করাচী কংগ্রেস প্রসঙ্গে সীতারামাইয়ার মন্তব্য, করাচীতে গান্ধীজীর বিরোধী মিছিল, কংগ্রেসের প্রস্তাব গ্ৰহণ, কংগ্রেসের সংশোধনী প্রস্তাব, রাজনৈতিক প্রস্তাব, কংগ্রেসের প্রস্তাবের বিষয়সমূহ, কংগ্রেসের কৃষি কর্মসূচি ও কংগ্রেসের নেতাদের চরম গণতান্ত্রিক নীতিকে মান্যতা দেওয়া সম্পর্কে জানবো।
করাচী কংগ্রেস
ঐতিহাসিক ঘটনা | করাচী কংগ্রেস |
সময়কাল | ১৯৩১ খ্রি: |
স্থান | করাচী |
সভাপতি | বল্লভ ভাই প্যাটেল |
ভূমিকা :- লাহোরের পরে করাচীতে প্রথম কংগ্রেস অধিবেশন বসল ২৯ মার্চ ভগৎ সিং-এর ফাঁসির ছয় দিন পরে।
সীতারামাইয়ার মন্তব্য
কংগ্রেসের নিজস্ব ঐতিহাসিক পট্টভি সীতারামাইয়ার কথায়, “সেই মুহূর্তে ভগৎ সিং-এর নাম গান্ধীজির নামের মতোই সারা ভারতে সুপরিচিত ও জনপ্রিয়”।
করাচীতে গান্ধীজীর বিরোধী মিছিল
মহাত্মা গান্ধী যখন করাচীতে পৌঁছলেন তাঁর বিরোধিতা করে মিছিল বেরিয়েছিল।
করাচী কংগ্রেসের প্রস্তাব গ্ৰহণ
কংগ্রেসে গ্রহণের জন্য একটি প্রস্তাব রাখা হয় যাতে সন্ত্রাসবাদীদের আত্মত্যাগ ও সাহসিকতার প্রশংসা করা হয়। কংগ্রেসের অহিংসবাদীদের কাছে এই প্রস্তাব মনঃপূত হয় নি, গান্ধীজি এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন একটি সংশোধন-এর মধ্যে যোগ করার পরে।
করাচী কংগ্রেসের সংশোধনী প্রস্তাব
সংশোধনের পরে প্রস্তাব হল “যদিও কংগ্রেসের নীতি সমস্ত প্রকারের হিংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখা এবং এই সব সমর্থন না করা, তবুও সে দেশপ্রেমীদের সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ প্রশংসচিত্তে স্মরণ করে।”
যুবগোষ্ঠী কর্তৃক করাচী কংগ্রেসের সংশোধনী প্রস্তাবের বিরোধিতা
সুভাষচন্দ্র বসুর সমর্থনে কংগ্রেসের যুবগোষ্ঠী এই সংশোধনের বিরোধিতা করেন। খুব অল্প ভোটের জন্য তাঁদের বিরোধিতা সফল হয় নি।
করাচী কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রস্তাব
সাধারণভাবে করাচী কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রস্তাব মাদ্রাজ ও কলকাতা অধিবেশনের আপসমূলক মনোভাবেরই অনুগামী। এক দিকে এই অধিবেশনে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানানো হল এবং অন্য দিকে গান্ধী-আরউইন চুক্তি, যার দ্বারা সংগ্রামের পুনর্বিবেচনার পথ খোলা হল।
করাচী কংগ্রেসের পর উৎসাহের জোয়ারে ভাটা
স্বাভাবিকভাবে, ১৯৩০ সালের জানুয়ারি মাসে যে উৎসাহের জোয়ার এসেছিল তাতে ভাটা পড়ল। এই অবস্থায় স্বাধীনতা সংগ্রামে জনসাধারণের সহযোগিতার সম্ভাবনা খুব একটা থাকল না। পরবর্তী পথ ঠিক করার দায়িত্বও নেতাদের উপরই ন্যস্ত হল।
পরবর্তী পর্যায়ের সূচক করাচী কংগ্রেস
এক দিক থেকে অবশ্য করাচী কংগ্রেস ১৯৩০ সালের জানুয়ারির পরবর্তী পর্যায়ের সূচনা করে। এতে মৌলিক অধিকার ও আর্থিক নীতির একটি প্রস্তাব গৃহীত এবং স্থির হয় যে তার উপর ভিত্তি করে কংগ্রেসের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচী গঠিত হবে। এর আগে এ সম্পর্কে পরিষ্কার ভাবে কোনো প্রস্তাব গৃহীত হয় নি।
করাচী কংগ্রেসের প্রস্তাবের বিষয়সমূহ
এই প্রস্তাবের প্রধান বিষয়গুলি হল –
- (১) জনসাধারণের মৌলিক অধিকার রক্ষার আশ্বাস দেওয়া হয়।
- (২) জাতিগত ও ধর্মগত অক্ষমতা দূর করা।
- (৩) প্রাদেশিক ভাষাগুলির উন্নতিসাধন ও ভাষাভিত্তিক প্রদেশ পুনর্গঠন ।
- (৪) কর হ্রাসকরণ।
- (৫) অনুন্নত অঞ্চলে এবং দেশীয় রাজ্যসমূহে প্রচলিত বেগার বা বাধ্যতামূলক বৃত্তিহীন শ্রম রদ করা।
- (৬) লবণের কর উচ্ছেদ।
- (৭) শ্রমিকের বিশেষ অধিকার (যেমন কাজের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, ন্যূনতম বেতন, ছুটির ব্যবস্থা, কাজের সুব্যবস্থা) রক্ষা করা।
করাচী কংগ্রেসে কৃষি কর্মসূচি
কৃষি-কর্মসূচী প্রণয়নের কাজেও কংগ্রেস হাত দেয়। করাচী কংগ্রেস অবশ্য আধা-সামন্ততান্ত্রিক ভূস্বামীদের হাত থেকে তাঁদের বড়ো বড়ো জমিদারি কেড়ে নেওয়ার দাবি তুলতে পারেন নি।
করাচী কংগ্রেসের নেতাদের চরম গণতান্ত্রিক নীতিকে মান্যতা
- (১) বিভিন্ন কর্মসূচী প্রণয়নের এই প্রবণতা থেকে বোঝা যায় যে ১৯৩০-এর রাজনীতিতে বামপন্থী বিপ্লবীদের পরাজয়ের ইঙ্গিত দেখা গেলেও নেতাদের অন্তত কিছু কিছু ক্ষেত্রে চরম গণতান্ত্রিক নীতি মেনে নিতে হয়েছিল।
- (২) আগের চার বছরের গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে এছাড়া তাঁদের উপায়ও ছিল না। স্বাধীনতা সংগ্রামের পরবর্তী বছরগুলিতেও জাতীয় নেতাদের এই গণতন্ত্রের নীতিকেই অনুসরণ করতে হয়।
উপসংহার :- আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সকল দ্বন্দ্বের নিরসন ঘটিয়ে করাচী কংগ্রেসে গান্ধীজির নীতি জয়লাভ করে ঠিকই কিন্তু, একই সঙ্গে, কংগ্রেসী কর্মসূচীতে এখন থেকে যে চরম সমাজতান্ত্রিক নীতির প্রাধান্য দেখা যায় তারও শুরু করাচী কংগ্রেসেই।
(FAQ) করাচী কংগ্রেস সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে।
বল্লভভাই প্যাটেল।
করাচী কংগ্রেসে।