মহম্মদ বিন তুঘলকের খোরাসান অভিযানের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দুর্বলতা, সময়কাল, সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব, ত্রিশক্তি জোট গঠন, অভিযান পরিত্যক্ত, সেনাদল গঠন, সেনাদল ভঙ্গ ও ত্রিশক্তি জোটে ভাঙন সম্পর্কে জানবো।
মহম্মদ বিন তুঘলকের খোরাসান অভিযানের পরিকল্পনা
ঐতিহাসিক ঘটনা | মহম্মদ বিন তুঘলকের খোরাসান অভিযানের পরিকল্পনা |
সময়কাল | ১৩৩৩-৩৪ খ্রি: |
সুলতান | মহম্মদ বিন তুঘলক |
জোট গঠন | মোঙ্গল নেতা ও মিশর-এর সুলতান |
ফলাফল | অভিযান পরিত্যাগ |
ভূমিকা :- ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বরণীর মতে সুলতান মহম্মদের দরবারে মধ্য এশিয়া ও পশ্চিম এশিয়া থেকে বহু আমীর রাজনৈতিক আশ্রয় পায়। তারা সুলতানকে খোরাসান ও ইরাক জয়ের জন্য প্ররোচিত করে।
খোরাসানের রাজনৈতিক দুর্বলতা
এই সময় এই সব অঞ্চলে রাজনৈতিক দুর্বলতা দেখা দেওয়ায় মহম্মদ বিন তুঘলকও এরূপ অভিযানের যৌক্তিকতা অনুভব করেন।
মহম্মদ বিন তুঘলকের খোরাসান অভিযানের সময়কাল
বরণী খোরাসান অভিযানের প্রকৃত পটভূমি ও সন-তারিখ দেননি। যেহেতু খোরাসানের অধিপতি সৈয়দ খানের ১৩৩৫ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু হয়, সেহেতু এই পরিকল্পিত অভিযান ১৩৩৫ খ্রিস্টাব্দের আগে অর্থাৎ ১৩৩৩ খ্রিস্টাব্দে স্থির করা হয় বলা যায়।
মহম্মদ বিন তুঘলকের সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব
অন্যান্য সমকালীন সূত্র থেকে জানা যায় যে, সুলতান মহম্মদ নিজ সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের জন্যেই খোরাসান জয়ের ইচ্ছা পোষণ করতেন। মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া থেকে তাঁর দরবারে আগত আশ্রয়প্রার্থীরা সুলতানের উচ্চাকাঙ্খাকে খুঁচিয়ে তোলে।
খোরাসান অভিযানে ত্রিশক্তি জোট গঠন
মহম্মদ তার এই পরিকল্পনা কার্যকরী করার জন্য মিশরের সুলতান এবং মধ্য এশিয়া বা অক্ষু অঞ্চলের মোঙ্গল অধিপতি তরমাশিরিনের সঙ্গে ত্রিশক্তি জোট গড়েন। বরণী সন্দেহ করেন যে এই জোট গড়ার জন্য মহম্মদ মোঙ্গল নেতা তরমাশিরিনকে মোটা অর্থ দেন।
মহম্মদ বিন তুঘলকের খোরাসান অভিযান পরিত্যক্ত
মহম্মদের পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত কার্যকরী হয় নি। বরণী এই অভিযান পরিত্যাগের কারণ দেখান নি। ইবন বতুতা খোরাসান অভিযানের কথা উল্লেখ করেন নি। এর থেকে মনে করা যায় যে অভিযানটি পরিত্যক্ত হয়।
মহম্মদ বিন তুঘলকের খোরাসান অভিযানে সেনাদল গঠন
- (১) বরণীর বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, সুলতান এই অভিযানের জন্য ৩ লক্ষ ৭০ হাজার সৈন্য, তাদের জন্য ঘোড়া ও অস্ত্র-শস্ত্র ক্রয় করেন। এই সেনাদল ছিল তাঁর স্থায়ী নিয়মিত সেনার অতিরিক্ত।
- (২) এই সেনাদলে শুধু মুসলিম সেনা ছিল না। রাজপুত ও অন্যান্য হিন্দুরাও ছিল। খুব কম সময়ের মধ্যে এত বড় সেনাদল যোগাড়ের অর্থ ছিল যে, এই সকল লোক যোগাড়ের জন্য সুলতান প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন।
মহম্মদ বিন তুঘলকের খোরাসান অভিযানের সেনাদল ভঙ্গ
এক বছর এই বিশাল সেনাদলকে বসিয়ে রাখার পর মহম্মদ এই অভিযানের পরিকল্পনা ত্যাগ করেন। তিনি সেনাদল ভেঙ্গে দেন। বরণী সুলতানের এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণ বলেন নি।
খোরাসান অভিযানের ত্রিশক্তি জোটে ভাঙন
আধুনিক গবেষকদের মতে খোরাসানের খানের বিরুদ্ধে মহম্মদ যে ত্রিশক্তি জোট গড়েন তা ভেঙ্গে গেলে, মহম্মদ উদ্যম হারান। মোঙ্গল নেতা তরমাশিরিনের মৃত্যু এবং মিশরের সুলতানের সঙ্গে পারস্য বা খোরাসানের শাসকের মিত্রতার ফলে, মহম্মদ বুঝতে পারেন যে একা তাঁর পক্ষে খোরাসান জয় করা সম্ভব হবে না। কাজেই তিনি এই পরিকল্পনা ত্যাগ করেন।
উপসংহার :- বরণী মন্তব্য করেছেন যে, মহম্মদের এই অবাস্তব পরিকল্পনার জন্য রাজকোষের প্রচুর অর্থ নষ্ট হয়। সুলতানের খামখেয়ালের জন্য লোকে তাঁর সমালোচনা করে। যে সকল সেনাকে বরখাস্ত করা হয় তাঁরা প্রচুর গণ্ডগোল সৃষ্টি করে।
(FAQ) মহম্মদ বিন তুঘলকের খোরাসান অভিযানের পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
মহম্মদ বিন তুঘলক।
মোঙ্গল নেতা ও মিশরের সুলতানের সঙ্গে।
জিয়াউদ্দিন বরনী।