শুঙ্গ রাজবংশের গুরুত্ব প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দিক, হিন্দু ধর্মের প্রাধান্য, ধর্মীয় সহনশীলতা, বৈষ্ণব ধর্মের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি, ভাগবত ধর্মের প্রসার, রাষ্ট্রীয় ভাষা সংস্কৃত এবং স্থাপত্য ও ভাস্কর্য সম্পর্কে জানবো।
শুঙ্গ রাজবংশের গুরুত্ব
ঐতিহাসিক ঘটনা | শুঙ্গ রাজবংশের গুরুত্ব |
প্রতিষ্ঠাতা | পুষ্যমিত্র শুঙ্গ |
পূর্ববর্তী | মৌর্য সাম্রাজ্য |
পরবর্তী | কাণ্ব বংশ |
ভাষা | সংস্কৃত |
ভূমিকা :- ভারত ইতিহাসে পুষ্যমিত্র শুঙ্গের রাজত্বকাল ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ যুগ। মৌর্যবংশের পতনের পর যবন বা ব্যাকট্রীয় আক্রমণ প্রতিহত করার কাজে শুঙ্গ রাজা পুষ্যমিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।
শুঙ্গ রাজবংশের রাজনৈতিক দিক
তিনি সীমান্তের ব্যাকট্রীয় রাজাদের আগ্রাসী নীতি ছেড়ে ভারতীয় জীবনধারা গ্রহণ করতে ও ভারতীয় রাজাদের সঙ্গে সহাবস্থান করতে বাধ্য করেন।
শুঙ্গ রাজবংশে হিন্দু ধর্মের প্রাধান্য
পুষ্যমিত্রের আমলে ব্রাহ্মণ্য হিন্দুধর্মের প্রাধান্য বৃদ্ধি পায়। পুষ্যমিত্রের অশ্বমেধ যজ্ঞ ও সংস্কৃত ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে গ্রহণ এর সাক্ষ্য দেয়। তাঁর আমলে যে হিন্দু ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রভাব বাড়ে গুপ্ত যুগে তা হিন্দু রেনেসাঁস বা নবজাগরণ বা পুনর্জাগরণে পরিণত হয়। তার আমলেই হিন্দু আইন ও বিখ্যাত স্মৃতিশাস্ত্র মনুস্মৃতি রচিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
শুঙ্গ রাজবংশে ধর্মীয় সহনশীলতা
অবশ্য পুষ্যমিত্র ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সাম্প্রদায়িকতা প্রচার করতেন না। তিনি ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রতি রাজ আনুকূল্য দেখান। বৌদ্ধ ধর্ম -এর প্রতিও তিনি শ্রদ্ধা দেখাতে ভুলেননি। সাঁচী, ভারহুতে তিনি অনুদান করেন। ভারহুতের তোরণ, সাচীর বেষ্টনী সম্ভবত তাঁরই উদ্যমে তৈরি হয়।
শুঙ্গ রাজবংশে বৈষ্ণব ধর্মের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি
এই শুঙ্গ যুগে ভাগবত ধর্ম বা বৈষ্ণব ধর্ম-এর বিশেষ জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। সাধারণ লোকের মধ্যে বিষ্ণুর উপাসনা ব্যাপক হয়। কিন্তু অশোক -এর মতো কোনো পৃষ্ঠপোষক না থাকায় ভাগবত ধর্ম প্রবল হতে পারেনি।
শুঙ্গ রাজবংশে ভাগবত ধর্মের প্রসার
যবন বা ব্যাকট্রীয়দের মধ্যে ভাগবত ধর্মের প্রসার ঘটেছিল। বিদিশায় কাশীপুত্র ভাগভদ্রের রাজসভায় গ্রীকদূত হেলিওডোরাস নিজেকে “পরম বৈষ্ণব” বলে দাবী করেন। তিনি বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে একটি গরুড় স্তম্ভ তৈরি করেন।
শুঙ্গ রাজবংশে রাষ্ট্রিয় ভাষা সংস্কৃত
এই শুঙ্গ যুগে সংস্কৃত ভাষা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পায়। এই ভাষা ছিল উচ্চ শ্রেণীর ভাষা। অশোকের যুগের প্রাকৃত ভাষা পিছু হঠতে বাধ্য হয়। পতঞ্জলির মহাভাষ্য, মনুস্মৃতি সংস্কৃত ভাষায় রচিত হয়।
শুঙ্গ রাজবংশের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য
প্রাচীন শুঙ্গ যুগের স্থাপত্য ও ভাস্কর্যকলা ছিল মৌর্য যুগ হতে স্বতন্ত্র। শুঙ্গ স্থাপত্যে কাঠের ব্যবহার করা হত না। মৌর্য যুগের স্তূপগুলিতে কাঠের বেষ্টনীর স্থলে শুঙ্গ যুগে পাথরের তৈরি বেষ্টনী ও তোরণের চলন দেখা যায়। বিদিশা ছিল শুঙ্গ শিল্পকলার প্রধান কেন্দ্র।
উপসংহার :- ফুশার-এর মতে, “বিদিশার গজদন্তের শিল্পীরাই সাঁচীর তোরণ খোদাই করে।” এছাড়া ভারহুত, অমরাবতী স্তূপ, পুণার নিকটে পাহাড় খোদাই করে বিহার, বিদিশার গরুড় স্তম্ভ প্রভৃতি শুঙ্গ শিল্পকলার নিদর্শন বলে গণ্য করা হয়।
(FAQ) শুঙ্গ রাজবংশের গুরুত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
পুষ্যমিত্র শুঙ্গ।
ভাগবত বা বৈষ্ণব।
সংস্কৃত।
বিদিশা।