চোল স্বায়ত্ব শাসন ব্যবস্থা

চোল স্বায়ত্ব শাসন ব্যবস্থা প্রসঙ্গে স্বাধীন গ্ৰামীণ শাসন, গ্ৰাম সভা, উর, দায়িত্ব, সাধারণ সভা, সমিতি, মহাসভার দায়িত্ব, নগরম ও নাত্তার সম্পর্কে জানবো।

চোল স্বায়ত্ব শাসন ব্যবস্থা

ঐতিহাসিক ঘটনাচোল স্বায়ত্ব শাসন ব্যবস্থা
বংশচোল বংশ
রাজধানীতাঞ্জোর
প্রথম রাজাবিজয়ালয়
শ্রেষ্ঠ রাজাপ্রথম রাজেন্দ্র চোল
শেষ শ্রেষ্ঠ রাজাপ্রথম কুলোত্তুঙ্গ
চোল স্বায়ত্ব শাসন ব্যবস্থা

ভূমিকা :- চোল রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভিত্তি ছিল গ্রাম। গ্রামে তখনকার যুগে এক অসাধারণ স্বায়ত্ত শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। গ্রাম শাসনের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীরা পরামর্শদাতা বা দর্শক হিসেবেই থাকত। তারা গ্রামের স্বায়ত্ত শাসনের ব্যাপারে হাত দিত না।

স্বাধীন চোল গ্ৰামীণ শাসন

  • (১) চোল গ্রামীণ শাসন এতই স্বাধীন ছিল যে, রাজধানীতে রাজার পরিবর্তন হলেও গ্রামশাসন তার নিজ নিয়মে চলত। উপরতলার ওঠা-পড়ার প্রভাব তাকে স্পর্শ করত না। গ্রামসভাগুলিই প্রধানত গ্রামের শাসন চালাত। গ্রামের শাসনের জন্য বিভিন্ন ধরনের সভা ছিল।
  • (২) গ্রামগুলিকে কয়েকটি এলাকায় ভাগ করা হত এবং প্রতি এলাকায় স্থানীয় সভা ছিল। এই সভায় বিভিন্ন বৃত্তির লোকেদের প্রতিনিধি থাকত। এই বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে গ্রাম সভা সমন্বয় স্থাপন করত। গ্রামে বিভিন্ন গোষ্ঠী ছিল এবং প্রতি গোষ্ঠীর বিশেষ ধরনের কাজের দায়িত্ব ছিল।
  • (৩) গোষ্ঠীগুলি সামাজিক ও ধর্মীয় ভিত্তিতে গঠিত হত। গোষ্ঠীগুলি যে বিষয়ে দায়িত্ব বহন করত সেই কাজ ঠিকমত হচ্ছে কিনা তা দেখাশোনার জন্য প্রতি গোষ্ঠীর সমিতি থাকত। গোষ্ঠী বিফল হলে সমিতি হস্তক্ষেপ করত। গ্রামের সাধারণ সভায় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষেরা যোগ দিতে পারত।

চোল গ্ৰাম সভা

সাধারণ সভা তিন প্রকারের ছিল, যথা –

  • (১) কর দাতা গ্রামবাসীদের সভার নাম ছিল উর,
  • (২) ব্রাহ্মণদের সভার নাম ছিল সভা,
  • (৩) আধা শহর অঞ্চলের বণিকদের সভার নাম ছিল ‘নগরম’। বড় গ্রামগুলিতে একাধিক করদাতাদের সভা বা ‘উর’ থাকত।

চোল যুগে উর

  • (১) গ্রামের সকল প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ছিল উরের সদস্য। তবে বর্ষীয়ানরাই সভার কাজকে নিয়ন্ত্রণ করত। উর বা সাধারণ সভাগুলির সদস্য সংখ্যা কত হত তা জানা যায় নি। তারা নির্বাচিত হত অথবা গ্রামবাসী হিসেবে যোগ দিত অথবা পরিবারের কর্তারাই যোগ দিত তাও জানা যায়নি।
  • (২) তবে গ্রামের প্রতি কুড়ুম্বু বা পাড়া থেকে প্রতিনিধি দ্বারা উর গঠিত হত। কখনও কখনও একটি গ্রামে দুটি উর থাকত। প্রতি উরে একটি শাসন পরিচালনা বিভাগ থাকত। গ্রামের মাথা-পিছু খাজনা ধার্য, আদায়, বাঁধ তৈরি, খাল খননের সিদ্ধান্ত প্রভৃতি গ্রাম সভা বা উরে নেওয়া হত। গ্রামের লোকেদের বিবাদ-বিসম্বাদের নিষ্পত্তি উরে করা হত।

চোল সভা

  • (১) সভা ছিল প্রধানত ব্রাহ্মণ গ্রামগুলির সংগঠন। চোল যুগে অগ্রহার, ঘেটিকা স্থাপন, মন্দির স্থাপন প্রভৃতি ব্যাপকভাবে করা হত। ফলে রাজারা ব্রাহ্মণদের ব্যাপক ভূমিদান করতেন এবং বহু গ্রামে ব্রাহ্মণের বসবাস বৃদ্ধি পায়।
  • (২) ব্রাহ্মণরা তাদের গ্রামসভাকে সভ্য নাম দেয়। অনেক গ্রামে উর ও সভা পাশাপাশি কাজ করত। গ্রামের আদি বাসিন্দা বা অব্রাহ্মণরা উরে যোগ দিত ও ব্রাহ্মণেরা সভায় যোগ দিত।

দায়িত্ব

উর বা সভা বা নগরম তাদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব সরকারের বিনা হস্তক্ষেপে পালন করত। কিন্তু যদি তারা তাদের সংবিধান পরিবর্তন করত অথবা ভূমি স্বত্বের নিয়ম বদলাত তাহলে রাজকীয় অনুমোদনের দরকার হত। এজন্য কেন্দ্রের দায়িত্বশীল কর্মচারীকে সভায় হাজির হতে হত।

চোল সাধারণ সভা

গ্রামের সাধারণ সভা বিভিন্ন সমিতি বা উর ও ব্রাহ্মণ সভা নিয়ে গঠিত ছিল। এ সম্পর্কে চিঙ্গেলপুট ও উত্তরমেরু লিপি থেকে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। ৯১৯ ও ৯২১ খ্রিস্টাব্দে এই দুই লিপি প্রথম পরান্তক খোদাই করেন। এর মধ্যে উত্তর মেরু লিপিই তথ্যবহুল।

চোল সমিতি

  • (১) উত্তর মেরু লিপি থেকে জানা যায় যে, বিভিন্ন কুড়ম্ব বা পাড়া থেকে সমিতি গঠনের জন্য যোগ্য লোকদের মনোনীত করা হত। যোগ্যতার মাপকাঠি ছিল বেশ উঁচু, যথা, নিজের বাড়ি, ৩৫-৭০ বছর বয়স, শাস্ত্রজ্ঞান, কিছু জমির মালিকানা প্রভৃতি না থাকলে নির্বাচিত হওয়া যেত না।
  • (২) নৈতিক চরিত্র নির্মল না হলে, সমিতির টাকা-কড়ি আগে তছরূপ না করলে, পরদ্রব্য অপহরণের অপবাদ না থাকলে তবে প্রার্থী হিসেবে যোগ্য মনে করা হত। প্রতি পাড়া থেকে মনোনীত ব্যক্তিদের একজনকে ভাগ্য পরীক্ষার দ্বারা বেছে নেওয়া হত। তারপর এই সদস্যের দ্বারা উদ্যান সমিতি, পুষ্করিণী সমিতি, স্বর্ণ সমিতি প্রভৃতি গড়া হত।

চোল মহাসভার দায়িত্ব

এই সভা বা মহা সভা গ্রাম সম্প্রদায় ও ব্যক্তির জমির উপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে পারত। এই সভা গ্রামবাসীদের প্রদেয় রাজস্ব নির্ধারণ ও আদায়ে সাহায্য করত। অন্য কোনো কাজের জন্য আলাদা কর এই সভা স্থাপন করত। জলসেচ ও পথঘাট রক্ষার দায়িত্ব ছিল এই সভার। রাজস্ব আদায় করে সরকারের কাছে এই সভা জমা দিত।

চোল নগরম

  • (১) আধা গ্রাম আধা শহরের বণিক সভা ছিল নগরম। কাজের দিক থেকে উর বা সভার মতই নগরম দায়িত্ব বইত। কেউ কেউ বলেন যে, নগরম ছিল বণিকদের নিগম বা গিল্ড। এই নিগমগুলি উৎপন্ন শিল্পদ্রব্য কিনে তা অন্যত্র বণ্টন করত।
  • (২) এই নিগমগুলি লোকের টাকা-কড়ি জমা রাখত এবং আধুনিক ব্যাঙ্কের মত সেই টাকা চড়া সুদে বণিকদের ঋণ দিত। রাজা ও কর্মচারীরাও তাদের সঞ্চিত অর্থ এই নিগমে জমা রাখতেন।

চোল নাত্তার

নাড়ুগুলিতেও একটি করে সভা ছিল। তার নাম ছিল “নাত্তার”। ভূমি-রাজস্ব সংগঠন ও বিচার ব্যবস্থা পরিচালনায় এই সভাগুলি ভূমিকা নিত। নাত্তার কিভাবে গঠিত হত তা সঠিক জানা যায়নি। নাত্তার বা সভা বা উরগুলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট দ্বারা সিদ্ধান্ত গৃহীত হত কিনা তা জানা যায়নি। তবে সাধারণ আলোচনার পর সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হত।

উপসংহার :- গ্রাম সভায় মধ্যস্থ ও করণত্তার নামে দুই ধরণের কর্মচারী হাজির থাকত। শেষোক্ত কর্মচারী ছিল হিসাব পরীক্ষক। প্রথম জন নিরপেক্ষভাবে বিবাদ ও ঝগড়ার মীমাংসা করত, জমির সীমা সঠিক রক্ষা এবং ন্যায় নীতি অনুসারে যাতে কাজ কর্ম হয় সেজন্য সাহায্য করত।

(FAQ) চোল স্বায়ত্ব শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. চোলদের প্রথম রাজা কে ছিলেন?

বিজয়ালয়।

২. চোলদের শ্রেষ্ঠ রাজা কে ছিলেন?

প্রথম রাজেন্দ্র চোল।

৩. চোলদের শেষ শ্রেষ্ঠ রাজা কে ছিলেন?

প্রথম কুলোত্তুঙ্গ।

৪. চোলদের শেষ রাজা কে ছিলেন?

তৃতীয় রাজেন্দ্র।

৫। চোলদেল রাজধানী কোথায় ছিল?

তাঞ্জোর।

Leave a Comment