তৈমুর লঙের ভারত আক্রমণ প্রসঙ্গে তৈমুরের রাজ্য জয়, বিখ্যাত সমরনেতা, ঐতিহাসিক উপাদান, ভারত অভিযানের লক্ষ্য, ভারতের অপরিমিত সম্পদের লোভ, পাঞ্জাব লুন্ঠন, দিল্লির সুলতানের পলায়ন, দিল্লি লুন্ঠন ও গণহত্যা ও ফলাফল সম্পর্কে জানবো।
তৈমুর লঙের ভারত আক্রমণ
ঐতিহাসিক ঘটনা | তৈমুর লঙের ভারত আক্রমণ |
নেতা | তৈমুর লঙ |
রাজ্য | সমরখন্দ |
আত্মজীবনী | তুজুক-ই-তৈমুরী |
ভারত আক্রমণ | ১৩৯৮ খ্রি. |
দিল্লীর সুলতান | নাসিরউদ্দিন মহম্মদ শাহ |
ভূমিকা :- তুঘলক বংশ-এর শেষ সুলতান নাসিরুদ্দিন মহম্মদ শাহের রাজত্বকালে তৈমুর লঙ ভারত আক্রমণ করে। তার উদ্দেশ্য ছিল ব্যাপক লুন্ঠন।
তৈমুর লঙের পরিচয়
মধ্য এশিয়ার সমরখন্দে ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে তৈমুরলঙ্গের জন্ম হয়। তাঁর পিতা আমীর তার্ঘি ছিলেন চাঘতাই তুর্কী গোষ্ঠীর লোক। আমীর তার্ঘি সমরখন্দের কেচ অঞ্চলের অধিপতি ছিলেন।
তৈমুরের রাজ্য জয়
পিতার মৃত্যুর পর তিনি তাঁর ক্ষুদ্র পৈত্রিক রাজ্য নিয়ে সন্তুষ্ট না থেকে, তুর্কীস্থানের কিছু অংশ, অক্সাস বা অঙ্কু অঞ্চল, আফগানিস্তান, পারস্য, সিরিয়া, কুর্দ্দিস্থান, বাগদাদ জয় করেন।
বিখ্যাত সমরনেতা তৈমুর লঙ
তিনি বিখ্যাত সমরনেতারূপে নিজের পরিচয় রাখেন। যুদ্ধ পরিচালনার সময় তাঁর একটি পা নষ্ট হলে তিনি “লঙ্গ” বা খঞ্জ নামে পরিচিত হন।
তৈমুর লঙের ভারত আক্রমণ সম্পর্কে ঐতিহাসিক উপাদান
তৈমুরের ভারত অভিযান সম্পর্কে তার আত্মজীবনী তুজুক-ই-তৈমুরী একটি মূল্যবান উপাদান।
তৈমুর লঙের ভারত অভিযানের লক্ষ্য
দিল্লী সুলতানির পতনশীল অবস্থা দেখা দিলে তৈমুর ভারত আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। তুজুক-ই-তৈমুরীতে তৈমুরলঙ্গ বলেছেন যে তাঁর ভারত অভিযানের প্রথম লক্ষ্য ছিল বহু দেবতার উপাসক, পৌত্তলিকদের সত্যধর্মে দীক্ষিত করা। তাঁর দ্বিতীয় এবং অবশ্যই প্রধান লক্ষ্য ছিল ভারতের ধন সম্পদ লুণ্ঠন।
অপরিমিত সম্পদের লোভে তৈমুর লঙের ভারত আক্রমণ
- (১) তুজুক-ই-তৈমুরী থেকে জানা যায় যে, তাঁর গুপ্তচররা তৈমুরকে জানায় যে ভারত সোনা-রূপায় পূর্ণ। ভারতে ১৭টি সোনা-রূপার খনি আছে। এছাড়া মূল্যবান পাথর, লোহার খনিও বহু আছে।
- (২) মরুতে এক ধরনের বৃক্ষ জন্মায় যা দিয়ে বস্ত্র উৎপাদন করা যায়। এই দেশের জমিগুলি সবুজ গাছ-পালায় ঢাকা। এর ফলে তৈমুর আশা করেন যে তিনি ভারত থেকে অন্তত ৬ আর্ব বা ৬০০ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ হস্তগত করতে পারবেন।
তৈমুর লঙের পাঞ্জাব লুন্ঠন
১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতের উদ্দেশ্যে সমরখন্দ হতে যাত্রা করেন এবং এই বছরেই সিন্ধুনদ পার হয়ে পাঞ্জাবে ঢুকে পড়েন। পাঞ্জাবের ভাতনীর দুর্গ দখল করে তিনি অসংখ্য নর-নারী হত্যা করে দিল্লীর দিকে এগিয়ে চলেন।
তৈমুর লঙের আক্রমনে দিল্লীর সুলতানের পলায়ণ
মধ্য এশিয়ার তৈমুর দিল্লীর উপকণ্ঠে এলে সুলতান মহম্মদ শাহ তাকে বাধা দেন। সুলতানি বাহিনী সম্পূর্ণভাবে তৈমুরের আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। এরপর দিল্লী ছেড়ে সুলতান পালিয়ে গুজরাটে আশ্রয় নেন।
তৈমুর লঙের দিল্লী লুন্ঠন ও গণহত্যা
মধ্য এশিয়ার তৈমুর ১৮ই ডিসেম্বর ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীতে ঢুকে পড়েন। উলেমাদের অনুরোধে তিনি প্রথমে দিল্লীর অধিবাসীদের জীবন রক্ষা করতে রাজী হন। কিন্তু তৈমুরের বাহিনীর ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে দিল্লীর লোকেরা প্রতিবাদ জানালে, তৈমুর ব্যাপক লুঠ ও গণ হত্যার আদেশ দেন। হাজার হাজার লোক নিহত হয়। দিল্লী শ্মশানে পরিণত হয়। কয়েকদিন রক্ত স্নানের পর তিনি তাঁর সৈন্যদলকে থামার আদেশ দেন।
তৈমুর লঙের ভারত ত্যাগ
দিল্লীতে ১৫ দিন ব্যাপক লুঠ ও হত্যা চালাবার পর তৈমুর দিল্লী ত্যাগ করে স্বদেশে ফেরার পথ ধরেন। পথে তিনি ফিরোজাবাদ, মীরাট, হরিদ্বার, কাংড়া ও জম্মু লুঠ করেন। তিনি খিজির খাঁকে মূলতান, লাহোর ও দীপালপুরের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে ভারত ছাড়েন।
তৈমুর লঙের ভারত আক্রমনের ফলাফল
তৈমুরের আক্রমণে লক্ষ লক্ষ হিন্দু নর-নারী নিহত হয়। বহু শহর ও গ্রাম ধ্বংস হয়ে যায়। দিল্লী নগরী শ্মশানে পরিণত হয়। কয়েক মাস শহরটি জনশূন্য থাকে।
উপসংহার :- তৈমুর লঙের আক্রমণের পর দিল্লীতে দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দেখা দেয়, যার ফলে অবশিষ্ট লোকেরা মারা পড়ে। উত্তর ভারতের সর্বত্র অরাজকতা ও গণ্ডগোল দেখা দেয়। দিল্লী সুলতানির পতন সুনিশ্চিত হয়।
(FAQ) তৈমুর লঙের ভারত আক্রমণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
চাঘতাই তুর্কী।
মধ্য এশিয়ার সমরখন্দ।
তুজুক-ই-তৈমুরী।
১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে।
নাসিরুদ্দিন মহম্মদ শাহ।