ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারী দুকড়িবালা দেবী প্রসঙ্গে তার জন্ম, পিতা-মাতা, বিবাহ, দুকড়িবালা দেবীর বাড়িতে স্বদেশী বাই পাঠ, দুকড়িবালা দেবীর মনোভাবের পরিবর্তন, দুকড়িবালা দেবীর বিপ্লবী দলে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ, দুকড়িবালা দেবীর বাড়িতে পিস্তল লুকিয়ে রাখা, দুকড়িবালা দেবীর বাড়িতে রাখা পিস্তল চুরির কাহিনী, পুলিস কর্তৃক দুকড়িবালা দেবীর বাড়ি তল্লাশি, দুকড়িবালা দেবীর সাজা, জেলে দুকড়িবালা অসহ্য জীবন, দুকড়িবালা দেবীর মুক্তি ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।
দুকড়িবালা দেবী
ঐতিহাসিক চরিত্র | দুকড়িবালা দেবী |
পরিচিতি | স্বাধীনতা সংগ্রামের নারী বিপ্লবী |
জন্ম | ২১ জুলাই ১৭৮৭ খ্রি |
জন্মস্থান | বীরভূম জেলা |
খ্যাতি | বিপ্লবী অস্ত্রশস্ত্র রক্ষা |
মৃত্যু | ২৮ এপ্রিল ১৯৭০ খ্রি |
ভূমিকা :- ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন নারী বিপ্লবী ছিলেন দুকড়িবালা দেবী। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলন-এ তিনি সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহন করেন। ব্রিটিশ শাসকদের দ্বারা তিনিই প্রথম সশ্রম কারাদণ্ড প্রাপ্ত নারী ছিলেন।
দুকড়িবালা দেবীর জন্ম
১৮৮৭ সালে (বাংলা ১২৯৭, ৬ই শ্রাবণ) দুকড়িবালা দেবী বীরভূম জেলার নলহাটি থানার ঝাউপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
দুকড়িবালা দেবীর পিতামাতা ও স্বামী
তার পিতা নীলমণি চট্টোপাধ্যায় এবং মা কমলকামিনী দেবী। স্বামী ছিলেন ঝাউপাড়া গ্রামেরই ফণীভূষণ চক্রবর্তী।
দুকড়িবালা দেবীর বাড়িতে স্বদেশী বাই পাঠ
তাঁর বোনপোর নাম নিবারণ ঘটক। তিনি ছিলেন মাইনিং ক্লাসের ছাত্র। মাসীমা দুকড়িবালা নিবারণ ঘটককে খুব স্নেহ করতেন। বোনপো প্রায়ই তাঁর বাড়ীতে বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসতেন। স্বদেশী বই, বেআইনী বই লুকিয়ে পড়বার আড্ডা ছিল মাসীমার বাড়ী। দুকড়িবালা দেবীর কেমন সন্দেহ হ’ত। তিনি সকলের অলক্ষ্যে বইগুলি দেখে নিয়ে বোনপোকে ধমক দিলেন। বোনপো আমলই দেন না।
দুকড়িবালা দেবীর মনে পরিবর্তন
ক্রমে তাঁর বাড়ীতে একদিন মাস্টারমশাই নাম নিয়ে এলেন অধ্যাপক জ্যোতিষ ঘোষ। সিয়ারসোল রাজস্টেটে রণেনবাবু নাম নিয়ে এলেন ফেরারী বিপিন গাঙ্গুলী। রাজবাড়ীর কর্মচারীরূপে বিপিনবাবু লাঠি ছোঁড়া খেলা ও মুষ্টিযুদ্ধ শিক্ষার শিক্ষক হয়ে আত্মগোপন ক’রে আছেন। এঁদের আত্মবিশ্বাস ও সাহস দেখে দুকডিবালা দেবী মুগ্ধ হয়ে যান, বিস্মিত হয়ে যান। তাঁর মনে এঁদের প্রতি সহানুভূতি ও শ্রদ্ধা জেগে ওঠে। ধীরে ধীরে একটা পরিবর্তন দেখা দিল তাঁর মনে।
দুকড়িবালা দেবীর বিপ্লবী দলে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ
বোনপো নিবারণের বিবাহ নিয়ে তুমুল তর্ক বাধল মাসী-বোনপোর মধ্যে। শর্ত ছিল তর্কে যে হারবে সে বিজয়ীর পথ ও মত গ্রহণ করবে। তর্কে মাসীমা হেরে গেলেন। বললেন, “এবার আমায় দলে নিয়ে নাও।” বোনপো নিবারণ বলেন, “তুমি কি এপথে আসতে পারবে মাসিমা ? এমন বিপদের মুখে পা বাড়াতে নাই বা এলে ?” সিংহী গর্জে উঠে বললেন, “তুমি যদি দেশের জন্য প্রাণ দিতে পার, তোমার মাও পারে।”
দুকড়িবালা দেবীর বাড়িতে পিস্তল লুকিয়ে রাখা
একদিন বোনপো নিবারণ সাতটা মসার পিস্তল এনে লুকিয়ে রাখতে দিলেন মাসিমা দুকড়িবালা দেবীকে। এগুলি ছিল রডা কোম্পানী থেকে চুরি ক’রে আনা মাল।
দুকড়িবালা দেবীর বাড়িতে রাখা পিস্তল চুরির কাহিনী
- (১) এই চুরির কাহিনী অভিনব। ১৯১৪ সালের ২৬শে অগাস্ট রডা কোম্পানীর জেঠী সরকার শ্রীশ মিত্র বড়সাহেবের হুকুমমতো মাল খালাস করতে জাহাজঘাটে যান। তিনি ২০২টি অস্ত্রপূর্ণ বাক্স খালাস করে ৭ টি গরুর গাড়ী বোঝাই করে নিয়ে আসতে থাকেন।
- (২) ৬ টি গাড়ী তিনি রডা কোম্পানীর গুদামে পৌঁছে দেন। একটি গাড়ীর গাড়োয়ান ছদ্মবেশী বিপ্লবী হরিদাস দত্ত গাড়ীটিকে নিয়ে উধাও হন। সেই গাড়ীতে ৯টি বাক্সে ছিল কার্টিজ এবং একটিতে ৫০টি মসার পিস্তল। মালগুলি পরে বিপ্লবীদের বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রেরিত হয়।
পুলিস কর্তৃক দুকড়িবালা দেবীর বাড়ি তল্লাশি
১৯১৭ সালের জানুয়ারি মাসে একদিন পুলিস দুকড়িবালা দেবীর বাড়ী ঘিরে ফেলে। তল্লাসীতে পাওয়া যায় সাতটা মসার পিস্তল। শত জেরাতেও দুকড়িবালা দেবীর মুখ থেকে বের করতে পারল না যে, কে দিয়েছে তাঁকে পিস্তলগুলি।
দুকড়িবালা দেবীর সাজা
গ্রামের মেয়ে গ্রামের বৌ দুকডিবালা দেবী কোলের শিশু বাড়ীতে রেখে চলে গেলেন পুলিসের সঙ্গে। স্পেশাল ট্রাইবুনালের বিচারের রায়ে দুকডিবালা দেবীর সাজা হয় দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। নিবারণ ঘটকও রেহাই পান নি। তাঁর জন্য কারাবাসের আদেশ হয় পাঁচ বছর।
জেলে দুকড়িবালা দেবীর অসহ্য জীবন
দুকড়িবালা দেবীর কারাবাসের করুণ কাহিনী ননীবালা দেবীর জীবনীতে আগেই লেখা হয়েছে। বন্দীজীবনের অসহ্য পরিবেশের মধ্যে থেকেও, প্রতিদিন আধমণ ডাল ভাঙতে থাকা সত্ত্বেও তিনি তাঁর বাবাকে চিঠি লিখলেন, তিনি ভালোই আছেন, তাঁর জন্য যেন তাঁরা চিন্তা না করেন, শুধু বাচ্চাদের যেন তাঁরা দেখেন, শিশুরা যেন না কাদে।
দুকড়িবালা দেবীর মুক্তি
জেলের অসহ্য জীবন থেকে তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন ১৯১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। উল্লেখ্য, দুকড়িবালা দেবীই পরাধীন ভারত-এ অস্ত্র আইনে দন্ডিতা প্রথম মহিলা।
দুকড়িবালা দেবীর মৃত্যু
২৮ এপ্রিল, ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে দুকড়িবালা দেবী মৃত্যু বরণ করেন।
উপসংহার :- এমনই ছিলেন তখনকার দিনের অগ্রগামী নারী সৈনিকরা। অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেও তারা মুখ খুলে নি। আর এরকমই একজন নারী সৈনিক হলেন দুকড়িবালা দেবী।
(FAQ) দুকড়িবালা দেবী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন নারী বিপ্লবী ছিলেন দুকড়িবালা দেবী।
২১ জুলাই ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে।
বীরভূম জেলার নলহাটি থানার ঝাউপাড়া গ্রাম।
২৮ এপ্রিল ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে।