ইলিয়াস শাহী শাসনের পূর্বে বাংলার অবস্থা

ইলিয়াস শাহী শাসনের পূর্বে বাংলার অবস্থা প্রসঙ্গে উপাদান, ফকরুদ্দিনের বিদ্রোহ ঘোষণা, ফখরুদ্দিনকে আক্রমণ, লখনৌতির শাসকপদ শূন্য, ফকরুদ্দিন মুবারক শাহের পুনরায় ক্ষমতা দখল, আলাউদ্দিন আলি শাহ, ইবন বতুতার বাংলা ভ্রমণ, ইলিয়াস শাহের পূর্ব বাংলা অধিকার সম্পর্কে জানবো।

ইলিয়াস শাহী শাসনের পূর্বে বাংলার অবস্থা

বিষয়ইলিয়াস শাহী শাসনের পূর্বে বাংলার অবস্থা
উপাদানতারিখ-ই-ফিরোজশাহী
স্বাধীন অধিপতিফকরুদ্দিন মুবারক শাহ
লখনৌতিআলি মুবারক
ইলিয়াস শাহী শাসনের পূর্বে বাংলার অবস্থা

ভূমিকা :- মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বের শেষ দিকে তাঁর সাম্রাজ্যের নানাস্থানে বিদ্রোহ দেখা দিলে সুলতানি শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে।

উপাদান

জিয়াউদ্দিন বরণীর তারিখ-ই-ফিরোজ শাহী থেকে ইলিয়াস শাহের উত্থানের পূর্বে বাংলার অবস্থা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।

ফকরুদ্দিনের বিদ্রোহ ঘোষণা

এই সময় পূর্ব বাংলায় সুলতানি সরকারের অনুগত শাসক তাতার খানের মৃত্যু হয়। তাতারের মৃত্যুর পর তার অনুচর ফকরুদ্দিন মুবারক শাহ নিজেকে সোনারগাঁওয়ের স্বাধীন অধিপতি বলে ঘোষণা করেন।

ফকরুদ্দিনকে আক্রমণ

কিন্তু লখনৌতি ও সাতগাঁওয়ে কদর খান ও ইজউদ্দীন ছিলেন দিল্লীর প্রতি অনুগত। তারা ফকরুদ্দিনকে আক্রমণ করে বিতাড়িত করেন। ফদ্দিন আত্মরক্ষার জন্যে পালিয়ে যান।

লখনৌতির শাসকপদ শূন্য

কিন্তু ফকরুদ্দিনের এই পরাজয় ছিল সাময়িক। কদর খানের সেনাদল বিদ্রোহী হয়ে তাকে হত্যা করলে লখনৌতির শাসকের পদ শূন্য হয়। মহম্মদ তুঘলক অন্যত্র বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত থাকায় বাংলায় কোন প্রশাসক পাঠাতে পারেন নি।

ফকরুদ্দিন মুবারক শাহের পুনরায় ক্ষমতা দখল

এই সুযোগে ফকরুদ্দিন সোনারগাঁও বা পূর্ব বাংলায় পুনরায় ক্ষমতা অধিকার করেন। তিনি ফকরুদ্দিন মুবারক শাহ উপাধি গ্ৰহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম জয় করেন। চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত তিনি এক বাঁধ তৈরি করেন। তার আমলে চট্টগ্রামে ইসলামীয় সংস্কৃতির বিস্তার হয়। চট্টগ্রামে বহু মসজিদ, খানকা স্থাপিত হয়।

আলাউদ্দিন আলি শাহ

আলি মুবারক নামে কদর খানের এক অনুচর লখনৌতির সিংহাসন অধিকার করেন। তিনি আলাউদ্দিন আলি শাহ উপাধি নেন।

ইবন বতুতার বাংলা ভ্রমণ

  • (১) ফকরুদ্দিন মুবারক শাহের শাসনকালে ইবন বতুতা বাংলাদেশে আসেন। শ্রীহট্টের বিখ্যাত সুফী দরবেশ সেখ জালালউদ্দিন তাব্রিজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ছিল তার উদ্দেশ্য।
  • (২) তিনি সাতগাঁও থেকে নৌকা যোগে জলপথে শ্রীহট্ট যান এবং পরে সোনারগাঁও থেকে সমুদ্রপথে জাভায় চলে যান। এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ইবন বতুতা যে কথা লিখেছেন, তা থেকে সমকালীন বাংলার অবস্থা মোটামুটি জানা যায়।
  • (৩) ইবন বতুতার মতে, ফকরুদ্দিনের সঙ্গে আলাউদ্দিন আলি শাহের অবিরাম যুদ্ধ-বিগ্রহ চলত। এর ফলে বাংলায় রাজনৈতিক শান্তি ব্যাহত হয়। ফকরুদ্দিন তার নৌবহর নিয়ে বর্ষাকালে এবং আলাউদ্দিন তার স্থলসেনা নিয়ে শীতকালে আক্রমণ চালাতেন।

সাধু, সন্তদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান

ফকরুদ্দিন মুসলিম দরবেশ, সাধু, সন্তদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিতেন। তারা পূর্ব বাংলায় বিনা ভাড়ায় নৌকায় যাতায়াত করতেন এবং বিনামূল্যে খাদ্য পেতেন। বাংলাদেশে এই সকল ফকিররা ধর্ম প্রচার করতেন।

কর ব্যবস্থা

এই সময় বাংলাদেশে জিনিষপত্রের দাম সস্তা ছিল। কম দামে দাস-দাসী পাওয়া যেত। ফকরুদ্দিন মুবারক শাহ প্রজাদের ওপর অতিরিক্ত কর চাপাতেন। ফসলের অর্ধাংশ ও আরও নানা কর তারা দেন। ইবন বতুতা গ্রাম বাংলার শান্ত জীবন ও সবুজ গাছপালা দেখে অভিভূত হন।

ইলিয়াস শাহের পূর্ব বাংলা অধিকার

ফকরুদ্দিন মুবারক শাহ ১৩৩৮-১৩৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তারপর পূর্ব বাংলায়, ইখতিয়ারউদ্দিন গাজী শাহ ১৩৫০-৫২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। ১৩৫২ বা ১৩৫৩ খ্রিস্টাব্দে ইলিয়াস শাহ পূর্ব বাংলা অধিকার করেন।

লখনৌতির সিংহাসন

কদর খানের মৃত্যুর পর আলাউদ্দিন আলি শাহ লখনৌতির সিংহাসন অধিকার করেন। আলাউদ্দিন সামান্য দিন রাজত্ব করেন।

উপসংহার :- আলাউদ্দিন আলি শাহের পর তাঁর সম্পর্কিত ভ্রাতা শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ লখনৌতির সিংহাসন (১৩৪২ খ্রি) অধিকার করেন। আলাউদ্দিন আলি শাহ সম্ভবত পান্ডুয়ায় তাঁর রাজধানী স্থানান্তর করেন।

(FAQ) ইলিয়াস শাহী শাসনের পূর্বে বাংলার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. আলাউদ্দিন আলি শাহ কোথায় রাজধানী স্থানান্তর করেন?

পাণ্ডুয়ায়।

২. কার শাসনকালে ইবন বতুতা বাংলা ভ্রমণে আসেন?

ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ।

৩. ইলিয়াস শাহ কখন পূর্ব বাংলা অধিকার করেন?

১৩৫২-৫৩ খ্রিস্টাব্দে।

৪. কোন রাজার শাসনকালে বাংলায় জিনিসপত্রের দাম সস্তা ছিল?

ফকরুদ্দিন মুবারক শাহ।

Leave a Comment