ঢাকা সম্মেলন

ঢাকা সম্মেলন প্রসঙ্গে সম্মেলনের প্রেক্ষাপট, সম্মেলনে আয়োজন, সম্মেলনে মুসলিম সংগঠন স্থাপনের আবেদন, ঢাকা সম্মেলনে গৃহীত মুসলিম সংগঠনের উদ্দেশ্য ও সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিদের উপলব্ধি সম্পর্কে জানবো।

ঢাকা সম্মেলন

ঐতিহাসিক ঘটনাঢাকা সম্মেলন
সময়কাল১৯০৬ খ্রি:
স্থানঢাকা
ঢাকার নবাবসলিম উল্লাহ
ফলাফলমুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা
ঢাকা সম্মেলন

ভূমিকা :- আলীগড় আন্দোলন বিভিন্ন সংগঠন ও সভাসমিতির মাধ্যমে ভারত-এর বিভিন্ন অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ পায়। এই আন্দোলনের পূর্বে সর্বভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো সংগঠন তৈরি করার চেষ্টা করা হয় নি।

ঢাকা সম্মেলনের প্রেক্ষাপট

১৯০৬ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা সম্মেলনের প্রেক্ষাপট ছিল নিম্নরূপ –

(১) মুসলিমদের ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিশেষ কোন যোগাযোগও ছিল না। বিশেষতঃ ইংরেজ বিদ্বেষী মনোভাবের জন্য মুসলিম সম্প্রদায় পাশ্চাত্য শিক্ষা ও চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচিত হতেও কোনো প্রকার আগ্রহ প্রকাশ করে নি।

(২) কেন্দ্রীয় মুসলিম সংগঠন প্রতিষ্ঠায় সৈয়দ আহমেদ খানের অনীহা

স্যার সৈয়দ আহমেদ খানও কোনো কেন্দ্রীয় মুসলিম সংগঠনের প্রয়োজন উপলব্ধি করেন নি। ব্রিটিশ সরকারের ন্যায়পরায়ণতা ও শাসননীতির উপর তাঁর প্রচণ্ড বিশ্বাস ছিল এবং তিনি রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারের নিকট থেকে সুযোগ-সুবিধা আদায়ের পরিবর্তে আনুগত্যের মাধ্যমে সুযোগ লাভের পক্ষপাতী ছিলেন। আলীগড় কলেজের অধ্যক্ষ মরিসনের প্রভাবে তিনি চিরদিনই ব্রিটিশ বিদ্বেষী আন্দোলনের প্রতি বিমুখ ছিলেন।

(৩) সৈয়দ আহমেদের পরামর্শদাতাদের ধারণা

স্যার সৈয়দ আহমেদের পরামর্শদাতাগণ সম্পূর্ণ অন্য কারণে তাঁদের এই মতের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। কারণ তাঁদের ধারণা ছিল যে মুসলিমদেরও কোনো কেন্দ্রীয় সংগঠন গড়ে উঠলে অল্পদিনের মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায় ব্রিটিশ শাসকবিরোধী হয়ে উঠবে এবং জাতীয় কংগ্রেসের পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজনৈতিক আন্দোলনের সূচনা করবে।

(৪) তরুণ মুসলিমদের মনোভাব

তরুণ মুসলিম নেতৃবৃন্দকে স্যার সৈয়দ আহমেদ অথবা মহসীন-উল-মূলকের নির্ধারিত পথ চিরদিনের জন্য অনুসরণ করবে একথা বিশ্বাস করা সম্ভব ছিল না।

(৪) পূর্বসূরির নীতি গ্রহণ

১৮১৮ খ্রীস্টাব্দে স্যার সৈয়দ আহমেদের মৃত্যুর পর মহসীন উল-মূলক আলীগড় কলেজের সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং অত্যন্ত যত্ন ও অধ্যবসায় সহকারে তাঁর পূর্বসূরীর নীতি অনুসরণ করেন।

(৫) কেন্দ্রীয় মুসলিম সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা

স্যার সৈয়দ আহমেদ, মহসীন-উল-মূলক এবং তাঁদের অনুগামীদের দ্বারা পরিচালিত আলিগড় আন্দোলন কোনো দিনই কেন্দ্রীয় মুসলিম সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা করেন নি।

(৬) বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সক্রিয় আন্দোলন

১৯০৫-০৬ খ্রীস্টাব্দে ভারতের রাজনীতিতে এক বিরাট পরিবর্তন দেখা দেয়। লর্ড কার্জনের আমলে বঙ্গভঙ্গের ফলে বাংলাদেশ তথা সর্বভারতীয় হিন্দু সম্প্রদারের মধ্যে এক বিরাট রাজনৈতিক আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। জাতীয় কংগ্রেস এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত হয়ে পড়ে।

(৭) ব্রিটিশ সরকারের কেন্দ্রীয় মুসলিম সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা

বঙ্গভঙ্গের পক্ষে আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়োজন ব্রিটিশ সরকার গভীরভাবে উপলব্ধি করে। সুতরাং জাতীয় কংগ্রেস ও হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন প্রতিবাদ করার জন্য ব্রিটিশ সরকার একটি কেন্দ্রীয় মুসলিম সংগঠন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়।

(৮) মুসলিমদের কেন্দ্রীয় সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি

এই সময় ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের সংস্কার সাধনের প্রয়োজন অনুভূত হওয়ায় ব্রিটিশ সরকার মুসলিমদের সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে বিশেষ কতগুলো সুযোগ দিতে সম্মত হয়। সুতরাং মুসলিম নেতৃবর্গও তাঁদের দাবি-দাওয়া সরকারের কাছে পেশ করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন।

(৯) সিমলা সাক্ষাৎকার

ইতিমধ্যে সিমলায় আগা খানের নেতৃত্বে মুসলিম নেতৃবর্গ ভাইসরয় লর্ড মিন্টোর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষায় ব্রিটিশ সরকারের আগ্রহ প্রকাশে সন্তুষ্ট হন।

ঢাকা সম্মেলনের আয়োজন

সিমলা সাক্ষাৎকারের কিছুদিন পরেই ঢাকা শহরে মহমেডান এডুকেশনাল কনফারেন্স আহূত হয় এবং ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু মুসলমান প্রতিনিধি এই সভায় যোগ দেন।

ঢাকা সম্মেলনে মুসলিম সংগঠন স্থাপনের আবেদন

বঙ্গভঙ্গের উদ্যোক্তা লর্ড কার্জনের অন্যতম প্রিয়পাত্র ঢাকার নবাব সলিম উল্লাহ সমবেত প্রতিনিধিদের কাছে একটি কেন্দ্রীয় মুসলিম সংগঠন স্থাপনের জন্য আবেদন করেন।

ঢাকা সম্মেলনে গৃহীত মুসলিম সংগঠনের উদ্দেশ্য

নবাব সলিম উল্লাহর মতে এই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য হবে মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষা করা।

ঢাকা সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিদের উপলব্ধি

তরুণ মুসলিম নেতৃবৃন্দকে জাতীয় কংগ্রেসের প্রভাব থেকে দূরে রাখার জন্যই এইরূপ একটি সংগঠনের প্রয়োজন ঢাকা সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিগণ বিশেষভাবে উপলব্ধি করেন।

উপসংহার :- এই ঢাকা সম্মেলনেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলার জন্য মুসলিম প্রতিনিধিবর্গ সম্মত হন এবং ঐ সম্মেলনেই ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে ডিসেম্বর সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা হয়।

(FAQ) ঢাকা সম্মেলন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ঢাকা সম্মেলন কখন অনুষ্ঠিত হয়?

১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে।

২. ঢাকা সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রধান কে ছিলেন?

সলিম উল্লাহ।

৩. কোন সম্মেলনে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়?

ঢাকা সম্মেলনে।

৪. মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা হয় কখন?

৩০ ডিসেম্বর, ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Comment