আকবরের গুজরাট অভিযান

মুঘল সম্রাট আকবরের গুজরাট অভিযান প্রসঙ্গে অভিজাতদের বিরোধিতা, গুজরাটের সুলতান, মির্জা অভিজাত, পৈত্রিক রাজ্য পুনর্দখল, গুজরাট অভিযান, গুজরাট জয় সম্পূর্ণ, মুঘল সাম্রাজ্যের সুবা গুজরাট, গুজরাটি পুনরায় বিদ্রোহ ও গুজরাট জয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।

মুঘল সম্রাট আকবরের গুজরাট অভিযান

ঐতিহাসিক ঘটনাআকবরের গুজরাট অভিযান
সময়কাল১৫৭২ খ্রি
গুজরাট সুলতানতৃতীয় মুজাফ্ফর শাহ
মুঘল সম্রাটআকবর
সাম্রাজ্যমুঘল সাম্রাজ্য
মুঘল সম্রাট আকবরের গুজরাট অভিযান

ভূমিকা :- রাজপুতানা জয়ের পর আকবর গুজরাটের দিকে মুখ ফেরান। গুজরাটে সামন্ত অভিজাতরা ক্ষমতালোভী হওয়ায় দারুণ অরাজকতা দেখা দেয়।

গুজরাটে অভিজাতদের বিরোধিতা

উজীর ইতিমাদ খাঁ নিজের হাতে ক্রীড়নকদের সিংহাসনে বসিয়ে ক্ষমতা দখল করার চেষ্টা করায় অন্যান্য অভিজাতরা বিরোধিতা করে।

আকবরের অভিযানের সময় গুজরাটের সুলতান

গুজরাটের সুলতান তৃতীয় মুজাফ্ফর শাহ ছিলেন এক অপদার্থ শাসক। তিনি অরাজকতা ও অন্তর্দ্বন্দ্ব দমন করতে অপারগ হন।

আকবরের বিরুদ্ধে মির্জা অভিজাত

মোঘল সম্রাট আকবরের বিদ্রোহী মীর্জা উপাধিধারী অভিজাতরা আকবর দ্বারা পরাজিত হলে গুজরাটে আশ্রয় নেয়। আকবর আশঙ্কা করেন যে, তারা গুজরাট থেকে আকবরের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে।

আকবরের পৈতৃক রাজ্য পুনর্দখল

গুজরাটের ওপর আগে হুমায়ুন অধিকার স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু গুজরাটের সুলতানরা মুঘলের নিকট সেই বশ্যতার শর্ত পালন না করায় আকবর তার পৈত্রিক রাজ্য পুনর্দখল করা উচিত বলে মনে করেন।

বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের কারনে আকবরের গুজরাট অভিযান

গুজরাটের বন্দরগুলি থেকে পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপ-এর সঙ্গে বাণিজ্য চলত। আকবর স্বভাবত গুজরাটের মত সমৃদ্ধিশালী অঞ্চল অধিকার করে, গুজরাটের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন।

আকবরের গুজরাট অভিযান

ইতিমধ্যে উজীর ইতিমাদ খাঁ গুজরাটে অরাজকতা দমনে অপারগ হয়ে আকবরের সাহায্য চান। ১৫৭২ খ্রিস্টাব্দে আকবর গুজরাট অভিযান করেন। আকবরের নেতৃত্বে মুঘল বাহিনী ১১ দিনে ৪৫০ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে আমেদাবাদ অধিকার করে।

আকবরের গুজরাট জয় সম্পূর্ণ

আকবর বিদ্রোহী মীর্জাদের যুদ্ধে পরাস্ত ও বন্দী করেন। আকবর ক্যাম্বে বন্দরে এলে পর্তুগীজ ও অন্যান্য বিদেশী বণিকরা তাঁর প্রতি বন্যতা জানায়। ১৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি সুরাট অধিকার করে গুজরাট জয় সম্পূর্ণ করেন।

মুঘল সাম্রাজ্যের সুবা গুজরাট

তিনি গুজরাটকে মুঘল সাম্রাজ্যের একটি সুবায় পরিণত করেন। মীর্জা আজিজ কোকা গুজরাটের শাসনকর্তার পদে নিযুক্ত হন।

আকবরের প্রত্যাগমনে গুজরাটে পুনরায় বিদ্রোহ

আকবর ফতেপুর সিক্রীতে ফিরে আসার পর গুজরাটে পুনরায় বিদ্রোহ দেখা দেয়। মুঘল সেনাপতি মীর্জা আজিজ কোকা আমেদাবাদে কার্যত অবরুদ্ধ হন। আকবর সিক্রী থেকে বাহিনী নিয়ে ১১ দিনে আমেদাবাদ চলে আসেন। তীব্র সংগ্রামের পর তিনি বিদ্রোহীদের নির্মূল করেন। গুজরাট স্বায়ীভাবে মুঘল সুবায় পরিণত হয়।

আকবরের গুজরাট জয়ের গুরুত্ব

  • (১) ভিনসেন্ট স্মিথ গুজরাট জয়কে আকবরের রাজত্বকালের এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলেছেন। এই জয়ের ফলে মুঘল সাম্রাজ্য পশ্চিমে সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং গুজরাটের বিখ্যাত বন্দরগুলি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
  • (২) দিল্লী অঞ্চলের বাণিজ্য গুজরাটের বন্দরগুলির সঙ্গে রাজপুতানার মধ্য দিয়ে যুক্ত হয়। মুঘল রাজকোষ গুজরাটের রাজস্ব ও বাণিজ্য শুল্কে স্ফীত হয়।

উপসংহার :- গুজরাট জয়ের ফলে দাক্ষিণাত্যের দিকে আকবরের দৃষ্টি পড়ে। টোডরমল গুজরাটে তাঁর রাজস্ব সংস্কারের প্রথম পরীক্ষা চালান।

(FAQ) মুঘল সম্রাট আকবরের গুজরাট অভিযান সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. আকবর কবে গুজরাট অভিযান করেন?

১৫৭২ খ্রিস্টাব্দে।

২. আকবরের অভিযানের সময় গুজরাটের সুলতান কে ছিলেন?

তৃতীয় মুজাফ্ফর শাহ।

৩. আকবর কত খ্রিস্টাব্দে গুজরাট জয় সম্পূর্ণ করেন?

১৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে।

৪. টোডরমল কোথায় তার রাজস্ব সংস্কারের প্রথম পরীক্ষা চালান?

গুজরাটে।

Leave a Comment