১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ভারতীয় কাউন্সিল আইন প্রসঙ্গে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের ত্রুটি, নতুন আইন বিধিবদ্ধ, আইনের শর্তাবলী, আইনের ইতিবাচক দিক ও নেতিবাচক দিক সম্পর্কে জানবো।
১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ভারতীয় কাউন্সিল আইন
ঐতিহাসিক ঘটনা | ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ভারতীয় কাউন্সিল আইন |
প্রবর্তক | ব্রিটিশ পার্লামেন্ট |
প্রবর্তন কাল | ১৮৬১ খ্রি: |
প্রবর্তিত স্থান | ভারত |
ভূমিকা :- উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে ভারতে শাসনতান্ত্রিক বিবর্তনের ইতিহাসের প্রধান বিষয়বস্তু হল ভারতে আইনসভার প্রতিষ্ঠা এবং শাসনব্যবস্থায় ভারতীয়করণ ও বিকেন্দ্রীকরণের নীতির সূচনা।
১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের ত্রুটি
মহাবিদ্রোহ-এর পূর্বে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন অনুযায়ী ভারতে আইনসভার সৃষ্টি হয়। কিন্তু আইনে কতকগুলি ত্রুটি ছিল এবং সেজন্য শাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে নানারূপ অসুবিধা দেখা দেয়। যেমন –
- (১) ভারতীয় শাসনব্যবস্থায় আইনসভায় বারবার হস্তক্ষেপ ও আইন প্রণয়নের স্বাধীনতার দাবি প্রচণ্ড জটিলতার সৃষ্টি করে।
- (২) আইন প্রণয়নের ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণের ফলে বোম্বাই ও মাদ্রাজ সরকারের পক্ষে কোনো আইন বিধিবদ্ধ করা সম্ভব ছিল না। ফলে ঐ দুটি প্রদেশের শাসন ব্যাপারে নানা অসুবিধার সৃষ্টি হয়।
- (৩) আইনসভায় কোনো ভারতীয় সদস্য না থাকায় ভারতীয়দের সঠিক মনোভাব জানা সম্ভব ছিল না।
নতুন আইন বিধিবদ্ধ
বিশেষতঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পর ব্রিটেন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন বিষয়ে ভারতীয়দের মনোভাব জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সুতরাং নতুন আইন বিধিবদ্ধ করে তাঁরা এই বিষয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা শুরু করেন।
১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের আইনের শর্তাবলী
ব্রিটিশ সরকারের ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের কাউন্সিল আইনে শাসনতান্ত্রিক ব্যাপারে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধন করা হয়। যথা –
- (১) গভর্নর জেনারেলের কার্য নির্বাহক পরিষদের সাধারণ সদস্যের সংখ্যা চার থেকে বাড়িয়ে পাঁচে পরিণত করা হয়। নতুন এই সদস্য অবশ্যই আইন ও বিচার সংক্রান্ত বিষয়ে অভিজ্ঞ হবেন। লর্ড ক্যানিং বিভাগীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন এবং প্রত্যেক সদস্যকে এক একটি বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
- (২) আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে গভর্নর জেনারেলের পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। গভর্নর জেনারেল ন্যূনতম ছয়জন এবং অনধিক বারোজন অতিরিক্ত সদস্যকে ছ’বছরের জন্য মনোনীত করার ক্ষমতা লাভ করেন। এই অতিরিক্ত সদস্যের অন্তত অর্ধেক অবশ্যই বেসরকারী পর্যায়ের হবে।
- (৩) বোম্বাই ও মাদ্রাজের প্রাদেশিক গভর্নরের পরিষদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা পুনরায় অর্পণ করা হয়।
- (৪) প্রাদেশিক গভর্নরের পরিষদের সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। ন্যূনতম চারজন এবং অনধিক আটজন অতিরিক্ত সদস্য মনোনীত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ঠিক হয় যে, এই সংখ্যার অর্ধেক সদস্য অবশ্যই বেসরকারী পর্যায় থেকে গৃহীত হবে।
- (৫) বাংলা, পাঞ্জাব ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে আইন পরিষদ গঠনের প্রস্তাব করা হয়।
- (৬) গভর্নর জেনারেল জরুরী পরিস্থিতিতে আইন পরিষদের অনুমোদন ছাড়াই অর্ডিন্যান্স বা জরুরী আইন ঘোষণা করার অধিকার লাভ করেন।
ভারতে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ভারতীয় কাউন্সিল আইনের ইতিবাচক দিক
- (১) এই আইন ব্রিটিশ সরকারের চিরাচরিত শাসন ব্যবস্থার অনেক নীতি পরিবর্তন করে। আইন পরিষদে কিছু সংখ্যক ভারতীয় সদস্য গ্রহণ করার এবং প্রাদেশিক সরকারগুলোর উপর আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রত্যর্পণের ফলে শাসনব্যবস্থার ভারতীয়করণ এবং বিকেন্দ্রীকরণের নীতি সামান্যভাবে গৃহীত হয়।
- (২) তা ছাড়া পরিষদগুলোতে ভারতীয়দের পক্ষ থেকে বেসরকারী সদস্য মনোনয়নের ব্যবস্থা গৃহীত হওয়ায় ভারতবাসী এই প্রথম প্রশাসনিক ব্যবস্থায় অংশ গ্রহণের সুযোগ পায়।
১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ভারতীয় কাউন্সিল আইনের নেতিবাচক দিক
- (১) ভারতে স্বায়ত্ত্ব শাসনের বিবর্তনের পথে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের কাউন্সিল আইনকে কোনো ক্রমেই সন্তোষজনক বা অগ্রবর্তী পদক্ষেপ বলা চলে না। আইন পরিষদে সরকারী সদস্যদের সংখ্যাধিক্য থাকায় বেসরকারী সদস্যদের মতামতের কোনো মূল্য ছিল না।
- (২) তাছাড়া, বেসরকারী সদস্যদের অধিকাংশই সরকারের মনোনীত হওয়ায় তাদের পক্ষে সরকারের বিরোধী মতামত প্রকাশ করার সুযোগ ছিল না। বেসরকারী সদস্যদের প্রায় সকলেই দেশীয় রাজন্যবর্গ ও ভূস্বামী সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে মনোনীত হতেন এবং তাদের সঙ্গে সাধারণ ভারতবাসীর কোনো সংযোগ ছিল না।
- (৩) অপরদিকে আইন পরিষদের সদস্যদের প্রশাসন, কর ধার্য, ব্যয় প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইন প্রণয়নের কোনও ক্ষমতা ছিল না।
উপসংহার :- সর্বোপরি ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের কাউন্সিল আইনে গভর্নর জেনারেলকে অর্ডিনান্স জারি করার যে ক্ষমতা দেওয়া হয় তার ফলে স্বাধীনভাবে আইন প্রণয়ন করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে ওঠে। এমন কি, আইন পরিষদের গৃহীত কোনো আইনও গভর্নর জেনারেলের সন্মতি ব্যতীত কার্যকরী হতে পারত না।
(FAQ) ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ভারতীয় কাউন্সিল আইন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
পাঁচ জন।
লর্ড ক্যানিং।
১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ভারতীয় কাউন্সিল আইন।