আকবরের সিংহাসন লাভ

আকবরের সিংহাসন লাভ প্রসঙ্গে জন্ম, প্রথম জীবন, শিক্ষা, গজনীর শাসনকর্তা, আকবরের নামে খুৎবা পাঠ, আকবরের অভিষেক, আকবরের অভিষেকের সাংবিধানিক তাৎপর্য, রাজনৈতিক গুরুত্ব, নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নয় ও আকবরের সার্বভৌম ক্ষমতার পথে বাধা সম্পর্কে জানবো।

আকবরের সিংহাসন লাভ

ঐতিহাসিক ঘটনাআকবরের সিংহাসন লাভ
সময়কাল১৫৫৬ খ্রি
সাম্রাজ্যমুঘল সাম্রাজ্য
প্রতিষ্ঠাতাবাবর
শ্রেষ্ঠআকবর
আকবরের সিংহাসন লাভ

ভূমিকা :- শেরশাহ-এর আক্রমণে হুমায়ুন যখন পলায়মান অবস্থায় ছিলেন সেই সময় অমরকোটের হিন্দু রাজা রণপ্রসাদের গৃহে হুমায়ুন আশ্রয় নেন।

আকবরের জন্ম

১৫ই অক্টোবর ১৫৪২ খ্রিস্টাব্দে অমরকোটে হুমায়ুনের পত্নী হামিদা বানু বেগমের গর্ভে আকবরের জন্ম হয়।

আকবরের প্রথম জীবন

জন্মের পর থেকেই আকবরকে ভাগ্যবিড়ম্বনার মধ্যে কাটাতে হয়। আকবরের কাকা আসকারি তাকে বাল্যকালে কিছুকাল লালন-পালন করেন। ১৫৪৫ খ্রিস্টাব্দে হুমায়ুন কান্দাহার দখল করে আসকারির হাত থেকে তাঁর পুত্র আকবরকে নিজের তত্ত্বাবধানে আনেন।

আকবরের শিক্ষা

হুমায়ুন তাঁর পুত্রের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করলেও আকবরের পুঁথিগত শিক্ষালাভের কোনো আগ্রহ ছিল না। তিনি অস্ত্রশিক্ষা, শিকার, খেলা, অশ্বারোহণে পটুত্ব দেখান।

গজনীর শাসনকর্তা আকবর

১৫৫১ খ্রিস্টাব্দে আকবরকে গজনীর শাসনকর্তা নিয়োগ করা হয় এবং এই সময় রোকেয়া বেগমের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। পরে আকবরকে পাঞ্জাবের শাসনকর্তা নিয়োগ করা হয়।

আকবরের নামে খুৎবা পাঠ

১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে ২৭শে জানুয়ারি দিল্লীতে হুমায়ুনের মৃত্যু হলে দিল্লীর মুঘল কর্মচারীরা হুমায়ুনের জোষ্ঠ পুত্র আকবরের নামে ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে খুৎবা পাঠ করেন।

আকবরের অভিষেক

পাঞ্জাবে আকবরের শিবিরে খুৎবা পাঠের খবর এলে, আকবরের অভিভাবক বৈরাম খাঁ আকবরের অভিষেক ঘোষণা করেন। আকবরের বয়স তখন ছিল ১৩ বছর ৪ মাস। এর পর আকবর দিল্লী অভিমুখে যাত্রা করেন।

আকবরের অভিষেকের সাংবিধানিক তাৎপর্য

সম্রাট আকবরের বিনা বাধায় সিংহাসনে অভিষেকের বিশেষ সাংবিধানিক তাৎপর্য ছিল। যেমন –

  • (১) ডঃ আর পি. ত্রিপাঠী মন্তব্য করেছেন যে, “আকবরই ছিলেন প্রথম অপ্রাপ্তবয়স্ক রাজা, যার সিংহাসনের দাবী নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা হয়নি।”
  • (২) তুর্কী সুলতানদের যুগে বংশানুক্রমিক অধিকারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হত না। অভিজাতরা উত্তরাধিকারীকে সিংহাসনে মনোনয়ন করত। সুলতানি যুগে উত্তরাধিকারী অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে তার পক্ষে নির্বিবাদে পিতৃসিংহাসন পাওয়া খুবই দুস্কর ছিল। কিন্তু আকবরের ক্ষেত্রে তার বিশেষ ব্যতিক্রম দেখা যায়।
  • (৩) আকবরের আমলে সিংহাসনে বংশানুক্রমিক উত্তরাধিকার নীতি এবং নাবালক উত্তরাধিকারীর সিংহাসনে নায্য অধিকার পাওয়ার নীতি গৃহীত হয়। বাবর এই ধারার সূত্রপাত করেন। কারণ বাবর নাবালক অবস্থাতেও পৈতৃক সিংহাসনের অধিকারী হন।
  • (৪) তৈমুর বংশে বংশানুক্রমিকভাবে সিংহাসন লাভের নিয়ম চালু ছিল। চেঙ্গিজ খাঁ তাঁর সিংহাসনের জন্য যে ঐশ্বরিক অধিকার দাবী করতেন, তৈমুর বংশও তাই করতেন। এজন্য এই বংশের বংশানুক্রমিক সিংহাসনের দাবীকে নস্যাৎ করার সাহস কেউ দেখায়নি। কাজেই আকবর প্রাপ্তবয়স্ক না হলেও বিনা বাধায় সিংহাসন পান।

আকবরের অভিষেকের রাজনৈতিক গুরুত্ব

  • (১) আকবরের বাদশাহ হিসেবে অভিষেকের সাংবিধানিক গুরুত্ব অপেক্ষা রাজনৈতিক গুরুত্ব কম নয়। হুমায়ুন যদিও আফগান শূর শক্তিকে পরাজিত করে দিল্লী ও পাঞ্জাব দখল করেন, সাধারণ ভারতবাসীর চোখে আফগানরাই ছিল তখনও পর্যন্ত ভারতীয়।
  • (২) হুমায়ুনকে অনেকটা বৈদেশিক আক্রমণকারী বলেই লোকে ভারত। হুমায়ুনের আধিপত্যের আইনগত ভিত্তি ছিল তখনও দুর্বল। আকবরের অভিষেক এই অনিশ্চয়তাকে দূর করে।

অভিষেকের ফলে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী আকবর নয়

১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে অভিষেকের ফলে আকবর নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পান একথা মনে করার কারণ নেই। তাকে রীতিমত যুদ্ধ, রক্তপাত দ্বারা ও মানসিক দৃঢ়তা দেখিয়ে তার অভিভাবক বৈরাম খাঁর হাত থেকে প্রকৃত ক্ষমতা নিতে হয়।

আকবরের সার্বভৌম ক্ষমতার পথে বাধা

অপ্রাপ্তবয়স্ক শাসকদের অভিভাবকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেরাই সর্বেসর্বা হন। বৈরাম খানের ক্ষেত্রেও এই নিয়মের অন্যথা হয় নি। বৈরামের পতনের পরও আকবর নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পান একথা বলা চলে না। তাকে বিভিন্ন বিদ্রোহী ও স্বাধিকার প্রমত্ত কর্মচারী, আফগান, উজবেগী বিদ্রোহীদের দমন করে ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে হয়।

উপসংহার :- ১৫৬১-১৫৬৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আকবরকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়। এই নীতির সফলতার পরেই আকবর প্রকৃত সার্বভৌম ক্ষমতা লাভ করেন।

(FAQ) আকবরের সিংহাসন লাভ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. আকবরের জন্ম কোথায় হয়?

অমরকোটে।

২. আকবরের সিংহাসনে অভিষেক হয় কখন?

১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে।

৩. আকবরের অভিভাবক কে ছিলেন?

বৈরাম খাঁ।

৪. কোথায় আকবরের নামে খুৎবা পাঠ করা হয়?

দিল্লিতে।

Leave a Comment