেন ছেলেবেলা থেকেই আমার বাবা আমাকে সাহিত্যের প্রতি অনুসন্ধিৎসু করে তোলেন।

কবি ও গদ্যকার মিলটনের শিক্ষা

  • (১) শৈশবে তাকে লন্ডনের বিখ্যাত সেন্ট পলস্ স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হল। স্কুলের চেয়ে বাড়ির পরিবেশ ছিল শিক্ষার অনুকূল। ষোল বছর বয়সে ক্রেমব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হলেন।
  • (২) সেখানকার পরিবেশ তাঁর মনোমত ছিল না একবার তাঁর কোনো এক শিক্ষকের সাথে অকারণ বির্তকে জড়িয়ে পড়ে হাতাহাতি করবার অভিযোগে সাময়িকভাবে কলেজ থেকে বিতাড়িত হলেন।
  • (৩) কিছুদিন পর আবার কলেজে ভর্তি হলেন। তাঁর সৌন্দর্য, আচার ব্যবহার, মধুর কথাবার্তার জন্যে সকলেই ভালবাসত। সমস্ত কলেজে মিলটনের নাম ছড়িয়ে পড়েছিল কেমব্রিজের নারী “The Cambridge Lady”। শিক্ষক ছাত্ররা তাঁর অভিমতকে সমর্থন না করলেও তাঁর চরিত্রের সততার জন্য শ্রদ্ধা করত।
  • (৪) চব্বিশ বছর বয়েসে কেমব্রিজ থেকে পাশ করে বার হলেন। তিনি শুধু সাহিত্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পেলেন না, আটটি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করলেন।

মিলটনের পিতার ইচ্ছা

তাঁর পিতার ইচ্ছা ছিল মিলটন সাহিত্য সৃষ্টির সাথেই যাজকের জীবন বেছে নেবেন। কিন্তু আজন্ম বিদ্রোহী মিলটন কোনদিনই চার্চকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেননি।

গ্ৰামের বাড়িতে মিলটন

তিনি লন্ডনের সতেরো মাইল দূরে হর্টন গ্রামে গেলেন। সেখানে তাঁর বাবার একটি বাড়ি ছিল। সেই বাড়িতেই তাঁর মা থাকতেন। এখানে পাঁচ বছর ধরে চলল সাহিত্য, দর্শন, ভাষাতত্ত্ব, সঙ্গীত প্রতিটি বিষয়েই গভীর অধ্যয়ন। মিলটন লিখেছেন এই পাঁচ বছর আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের সময়। বাবার কারবার আমাকে সমস্ত আর্থিক দুঃচিন্তা থেকে মুক্ত রেখেছিল।

মিলটনের লণ্ডনে প্রত্যাবর্তন

পাঁচ বছরের অজ্ঞাতবাস শেষ করে তিনি স্থির করলেন, মানুষের সমাজে ফিরে যাবেন। নাইটঙ্গেলের গান, মুক্ত প্রকৃতি ছাড়াও নিজেকে প্রস্তুত করে তুলতে গেলে মানুষের সান্নিধ্য প্রয়োজন। তিনি লন্ডনে ফিরে এলেন। পরিচয় হল কিছু জ্ঞানী মানুষের সাথে। কয়েকজনের সাথে গড়ে উঠল অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব।

কবি মিলটনের মায়ের মৃত্যু

১৬৩৭ সালে মিলটনের মা মারা গেলেন। মায়ের মৃত্যুতে মানসিক দিক থেকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেন মিলটন।

মিলটনের ইতালি ভ্রমণ

  • (১) মিলটনের বাবা ছেলের মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরে তাকে ইতালি যাওয়ার অনুমতি দিলেন। এখানে এসে পেলেন এক নতুন জীবন। একের পর এক ইতালির বিভিন্ন শহর ঘুরতে থাকেন।
  • (২) পরিচয় হল সে দেশের বহু জ্ঞানী-গুণী মানুষের সাথে। দেখা হল গ্যালিলিওর সাথে। গ্যালিলিও তখন বৃদ্ধ, দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। এখানে কয়েকজন বিখ্যাত সঙ্গীতকারের সান্নিধ্য পেলেন।
  • (৩) ইতালির তৎকালীন সাহিত্য, শিল্পকলার চেয়ে সঙ্গীত তাঁকে বেশি আকৃষ্ট করেছিল। ইতালির কিছু কবি সমালোচক তাঁর ল্যাটিন ভাষায় লেখা কবিতা পড়ে মুগ্ধ হলেন। তাদের আন্তরিকতায় মনে হল ঘরের ছেলে যেন ঘরে ফিরে এসেছে।

গদ্যকার মিলটনের ইতালি থেকে প্রত্যাবর্তন

ইংল্যান্ড থেকে সংবাদ এল দেশে যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাঁর দেশভ্রমণের ইচ্ছা স্থগিত রাখলেন। তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে এলেন। ইতালি থেকে প্রত্যাবর্তন করবার আগে মিলটন ভেবেছিলেন তিনি এক অসামান্য কাব্য রচনা করবেন, কিন্তু ইংল্যান্ডে ফিরে আসবার পরেই তাঁর মধ্যে জেগে উঠল বিদ্রোহী সত্তা “এবার আর কাব্য নয়, এখন প্রয়োজন গদ্যের।”

লন্ডনে মিলটনের পাকাপাকিভাবে বসবাস

লন্ডনে এসে পাকাপাকিভাবে ঘর বাঁধলেন মিলটন। নিজেকে ঘোষণা করলেন এই যুদ্ধের সৈনিক হিসাবে। তবে তাঁর অস্ত্র বন্দুক নয়, কলম।

ধর্মীয় বিবাদ-বিসংবাদ মিলটনের অপছন্দ

মিলটন ধর্মীয় বিবাদ-বিসংবাদকে অপছন্দ করতেন কিন্তু মানুষের এই বিবাদকে অস্বীকার করলেন না। “অন্য মানুষের ঘামঝরানো পরিশ্রমে আমি আরাম আনন্দ ভোগ করতে চাই না। যারা তা ভোগ করে আমি তাদের ঘৃণা করি।”

যাজকদের বিরুদ্ধে মিলটনের কলম ধারণ

মিলটনের অন্তরের ক্ষোভ ফেটে পড়ল তাঁর লেখায়। প্রথম আঘাত হানলেন খ্রিস্টান যাজক ধর্মপ্রচারকদের বিরুদ্ধে। যারা ধর্মের নামে চার্চের পবিত্র পরিমণ্ডলকে দূষিত করে তুলেছে। যারা হিংস্র নেকড়ের মত অন্যকে সেবা করবার পরিবর্তে নিজেরাই অন্যের সেবায় পরিপুষ্ট হচ্ছে।

শোষণের বিরুদ্ধে মিলটনের কলম ধারণ

শুধু ধর্ম নয় আরো অনেকের বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষুরধার কলম গর্জে উঠল। সমাজের শাসক শ্রেণীর দুর্নীতি, তাদের ব্যভিচার, শাসনের নামে শোষণের বিরুদ্ধে তীব্র কষাঘাত করলেন। মিলটন জানতেন তাঁর এই লেখার পরিণতি কি ভয়ঙ্কর হতে পারে। শুধু কারাদণ্ড নয়, মৃত্যু অবধি হতে পারে তাঁর। তবুও সামান্যতম ভীত হলেন না।

ইংল্যান্ডের রাজার নির্দেশ

১৬৪৪ সালে ২৪ শে আগস্ট রাজার নির্দেশে নতুন আইন প্রস্তুত করে বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক সমস্ত বিষয়ে লেখার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হল।

মিলটনের সৃষ্ট স্যামসন চরিত্র

স্যামসনের চরিত্রের মধ্যে দিয়ে মিলটন যেন নিজেকেই প্রতিবিম্বিত করেননি, এতে ফুটে উঠেছে সমগ্র ইংরেজ জাতির অবক্ষয়। ক্রমওয়েলের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় চার্লসের আমলে সমগ্র জাতি যেন নতজানু হয়ে রাজশক্তির করুণা ভিক্ষা করছে।

কবি ও গদ্যকার মিলটনের স্বপ্ন

তিনি স্বপ্ন দেখতেন স্যামসনের মত তাদের অন্তরেও চিরবিদ্রোহী আত্মা জেগে উঠুক। জন্ম নিক নতুন স্বাধীন মুক্ত ইল্যান্ড।

মিলটনের মৃত্যু

এই বুক ভরা স্বপ্ন নিয়েই ১৬৭৪ সালের ৮ই নভেম্বর পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন ইংরাজি বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জন মিলটন।

উপসংহার :- বিভিন্ন সামাজিক ও সাহিত্য জার্নালের কল্যাণে মিলটনের অবদান একুশ শতাব্দীতেও অটুট রয়েছে। তার মৃত্যুর পর থেকে আজ পর্যন্ত মিলটনের জীবন নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে।

(FAQ) আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. জন মিলটন কে ছিলেন?

সপ্তদশ শতাব্দীর ইংরেজ কবি ও গদ্য লেখক জন মিলটন তার প্রসিদ্ধ কাব্য প্যারাডাইস লস্ট এর কারণে সমধিক পরিচিত।

২. মিলটন কোন দেশের নাগরিক ছিলেন?

ইংল্যান্ড।

৩. মিলটনের প্রসিদ্ধ কাব্য কোনটি?

প্যারাডাইস লস্ট।

৪. মিলটনের সৃষ্ট উল্লেখযোগ্য চরিত্রের নাম কি?

স্যামসন।

Leave a Comment