ইতিহাসে যুগের ধারণা প্রসঙ্গে আর্কিওজোয়িক যুগ, প্রোটেরোজোয়িক যুগ, পুরাজীবীয় যুগ, মধ্যজীবীয় যুগ, নবজীবীয় যুগ ও তার বিভাগ, প্লেইস্টোসিন যুগের বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব ও হোলোসিন যুগ সম্পর্কে জানবো।
যুগের ধারণা প্রসঙ্গে ইতিহাসে যুগ বিভাজন, ইতিহাসে আর্কিওজোয়িক যুগ, ইতিহাসে প্রোটেরোজোয়িক যুগ, ইতিহাসে পুরাজীবীয় যুগ, ইতিহাসে মধ্যজীবীয় যুগ, ইতিহাসে নবজীবীয় যুগ, ইতিহাসে প্লেইস্টোসিন যুগ ও ইতিহাসে হোলোসিন যুগ সম্পর্কে জানব।
ইতিহাসে যুগের ধারণা
ঐতিহাসিক ঘটনা | ইতিহাসে যুগের ধারণা |
প্রথম যুগ | আর্কিওজোয়িক যুগ |
শেষ যুগ | নবজীবীয় যুগ |
মানুষের আবির্ভাব | প্লেইস্টোসিন যুগ |
হোমো স্যাপিয়েন্স | আধুনিক মানুষ |
ভূমিকা :- পৃথিবীর গঠনগত চরিত্র ও প্রাণের বিকাশের দিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও পণ্ডিতগণ পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে শুরু করে বর্তমান কাল পর্যন্ত সময়কালকে বিভিন্ন যুগে ভাগ করে আলোচনা করেন।
ইতিহাসে যুগ বিভাজন
স্মরণাতীত অতীত থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ইতিহাসকে বিভিন্ন যুগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন –
(১) আর্কিওজোয়িক যুগ
সৃষ্টির পর পৃথিবীতে সর্বপ্রথম যে যুগের সূচনা হয় তার নাম দেওয়া হয়েছে আর্কিওজোয়িক যুগ। এই যুগের সময়কাল পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে শুরু হয়ে আজ থেকে অন্তত ৮২ কোটি বছর আগে শেষ হয়।
(২) প্রোটেরোজোয়িক যুগ
আর্কিওজোয়িক যুগের পর পৃথিবীতে প্রোটেরোজোয়িক যুগ এসেছিল। এই যুগ আজ থেকে ৮২ কোটি বছর আগে শুরু হয় এবং আজ থেকে ৫০ কোটি বছর আগে শেষ হয়।
(৩) পুরাজীবীয় যুগ
প্রোটেরোজোয়িক যুগের পর পৃথিবীতে পুরাজীবীয় বা প্যালিওজোয়িক যুগ শুরু হয়েছিল। এই যুগ শুরু হয় আজ থেকে ৫০ কোটি বছর আগে এবং শেষ হয় আজ থেকে ২০ কোটি বছর আগে।
(৪) মধ্যজীবীয় যুগ
পুরাজীবীয় যুগের পর আজ থেকে ২০ কোটি বছর আগে মধ্যজীবীয় বা মেসোজোয়িক যুগের সূচনা হয়। এই যুগের সমাপ্তি ঘটে আজ থেকে প্রায় ৬ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগে।
(৫) নবজীবীয় যুগ
মধ্যজীবীয় যুগের অবসানের পর পৃথিবীতে আসে নবজীবীয় বা সেনোজোয়িক যুগ। আজ থেকে ৬ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগে শুরু হয়ে এই যুগ বর্তমান কাল পর্যন্ত চলছে।
নবজীবীয় যুগের বিভাগ
এই নবজীবীয় যুগকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা –
(১) টারসিয়ারি যুগ
টারসিয়ারি যুগ আজ থেকে প্রায় ৬ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগে শুরু হয় এবং ২০ লক্ষ বছর আগে শেষ হয়। এই যুগে ভূপ্রকৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে এবং পৃথিবীতে বিভিন্ন পর্বত ও অন্যান্য প্রাকৃতিক গঠনগুলি সম্পূর্ণ হয়। এই পর্বে মানব প্রজাতির বিভিন্ন প্রাইমেট (অর্থাৎ মানুষের সাধারণ পূর্বপুরুষ)-এর আবির্ভাব ঘটেছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
(২) কোয়াটারনারি যুগ
কোয়াটারনারি যুগ আজ থেকে প্রায় ২০ লক্ষ বছর আগে শুরু হয়ে বর্তমান কাল পর্যন্ত চলছে।
প্লেইস্টোসিন যুগ
এই প্লেইস্টোসিন যুগের শুরু হয় আজ থেকে প্রায় ২০ লক্ষ বছর পূর্বে এবং শেষ হয় আজ থেকে প্রায় ১৫ থেকে ১০ হাজার বছর পূর্বে। মানবসভ্যতার বিবর্তনের ক্ষেত্রে এই যুগের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই যুগের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) বৈশিষ্ট্য
প্লেইস্টোসিন যুগের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
(১) তুষার যুগ
প্লেইস্টোসিন যুগের বেশির ভাগ সময় জুড়ে তীব্র শীতল যুগের অস্তিত্ব ছিল। এই সময় পৃথিবীর উপরিভাগ ক্রমে শীতল হয়ে পৃথিবীতে তুষার যুগের আবির্ভাব ঘটে। তুষার যুগে পৃথিবীর বৃহদংশ বরফের চাদরে ঢাকা পড়ে যায়। প্রায় সমগ্র উত্তর গোলার্ধ বরফের নীচে ঢাকা পড়ে যায়। আজ থেকে অন্তত ১০ হাজার বছর পূর্বে তুষার যুগ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে।
(২) উষ্ণ ও শীতল যুগ
প্লেইস্টোসিন যুগে বারংবার আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে। এই যুগে পৃথিবীতে পর্যায়ক্রমে কয়েকবার উষ্ণ ও শীতল যুগ আসে। মোট চারবার তুষার যুগের আবির্ভাব ঘটে এবং প্রতি দুটি তুষার যুগের মধ্যবর্তী সময়ে উষ্ণ যুগের আবির্ভাব ঘটে।
(৩) প্রজাতির বিলুপ্তি
প্লেইস্টোসিন যুগে পর্যায়ক্রমিক আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে বেশ কিছু প্রাণী-প্রজাতি পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে না পেরে চিরকালের মতো বিলুপ্ত হয়ে যায়। ম্যামথ, ধীর গতির বিশালাকার বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং বিশালাকার পাখির বিলুপ্তি ঘটে। যেসব প্রজাতি নতুন প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হয় তারা বেঁচে থাকে।
(৪) ভূগঠনের পরিবর্তন
প্লেইস্টোসিন যুগে পৃথিবীতে ব্যাপক ভূগাঠনিক পরিবর্তন ঘটে। বিভিন্ন মহাদেশীয় ভূখণ্ডগুলি ধীর সঞ্চরণের মাধ্যমে দীর্ঘকাল পর বর্তমান কালের অবস্থায় এসে পৌঁছোয়। এই সময় মাটির বর্তমান গঠন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়। ঘন ঘন তুষার যুগ ফিরে আসায় এই সময় সমুদ্রের জলস্তরের উচ্চতা নীচে নেমে যায়।
(৫) পরিযান
প্লেইস্টোসিন যুগে বরফের চাদরের আবরণে পৃথিবীর বৃহদংশ ঢেকে যায়। সমুদ্রের জলও বরফে পরিণত হয়। ফলে স্থল ও জলভাগের মধ্যে সংযোগ গড়ে ওঠে। এই সুযোগে স্থলভাগের পশু ও মানুষের পক্ষে বরফের সমুদ্র অতিক্রম করে দূরদূরান্তে পাড়ি দেওয়া ও পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া সম্ভব হয়।
(৬) আধুনিক মানুষের আবির্ভাব
প্লেইস্টোসিন যুগের বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষের বিবর্তনের বিভিন্ন জীবাশ্মগুলি পাওয়া গেছে। এই যুগের শেষদিকে হোমো স্যাপিয়েন্স অর্থাৎ আধুনিক মানুষের উদ্ভব ঘটে।
(খ) প্লেস্টোসিন যুগের গুরুত্ব
মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও সমাজ গড়ার সূচনাপর্ব ছিল এই প্লেইস্টোসিন যুগ। এই যুগে মানুষের অভিবাসন প্রক্রিয়ায় গতি আসে। মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার ও যন্ত্রপাতি তৈরি করে। এই পর্বেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ ও তার প্রথম অংশ প্রাচীন প্রস্তর যুগ-এর অস্তিত্ত্ব ছিল।
হোলোসিন যুগ
পৃথিবীতে হোলোসিন যুগের শুরু হয় আজ থেকে প্রায় ১০ হাজার বছর পূর্বে এবং এখনও এই যুগ চলছে। এই যুগের প্রথমদিকের কোনো লিপির আবিষ্কার হয় নি। ফলে এই সময়ের ইতিহাস জানার জন্য জীবাশ্ম, সেই সময়কার মানুষের গুহাচিত্র, হাতিয়ার, ব্যবহার্য সামগ্রী প্রভৃতির ওপর নির্ভর করতে হয়। মধ্য প্রস্তর যুগ, নব্য প্রস্তর যুগ, তাম্র প্রস্তর যুগ, ব্রোঞ্জ যুগ, নগর সভ্যতার সূচনা সবই এই পর্বের অন্তর্গত।
উপসংহার :- নবজীবীয় যুগের পূর্বে মানুষ বা তার পূর্বসুরি কোনো প্রজাতির (প্রাইমেট) অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় নি। নবজীবীয় পর্ব থেকে মানুষের পূর্বসুরি প্রজাতির অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই মানব ইতিহাসের চর্চা নবজীবীয় পর্ব থেকেই শুরু হয়ে থাকে।
(FAQ) ইতিহাসে যুগের ধারণা হতে জিজ্ঞাস্য?
আর্কিওজোয়িক যুগ।
নবজীবীয় যুগ।
নবজীবীয় যুগ থেকে।
কোয়াটারনারি যুগে।
প্লেইস্টোসিন যুগের শেষ দিকে।