ভারতে ব্রিটিশ মুসলিম সম্পর্ক প্রসঙ্গে মুসলিম ও ব্রিটিশ পরস্পরের শত্রু, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে হিন্দুদের সহযোগিতা, বাংলা-বিহারের কৃষক বিদ্রোহের ব্যর্থতা, মুসলিমদের আপসহীন শত্রু ব্রিটিশ, ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদে মুসলিমদের সর্বশক্তি নিয়োগ ও মেয়োর মন্তব্য সম্পর্কে জানবো।
ভারতে ব্রিটিশ মুসলিম সম্পর্ক
ঐতিহাসিক ঘটনা | ব্রিটিশ মুসলিম সম্পর্ক |
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত | ১৭৯৩ খ্রি: |
ব্রিটিশ ও মুসলিম | পরস্পরের শত্রু |
জমিদার | হিন্দু |
কৃষক | মুসলিম |
ভূমিকা :- ব্রিটিশ শাসকগণ ভারত-এ যে শাসন ও শোষণ-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করে প্রথম ভাগে তার প্রধান শিকার হয়েছিল সংখ্যাধিক মুসলমান চাষী।
মুসলিম ও ব্রিটিশ পরস্পরের শত্রু
ব্রিটিশ শক্তি প্রধানত মুসলমান শাসকদের কাছ থেকেই এদেশের শাসন ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল। তাই ব্রিটিশ শক্তি প্রথমে মুসলমানদের শত্রু বলে গণ্য করেছিল। অন্যদিকে মুসলমানগণও একই কারণে ব্রিটিশ শাসনের শুরু থেকে দ্বীর্ঘকাল পর্যন্ত এই বিদেশী শাসকগোষ্ঠীর সাথে অসহযোগিতা ও বিরোধিতা করেছিল।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে হিন্দুদের সহযোগিতা
১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে যখন ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ প্রবর্তিত হয়, তখন প্রধানত হিন্দুরাই ব্রিটিশ শাসকদের সাথে সহযোগিতা করে এবং প্রায় সকল জমিদারি হিন্দুদের হস্তগত হয়। এর ফলে বঙ্গদেশ, বিহার ও উড়িষ্যার প্রায় সকল জমিদারই হিন্দু, আর তাদের অধীনস্থ চাষীদের অধিকাংশই মুসলমান।
বাংলা-বিহারের কৃষক বিদ্রোহের ব্যর্থতা
সেই সময় থেকে বরাবর ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী, জমিদার, মহাজন ও অন্যান্য প্রতিক্রিয়াশীলগণ এই অবস্থার সুযোগ গ্রহণ করে বঙ্গদেশ ও বিহারের সকল কৃষক-বিদ্রোহকে ‘সাম্প্রদায়িক’ আখ্যা দিয়েছে এবং তাকে হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদারিক বিরোধে পরিণত করবার প্রয়াস চালিয়ে গেছে। তার ফলে বহু কৃষক বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়ে গেছে।
মুসলিমদের আপসহীন শত্রু ব্রিটিশ
বৈদেশিক ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ভারতবর্ষের মুসলমানদের হাত থেকেই ভারত সাম্রাজ্য ও তার রাজনীতির ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল। তাই ব্রিটিশ শাসনের পর থেকে দীর্ঘ একশ বছরকাল মুসলমানগণ এই বিদেশীদের আপসহীন শত্রুরূপে গ্রহণ করেছিল।
ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদে মুসলিমদের সর্বশক্তি নিয়োগ
ভারতবর্ষে মুসলমান কৃষকই হিন্দুদের অপেক্ষা অধিক বিদ্রোহ করেছিল, তারাই ভারতবর্ষের মাটি থেকে ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদের জন্য সকল প্রকারে চেষ্টা এবং সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল।
মুসলমানদের শান্ত করতে ও তাদের সহযোগিতা লাভ করিতে ব্যর্থ হয়ে ভারতের বড়লাট লর্ড মেয়ো হতাশাব্যঞ্জক খেদোক্তি করেছিলেন যে, “মহারানীর (ভিক্টোরিয়ার) বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাই কি ভারতীয় মুসলমান ধর্মের অনুশাসন?”
মুসলিম ধর্মের অনুশাসন
লর্ড মেয়োর এই খেদোক্তি সম্পূর্ণ সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল। যে বিদেশী শাসকগোষ্ঠী মুসলমানদের হাত থেকে ভারতবর্ষের বিশাল সাম্রাজ্য ও রাজনীতিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে মুসলমানগণ তাদের ধর্মের অনুশাসন হিসাবেই গ্রহণ করেছিল।
উপসংহার :- ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ‘ওয়াহাবি আন্দোলন‘-এর যে আগুন সারা ভারতময় ছড়িয়ে পড়ে ভারতের ব্রিটিশ শাসন নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে উদ্যত হয়েছিল, তাও প্রথমে মুসলমানদের “ধর্মের অনুশাসন” হিসাবেই শুরু হয়েছিল এবং পরে তা ব্রিটিশ-বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জমিদার-মহাজন বিরোধী শ্রেণী-সংগ্রামে পরিণত হয়।
(FAQ) ভারতে ব্রিটিশ মুসলিম সম্পর্ক সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
মুসলিম।
১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে।
হিন্দু জমিদার।