কাশ্মীরের ইতিহাস প্রসঙ্গে দুর্লভবর্ধন, দুর্লভক, চন্দ্রাপীড়, তারাপীড়, মুক্তাপীড় ললিতাদিত্য, জয়াপীড়, অবন্তীবর্মন, শঙ্কর বর্মন, গোপাল বর্মন, পার্থ বর্মন, চক্রবর্মন, রানী দিদ্দা ও লাহোর বংশ সম্পর্কে জানবো।
কাশ্মীরের ইতিহাস
ঐতিহাসিক ঘটনা | কাশ্মীরের ইতিহাস |
প্রতিষ্ঠাতা | দুর্লভবর্ধন |
শ্রেষ্ঠ রাজা | মুক্তাপীড় |
শেষ বিখ্যাত রাজা | জয়সিংহ |
রাজতরঙ্গিনী | কলহন |
ভূমিকা :- কাশ্মীরের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রধান উপাদান হল কাশ্মীরি পণ্ডিত কলহন রচিত রাজতরঙ্গিনী গ্ৰন্থ। এই গ্ৰন্থ ভারত-এর প্রথম ইতিহাস গ্ৰন্থ রূপে স্বীকৃতি পেয়েছে।
কাশ্মীরের কার্কট বংশ
কার্কট বংশের সময় থেকেই কাশ্মীরের রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যেমন –
(১) দুর্লভবর্ধন
সপ্তম শতকে কার্কট বংশের প্রতিষ্ঠাতা দুর্লভবর্ধনের আমল থেকে কাশ্মীর ভারতের রাজনীতিতে প্রাধান্য পায়। দুর্লভবর্ধন ৬২৭ খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের একাংশ শাসন করতেন।
(২) দুর্লভক
দুর্লভবর্ধনের পর দুর্লভক কাশ্মীরের সিংহাসনে বসেন। তার সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় নি।
(৩) চন্দ্রাপীড়
এরপর চন্দ্রাপীড় কাশ্মীরের সিংহাসনে বসেন। তিনি ৭১৩ খ্রিস্টাব্দে চীন-এ এক দূত পাঠান। তিনি কাশ্মীরে আরব আক্রমণের সম্ভাবনাকে প্রতিরোধ করেন। কেউ কেউ বলেন যে, চন্দ্রাপীড় চীনের বশ্যতা স্বীকার করেন। তবে এ সম্পর্কে মতভেদ আছে। চন্দ্রাপীড় খুবই ধর্মভীরু ও ন্যায়পরায়ণ রাজা ছিলেন বলে কলহন বলেছেন।
(৪) তারাপীড়
চন্দ্রাপীড়ের পর তাঁর ভ্রাতা তারাপীড় কাশ্মীরের সিংহাসনে বসেন। তিনি খুব অত্যাচারী রাজা ছিলেন।
(৫) মুক্তাপীড়
- (ক) এর পর মুক্তাপীড় ললিতাদিত্য ৭২৪ খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীরের সিংহাসনে বসেন। কার্কট বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা হিসেবে মুক্তাপীড় ললিতাদিত্য পরিগণিত হন। তিনি কাশ্মীরে তিব্বতীদের আক্রমণ বন্ধ করার জন্য ৭৩৩ খ্রিস্টাব্দে চীন সম্রাটের দরবারে একটি দূতমিশন পাঠান। চীন সম্রাট এই মিশনকে সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করেন এবং মুক্তাপীড়কে কাশ্মীরের রাজা বলে স্বীকৃতি দেন।
- (খ) মুক্তাপীড় কনৌজের যশোবর্মনের সঙ্গে যোগ দিয়ে তিব্বতীদের বিতাড়িত করেন। মুক্তাপীড় দার্দ, কম্বোজ প্রভৃতি উপজাতিদেরও পরাস্ত করেন। মুক্তাপীড়ের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি ছিল কনৌজ রাজ যশোবর্মনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়। উত্তর ভারতের আধিপত্য নিয়ে কনৌজ ও কাশ্মীরের দ্বন্দ্বে তিনি যশোবর্মনকে পরাস্ত করেন এবং কনৌজ অধিকার করেন।
(৬) জয়াপীড়
মুক্তাপীড়ের পর কাশ্মীরের উল্লেখযোগ্য রাজা ছিলেন তার পৌত্র জয়াপীড় বিনয়াদিত্য। তিনি গৌড় ও কনৌজ জয় করে মুক্তাপীড়ের বিজয়ের অনুকরণের চেষ্টা করেন। দামোদর গুপ্ত, বাসন, উদ্ভট প্রমুখ কবি তাঁর রাজসভায় ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর কার্কট বংশের ক্ষমতা ক্ষয় পায়।
কাশ্মীরের উৎপল বংশ
৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে কার্কট বংশের পতন হয়। এরপর উৎপল বংশ কাশ্মীরে রাজত্ব করে। এই বংশের রাজারা হলেন –
(১) অবন্তী বর্মন
অবন্তী বর্মন (৮৫৫-৮৩৩ খ্রি) ছিলেন উৎপল বংশের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি অবন্তীপুর নামে এক নগর স্থাপন করেন। তাঁর মন্ত্রী সূর্য ছিলেন সুযোগ্য প্রশাসক। তার চেষ্টায় কাশ্মীরে জলসেচ ব্যবস্থার উন্নতি হয়।
(২) শঙ্কর বর্মন
অবন্তী বর্মনের পর উল্লেখযোগ্য শাসক ছিলেন শঙ্কর বর্মন (৮৮৫-৯০২ খ্রি)। তিনি প্রতিহার রাজ ভোজের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। তবে তিনি ছিলেন শোষণকারী রাজা।
(৩) গোপাল বর্মন
এর পর উৎপল বংশীয় গোপাল বর্মন (৯০২-৯০৪ খ্রি) রাজত্ব করেন। তিনি ছিলেন দুর্বল, অযোগ্য শাসক।
(৪) পার্থ বর্মন
গোপাল বর্মনের পর পার্থ বর্মন ৯০৬-১১১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। কিন্তু এই রাজার দুর্বলতার সুযোগ প্রাসাদে রক্ষীতন্ত্রীরা অত্যন্ত অত্যাচারী হয় ও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়।
(৫) চক্রবর্মন
রাজার দুর্বলতার সুযোগে শেষ পর্যন্ত চক্রবর্মন নামে এক ব্যক্তি তন্ত্রীদের দমন করে সিংহাসনে বসেন।
কাশ্মীরের উৎপল বংশের পতন
উৎপল বংশের শেষ রাজা ছিলেন দ্বিতীয় অবন্তীবর্মনকে উচ্ছেদ করে যশঙ্কর নামে এক ব্রাহ্মণ সিংহাসনে বসেন।
কাশ্মীরের রাজা যশস্কর
যশস্কর ছিলেন সুশাসক। কিন্তু সিংহাসনে তার বৈধ অধিকার না থাকায় তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত দেখা দেয়। ৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে প্রভোগুপ্ত তাঁকে সিংহাসনচ্যুত করে নিজে সিংহাসনে বসেন।
কাশ্মীরের বিখ্যাত রাণী দিদ্দা
এর পর ক্ষেমগুপ্ত কিছুকাল রাজত্ব করেন। ক্ষেমগুপ্তের পর তার পুত্র অভিমন্যু সিংহাসনে বসেন। তাঁর তরফে রাণী দিদ্দা শাসন পরিচালনা করেন। দিদ্দা ছিলেন খুবই নিষ্ঠুর ও খল প্রকৃতির।
কাশ্মীরের লাহোর বংশ
সংগ্রামরাজ দিদ্দাকে নিহত করে লাহোর বংশের শাসন স্থাপন করেন। সংগ্রামরাজ লাহোর বংশকে কাশ্মীরের সিংহাসনে বসান। তাঁর পর হরি ও অনন্ত রাজত্ব করেন।
উপসংহার :- কাশ্মীরের উল্লেখযোগ্য রাজা ছিলেন হর্ষ। তিনি ছিলেন সুশাসক। লাহোর বংশের শেষ বিখ্যাত রাজা ছিলেন জয়সিংহ (১১২৮-৫৫ খ্রি)।
(FAQ) শুঙ্গ রাজবংশের গুরুত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
কলহন রচিত রাজতরঙ্গিনী।
দুর্লভবর্ধন।
মুক্তাপীড় ললিতাদিত্য।
কাশ্মীর।