বাবরের প্রথম জীবন

মুঘল সম্রাট বাবরের প্রথম জীবন প্রসঙ্গে জন্ম, শৈশব ও শিক্ষা, সমরখন্দ জয়ের চেষ্টা, প্রথম ও দ্বিতীয় বার সমরখন্দ অভিযান, আক্রান্ত ফারঘানা, তৃতীয় বার সমরখন্দ অভিযান, আর্চিয়ানের যুদ্ধ, কাবুল জয়, পারস্যের শাহের সহায়তা ও বাবরের চূড়ান্ত পরাজয় সম্পর্কে জানবো।

মুঘল সম্রাট বাবরের প্রথম জীবন

ঐতিহাসিক ঘটনাবাবরের প্রথম জীবন
পিতাওমর শেখ মির্জা
জন্ম১৪৮৩ খ্রি
পৈতৃক রাজ্যফারঘানা
মুঘল সম্রাট বাবরের প্রথম জীবন

ভূমিকা :- ভারত-এ মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জাহিরুদ্দিন মহম্মদ বাবর ছিলেন পিতার দিক হতে দিগ্বিজয়ী তৈমুর লঙ্গের পঞ্চম পুরুষ এবং মাতার দিক হতে চেঙ্গিজ খাঁর চতুর্দশ পুরুষ।

তুর্কী বংশের অন্তর্গত বাবর

বাবর ও তার বংশধরদের মুঘল বলা হয়। মুঘল কথাটি মোঙ্গল থেকে এসেছে। বাবর কিন্তু মোঙ্গল ছিলেন না। তিনি ছিলেন ‘চাঘতাই তুর্কী’। বাবর তাঁর আত্মজীবনী বাবরনামাতে বলেছেন যে তুর্কীরা, মোঙ্গল হতে আলাদা। যাই হোক, ভারতবর্ষে তিনি ও তাঁর বংশধররা মুঘল বা মোগল নামে পরিচিত হন।

মুঘল সম্রাট বাবরের জন্ম

বাবরের জন্ম হয় ১৪৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারী মধ্য এশিয়ার ফারঘানা রাজ্যের অধিপতি ওমর শেখ মির্জার গৃহে।

জাহিরুদ্দিন মহম্মদ বাবরের শৈশব ও শিক্ষা

তিনি তুর্কী জাতিসুলভ যুদ্ধবিদ্যা, তীর ছোঁড়া, অশ্বারোহণ প্রভৃতি ভালভাবে আয়ত্ত করেন। বাবরের ১২ বছর বয়সে পিতৃবিয়োগ হলে তাঁর পৈত্রিক ফারঘানা রাজ্য তাঁর মাতুলরা গ্রাস করার চেষ্টা করলে বাবর অল্প বয়সেই তা নিবৃত্ত করেন। এই অল্প বয়স থেকে নানা বিপদ ও সঙ্কটের মধ্যেই বাবরের রাজনীতি শিক্ষা ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটে।

বাবরের সমরখন্দ জয়ের চেষ্টা

  • (১) বাল্যকাল থেকে বাবর ছিলেন ঘোর উচ্চাকাঙ্ক্ষী। পূর্বপুরুষ তৈমুরের আদর্শ অনুসরণ করে সমরখন্দ জয় করার বাসনা তাঁর মনে দৃঢ়ভাবে জেগে ওঠে। ১৪৯৬-১৫১২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সমরখন্দ জয়ের জন্য অন্তত ৫ বার তিনি চেষ্টা করেন।
  • (২) বাবরের জীবনের এই পর্যায়টি ভারত ইতিহাসের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত না হলেও এর পরোক্ষ প্রভাব ভারত ইতিহাসকে প্রভাবিত করে। সমরখন্দ জয়ে ব্যর্থ হয়ে বাবর ভারতের দিকে দৃষ্টি দেন। এর ফলে ভারত ইতিহাসে মুঘল যুগের সূচনা হয়।

জাহিরুদ্দিন মহম্মদ বাবরের প্রথম ও দ্বিতীয় বার সমরখন্দ অভিযান

মুঘল সম্রাট বাবর ১৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম সমরখন্দ জয়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু বরফপাত ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তাঁর এই অভিযান বিফল হয়। ১৪৯৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি পুনরায় সমরখন্দ অবরোধ করেন। কিন্তু তিনি সমরখন্দ দখলে ব্যর্থ হন।

বাবরের আমলে আক্রান্ত ফারঘানা

তিনি যখন সমরখন্দে ব্যস্ত থাকেন তখন তাঁর পৈত্রিক রাজ্য ফারঘানা আক্রান্ত হয়। বাবর বাধ্য হয়ে সমরখন্দ হতে চলে আসেন। কিন্তু ফারঘানার একাংশ বাবরের ভ্রাতা জাহাঙ্গীর মির্জা অধিকার করে নেন।

তৃতীয় বার বাবরের সমরখন্দ অভিযান

১৫০০ খ্রিস্টাব্দে বাবর তৃতীয় বার সমরখন্দ অভিযান করেন। তিনি অতর্কিত আক্রমণে সমরখন্দের দুর্গ অধিকার করেন। উজবেগী সর্দার শাহেবানী খাঁ সাময়িকভাবে সমরখন্দ হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু শীঘ্রই শারিপুলের যুদ্ধে তিনি বাবরকে পরাস্ত করেন।

বাবরের সময় আর্চিয়ানের যুদ্ধ

মুঘল সম্রাট বাবর পৈত্রিক রাজ্য ফারঘানাও হারান। তার ভ্রাতা জাহাঙ্গীর মির্জা গোটা ফারখানা দখল করে নেন। বাবর ফারঘানা পুনর্দখলের চেষ্টায় যখন ব্যস্ত ছিলেন সেই সময় (১৫০৩ খ্রি) শাহেবানী খাঁ তাকে আর্ডিয়ানের যুদ্ধে দারুণভাবে পরাস্ত করেন।

বাবরের কাবুল জয়

  • (১) রাজ্য হারা হয়ে বাবর যখন মধ্য এশিয়ায় ভাগ্যান্বেষণে রত ছিলেন, সেই সময় তাঁর দৃষ্টি আফগানিস্তান-এর দিকে পড়ে। এই সময় আফগান রাজধানী কাবুলে দারুণ অরাজকতা চলছিল। এই অরাজকতার সুযোগ নিয়ে ১৫০৪ খ্রিস্টাব্দে বাবর কাবুল দখল করে নেন।
  • (২) বাবর আফগানিস্থানের ‘পাদশাহ’ উপাধি নেন এবং শাসন সংস্কার করে কাবুলে তাঁর ক্ষমতাকে দৃঢ় করেন। তিনি ১৫০৭ খ্রিস্টাব্দে কান্দাহার অধিকার করে তাঁর আধিপত্য বিস্তার করেন।

পারস্যের শাহের বাবরকে সহায়তা

  • (১) ইতিমধ্যে উজবেগী সর্দার শাহেবানী খাঁর ক্ষমতা বৃদ্ধিতে পারস্যের শাহ ইসমাইল উৎকণ্ঠিত হন। তাঁর চিরশত্রু শাহেবানীর বিরুদ্ধে বাবর শাহ ইসমাইলকে সমর্থন জানান। ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে মার্ভের যুদ্ধে শাহ ইসমাইল, শাহেবানী খাঁকে পরাজিত ও নিহত করেন।
  • (২) বাবর পারস্যের শাহ ইসমাইলের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করে তাঁর সাহায্যে ১৫১১ খ্রিস্টাব্দে সমরখন্দ ও মধ্য এশিয়া জয় করেন। এর ফলে মধ্য এশিয়া হতে তাসখন্দ ও কাবুল পর্যন্ত ভূভাগ তার অধিকারভুক্ত হয়।

বাবরের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়া

জাহিরুদ্দিন মহম্মদ বাবরের এই বিজয় বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। তার মিত্র পারস্যের শাহ ইসমাইলের সঙ্গে বাবরের বিচ্ছেদ ঘটে। কারণ সুন্নী ধর্মাবলম্বী বাবর ও তার অনুগামীদের পক্ষে পারস্যের শিয়া শাহের আধিপত্য মানা সম্ভব ছিল না। এই বিচ্ছেদের ফলে বাবরের সামরিক ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়।

বাবরের চূড়ান্ত পরাজয়

উজবেগী সর্দাররা বাবরের দ্বারা পরাস্ত হওয়ার পর উবাইদ উল্লাহ খানের নেতৃত্বে পুনরায় সঙ্ঘবদ্ধ হয়। ১৫১২ খ্রিস্টাব্দে গাজদাওয়ানের যুদ্ধে উজবেগীরা শাহ ইসমাইল এবং বাবরকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে।

উপসংহার :- এরপর বাবর সমরখন্দ থেকে পিছু হঠে কাবুলে ফিরে আসতে বাধ্য হন। এইভাবে বাবরের জীবনের প্রথম অধ্যায় বা সমরখন্দ জয়ের অধ্যায় সমাপ্ত হয়।

(FAQ) মুঘল সম্রাট বাবরের প্রথম জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বাবরের পিতার নাম কি?

ওমর শেখ মির্জা।

২. বাবরের পৈতৃক রাজ্য কোথায় ছিল?

ফারঘানা।

৩. বাবর কোন স্থান বার বার দখল করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন?

সমরখন্দ।

৪. বাবর পারস্যের কোন শাসকের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন?

ইসমাইল।

Leave a Comment