বৌদ্ধ ধর্মসাহিত্য

বৌদ্ধ ধর্মসাহিত্য প্রসঙ্গে ত্রিপিটক, ধর্মশাস্ত্র গ্ৰন্থের সংস্কার, চূড়ান্ত রূপদানের চেষ্টা, বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলির প্রামাণ্য টীকাভাষ্য সংকলন ও বৌদ্ধ ধর্ম সাহিত্য জাতক সম্পর্কে জানবো।

বৌদ্ধ ধর্মসাহিত্য

ঐতিহাসিক বিষয়বৌদ্ধ ধর্মসাহিত্য
বৌদ্ধ ধর্মগৌতম বুদ্ধ
বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থত্রিপিটক
বুদ্ধের পূর্ব জন্মের কাহিনীজাতক
বৌদ্ধ ধর্মসাহিত্য

ভূমিকা :- বুদ্ধের পরিনির্বাণ লাভের অল্প কালের মধ্যেই তাঁর প্রধান শিষ্যগণ বিহারের অন্তর্গত রাজগৃহ নগরে এক সাধারণ সভায় সমবেত হয়ে তার উপদেশাবলীর এক পূর্ণাঙ্গ ও প্রামাণিক সংকলন লিপিবদ্ধ করেন। কিন্তু মনে হয়, আরও দুই-এক শতাব্দী অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত বৌদ্ধ ধর্মসাহিত্য তার বর্তমান রূপ লাভ করে নি।

বৌদ্ধ ধর্মসাহিত্য ত্রিপিটক

এই সাহিত্য সামগ্রিকভাবে ‘ত্রিপিটক’, অর্থাৎ তিন পেটিকার সমাহার বলে পরিচিত। এর অংশ গুলি হল –

(১) বিনয় পিটক

প্রথম অংশের নাম বিনয় পিটক। এতে বৌদ্ধ ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীদের পক্ষে পালনীয় নিয়মাবলী এবং বৌদ্ধ বিহারসমূহের সাধারণ পরিচালন রীতি বর্ণিত হয়েছে।

(২) সূত্ত পিটক

দ্বিতীয় অংশের নাম সূত্ত (সূত্র) পিটক। এতে বুদ্ধের ধর্মোপদেশসমূহ সংকলিত হয়েছে।

(৩) অভিধম্ম পিটক

তৃতীয় অংশের নাম অভিধম্ম (অভিধর্ম) পিটক এতে বৌদ্ধ ধর্মের অন্তর্নিহিত দর্শনের আলোচনা ও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।

বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্র গ্ৰন্থের সংস্কার

বুদ্ধের নির্বাণের প্রায় এক শতাব্দী পরে বিহারের অন্তর্গত বৈশালী নগরে দ্বিতীয় বৌদ্ধ সংগীতি বা সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় বৌদ্ধধর্মের প্রচলিত কয়েকটি বৌদ্ধধর্ম বিরোধী মতবাদের নিন্দা করা হয় এবং শাস্ত্রগ্রন্থ গুলির সংস্কার করা হয়।

বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্র গ্ৰন্থের চূড়ান্ত রূপদানের চেষ্টা

সম্রাট অশোক-এর উদ্যোগে তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতি অধিবেশন হয় পাটলিপুত্র নগরে। এই অধিবেশনেও কয়েকটি বিরুদ্ধ মতের নিন্দা করা হয় এবং শাস্ত্রগুলিকে যথাযথ চূড়ান্ত রূপদানের চেষ্টা হয়।

বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলির প্রামাণ্য টীকাভাষ্য সংকলন

চতুর্থ ও শেষ সংগীতির অধিবেশন হয় কনিষ্ক-এর উদ্যোগে কাশ্মীরে অথবা পাঞ্জাবের অন্তর্গত জলন্ধরে। এই অধিবেশনে বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলির প্রামাণ্য টীকাভাষ্য সংকলিত হয়। এই সময়েই মহাযান বৌদ্ধ ধর্মমতের উদ্ভব হয়। এটি বৌদ্ধধর্মের একটি পরিবর্তিত রূপ। বৌদ্ধধর্মের আদি রূপ ‘হীনযান’ নামে পরিচিত হয়।

বৌদ্ধ ধর্মসাহিত্য জাতক

বৌদ্ধ ধর্মসাহিত্যের আলোচনা প্রসঙ্গে ‘জাতক’ গুলির কথা উল্লেখ করা যায়। জাতকগুলির বিষয়বস্তু হল বুদ্ধের পূর্ব জন্মের কাহিনী। এগুলি পালি ভাষায় রচিত এবং নিশ্চিতভাবে খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় ও প্রথম শতাব্দীর পূর্বের রচনা। ভক্তিমান বৌদ্ধদের নিকট জাতকের বিশেষ মূল্য আছে।

উপসংহার :- প্রাচীন ভারত-ইতিহাসের অনুশীলনকারীদের পক্ষে জাতকের গল্পগুলি বিশেষ অনুধাবনযোগ্য। কারণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা সম্বন্ধে জাতক থেকে অনেক মুল্যবান তথ্য সংগ্রহ করা যায়।

(FAQ) বৌদ্ধ ধর্মসাহিত্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বৌদ্ধদের ধর্মগ্ৰন্থের নাম কি?

ত্রিপিটক।

২. ত্রিপিটকের কয়টি ভাগ ও কি কি?

তিনটি, বিনয় পিটক, সূত্ত পিটক ও অভিধম্ম পিটক।

৩. তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতি কার আমলে অনুষ্ঠিত হয়?

সম্রাট অশোক।

৪. গৌতম বুদ্ধের পূর্ব জন্মের কাহিনী জানা যায় কোন গ্ৰন্থ থেকে?

জাতক।

Leave a Comment