বাংলায় দিল্লি সুলতানির আধিপত্য প্রসঙ্গে বখতিয়ারের উত্তরাধিকারী ঘোষণা, কুতুবউদ্দিনের সাহায্য, রুমির বাংলা অভিযান, হসামুদ্দিন খলজি, বাংলা শাসনকর্তা আলি মর্দান, আলি মর্দানের শাসনকাল, আলি মর্দানের স্বাধীনতা ঘোষণা, আলি মর্দানের হত্যা, গিয়াসুদ্দিন আইওয়াজ ও তার রাজত্বের গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।
বাংলায় দিল্লি সুলতানির আধিপত্য
বিষয় | বাংলায় দিল্লী সুলতানির আধিপত্য স্থাপন |
কুতুবউদ্দিন আইবক | আলি মর্দান খলজি |
ইলতুৎমিস | গিয়াসুদ্দিন আইওয়াজ |
খলিফার ফর্মান | গিয়াসুদ্দিন আইওয়াজ |
ভূমিকা :- বখতিয়ার খলজির দুই অনুচরের নাম ছিল ইজুদ্দিন মহম্মদ শিরান খলজি ও আলি মর্দান খলজি। বখতিয়ারের মৃত্যুর পর বাংলার সিংহাসনের অধিকার নিয়ে এই দুই আমীরের মধ্যে বিবাদ দেখা দেয়।
বাংলায় বখতিয়ারের উত্তরাধিকারী ঘোষণা
মহম্মদ শিরানের আক্রমণে আলি মর্দান পরাজিত ও বন্দী হন এবং মহম্মদ শিরান নিজেকে বখতিয়ারের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন।
বাংলার আলি মর্দানের কুতুবউদ্দিনের সাহায্য লাভ
আলি মর্দান কারাগার থেকে পালিয়ে দিল্লীতে সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবকের দরবারে গিয়ে তার সাহায্য ভিক্ষা করেন। কুতুবউদ্দিন আলি মর্দানের প্রতি প্রসন্ন হয়ে কায়েমাজ রুমী নামে এক সেনাপতিকে বাংলা আক্রমণের নির্দেশ দেন।
দিল্লি সুলতানি থেকে রুমীর বাংলা অভিযান
কায়েমাজ রুমী বাংলায় এসে খলজি আমীরদের নিজ পক্ষে আনেন এবং মহম্মদ শিরান খলজিকে পরাস্ত করেন। যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পালাবার সময় স্বপক্ষের লোকেদের হাতে মহম্মদ শিরান নিহত হন।
হসামুদ্দিন খলজি কর্তৃক বাংলার শাসনভার গ্রহণ
কায়েমাজ বাংলার শাসনভার গাঙ্গুরীর জায়গীরদার হসামুদ্দিন খলজির হাতে দিয়ে দিল্লী ফিরে যান।
বাংলার শাসনকর্তা আলি মর্দান
আলি মর্দান খলজি দিল্লী থেকে কুতুবউদ্দিনের সঙ্গে গজনী অভিযানে গিয়ে বন্দী হন। কিছুদিন পরে মুক্তি পেয়ে দিল্লী ফিরে এলে কুতুবউদ্দিন তাকেই বাংলার শাসনকর্তা নিয়োগ করেন।
বাংলায় আলি মর্দানের শাসনকাল
আলি মর্দান বাংলায় এলে হসামুদ্দিন খলজি পদত্যাগ করে সিংহাসন আলি মর্দানকে ছেড়ে দেন। ১২১০-১২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আলি মর্দান বাংলা শাসন করেন।
বাংলার সুলতান আলি মর্দানের স্বাধীনতা ঘোষণা
কুতবউদ্দিনের মৃত্যুর পর আলি মর্দান নিজেকে বাংলার স্বাধীন সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন এবং আলাউদ্দিন নাম নেন। আলি মর্দান খুবই অত্যাচারী শাসক ছিলেন। তিনি বহু প্রতিদ্বন্দ্বী খলজি আমীরকে হত্যা করেন।
বাংলার সুলতান আলি মর্দানের হত্যা
শেষ পর্যন্ত খলজি আমীররা জোট বেঁধে আলি মর্দানকে হত্যা করেন এবং পদত্যাগী হসামুদ্দিন খলজিকে পুনরায় সুলতান হিসেবে নির্বাচন করেন।
গিয়াসুদ্দিন আইওয়াজ কর্তৃক বাংলার শাসনভর গ্রহণ
হসামুদ্দিন খলজি সিংহাসনে বসার পর গিয়াসুদ্দিন আইওয়াজ খলজি নাম গ্ৰহণ করেন। তিনি ১২১২-১২২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করেন।
বাংলায় গিয়াসুদ্দিনের রাজত্বকালের গুরুত্ব
- (১) গিয়াসুদ্দিন আইওয়াজের রাজত্বকাল নানাদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি নিজেকে বাংলার স্বাধীন সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন এবং বাগদাদের খলিফার কাছ থেকে ফরমান লাভ করেন। তাঁর মুদ্রাগুলিতে খলিফার নাম পাওয়া যায়।
- (২) তিনি যাতায়াতের সুবিধার জন্য কয়েকটি সড়ক তৈরি করেন। তার মধ্যে দেবকোট থেকে রাজনগর (বীরভূম) পর্যন্ত সড়কটি প্রসিদ্ধ।
বাংলার সুলতান গিয়াসুদ্দিনের শাসনব্যবস্থা
গিয়াসুদ্দিন তাঁর রাজধানীতে সামরিক বাহিনীর প্রভাব নষ্ট করার জন্য রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন স্থানে তাদের শিবির স্থাপন করে থাকতে বাধ্য করেন। তিনি বসনকোটের দুর্গ নির্মাণ করেন।
বাংলার সুলতান গিয়াসুদ্দিনের রাজ্য বিস্তার
গিয়াসুদ্দিন গৌড় নগরীতে রাজধানী স্থাপন করেন। তিনি তাঁর রাজ্যসীমা চারদিকে প্রসারিত করেন। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে, বিহারে ও কামরূপে তিনি রাজ্য বিস্তার করেন। এইভাবে পূর্ব ভারতে একটি স্বাধীন সুলতানি স্থাপিত হয়।
বাংলার সুলতান গিয়াসুদ্দিনের দিল্লীর বশ্যতা স্বীকার
- (১) গিয়াসুদ্দিন আইওয়াজ খলজীর স্বাধীন আচরণ ও ক্ষমতা বৃদ্ধি দিল্লীর সুলতান ইলতুৎমিস তার স্বার্থের বিরোধী মনে করতেন। ১২২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি গিয়াসুদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযান পরিচালনা করেন।
- (২) গিয়াসুদ্দিন শেষ পর্যন্ত এক সন্ধি স্বাক্ষর করেন। গিয়াসুদ্দিন দিল্লীর বশ্যতা স্বীকার করে বাংলার শাসনভার পান এবং বিহারের শাসনভার ইজুদ্দীন জানি নামে এক ব্যক্তিকে দেওয়া হয়।
বাংলার সুলতান গিয়াসুদ্দিনের বিদ্রোহ
ইলতুৎমিস দিল্লীতে ফিরে গেলে গিয়াসুদ্দিন সন্ধি ভেঙে বিহার অধিকার করেন। এর পর ইলতুৎমিস তাঁর পুত্র নাসিরুদ্দিন মহম্মদের নেতৃত্বে এক বাহিনী বাংলায় পাঠান।
উপসংহার :- সুলতান বাহিনীর সাথে যুদ্ধে গিয়াসুদ্দিন পরাজিত ও বন্দী হন। তাকে হত্যা করা হয়। এর পর বাংলায় দিল্লী সুলতানির শাসন স্থাপিত হয়।
(FAQ) বাংলায় দিল্লি সুলতানির আধিপত্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ইলতুৎমিস।
১২২৫ সালে।
ইজুদ্দিন মহম্মদ শিরান খলজি ও আলি মর্দান খলজি।
আলি মর্দান খলজি।