ভিল কথার উৎপত্তি, ভিলদের উল্লেখ, বাসস্থান, ভিল বিদ্রোহের সময়, স্থান, কারণ, বিদ্রোহের সূচনা, নেতৃত্ব, ব্যর্থতা, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।
ভারতে ভিল বিদ্রোহ
ঐতিহাসিক ঘটনা | ভিল বিদ্রোহ |
সময়কাল | ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দ |
স্থান | মহারাষ্ট্রের সাতপুরা, সাতমালা ও অজন্তা অঞ্চল |
নেতৃত্ব | তাঁতিয়া ভিল, চিল নায়েক, হিরিয়া ও শিউরাম |
ফলাফল | ব্যর্থতা |
ভূমিকা :- ভিল সম্প্রদায় হল ভারত -এর প্রাচীন আদিবাসী সম্প্রদায়ের একটি শাখা। খান্দেশ, অঞ্চল-সহ পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন স্থানে তারা বসবাস করত। তারা ছিল সৎ, স্বাধীন, স্বনির্ভর জীবনযাপনে অভ্যস্ত। ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে ভিলরা এক শক্তিশালী বিদ্রোহ শুরু করে।
ভিল শব্দের উৎপত্তি
এই ভিল কথাটি এসেছে দ্রাবিড় শব্দ বাউবিল থেকে, যার অর্থ হল একটি বিশেষ অস্ত্র, যা উপজাতিরা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে।
ভারতে ভিলদের উল্লেখ
আমাদের দেশের প্রাচীন সাহিত্যে ভিলদের কথা বলা হয়েছে। তারা ভারতে প্রাচীনতম উপজাতিদের মধ্যে অন্যতম।
ভিলদের বাসস্থান
আমাদের দেশ ভারতবর্ষ-এর প্রাচীন আদিবাসী বা উপজাতি সম্প্রদায়ের একটি অন্যতম শাখা ছিল ভিল উপজাতি। তারা বর্তমান গুজরাট, মহারাষ্ট্র-সহ পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করত।
ভারতে ভিল বিদ্রোহের সময়কাল
আদিবাসী ভিলরা তাদের প্রতি অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিদ্রোহ করেছিল।
আদিবাসী ভিল বিদ্রোহের স্থান
মহারাষ্ট্রের সাতপুরা, সাতমালা ও অজন্তা অঞ্চলে এই আদিবাসী বিদ্রোহ সংগঠিত হয়।
ভিল বিদ্রোহের কারণ
উপজাতি ভিলরা ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহের বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন –
(১) কোম্পানির আধিপত্য
ইংরেজরা ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ভিলদের বসতি অঞ্চল খান্দেশ দখল করে সেই অঞ্চলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। ফলে ভিলরা ক্ষুদ্ধ হয়।
(২) ভূমিরাজস্ব আরোপ
ব্রিটেনের ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভিল অঞ্চলে ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা চালু করে। এই রাজস্বের পরিমাণ শীঘ্রই অত্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে দরিদ্র ভিলরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(৩) উৎপীড়ন
ব্রিটিশ কোম্পানি ভিল কৃষকদের কাছ থেকে ভূমিরাজস্ব আদায় করতে গিয়ে তাদের ওপর ব্যাপক অত্যাচার ও উৎপীড়ন চালায়।
(৪) ভিলদের ঐতিহ্য বাতিল
ইংরেজ কোম্পানি ভিল অঞ্চলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে সেই অঞ্চলে ভিলদের নিজস্ব আইন ও বিচারব্যবস্থা বাতিল করে এবং ব্রিটিশ আইন ও বিচারব্যবস্থা চালু করে। ভিলরা এই ব্রিটিশ ব্যবস্থা মেনে নিতে পারেনি।
(৫) মহাজনদের শোষণ
মাড়োয়ারি সাউকার ও মহাজনরা সুকৌশলে ভিলদের তীব্র ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলে। ভিলরা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাদের ওপর নিদারুণ অত্যাচার ও নির্যাতন চালানো হত।
ভারতে ভিল বিদ্রোহের সূচনা
আদিবাসী ভিলদের ওপর নানা ধরনের শোষণ ও অত্যাচারের ফলে তারা ব্রিটিশ কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। বিদ্রোহীদের অন্যতম প্রেরণা ছিলেন মহারাষ্ট্রের নেতা ত্রিম্বকজি। ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করে। বিদ্রোহীদের নেতৃত্বের অগ্রভাগে ছিলেন সেওয়ারাম।
আদিবাসী ভিল বিদ্রোহের নেতৃত্ব
ভিল বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন তাঁতিয়া ভিল, চিল নায়েক, হিরিয়া ও শিউরাম।
উপজাতি ভিল বিদ্রোহের ব্যর্থতা
কর্নেল আউট্রামের নেতৃত্বে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ভিল বিদ্রোহীদের ওপর তীব্র দমনপীড়ন চালালে ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দের ভিল বিদ্রোহ থেমে যায়।
আদিবাসী ভিল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য
ভিল বিদ্রোহের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল –
- (১) ভিল বিদ্রোহ ছিল একটি উপজাতি বিদ্রোহ।
- (২) এই বিদ্রোহ দীর্ঘ দিন ধরে, প্রায় ২৫ বছর ধরে পরিচালিত হয়েছিল।
ভিল বিদ্রোহের গুরুত্ব
উপজাতি ভিল বিদ্রোহের ফলে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা ভিলরা ঐক্যবদ্ধ হয়। মাড়োয়ারি মহাজন শ্রেণি গুজরাট ও রাজস্থান অঞ্চল থেকে পালিয়ে যায়।
উপসংহার :- তীব্র দমনপীড়ন সত্ত্বেও ভিলদের বিদ্রোহের আগুন কখনোই একেবারে নিভে যায়নি। তাই ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে আপাতদৃষ্টিতে বিদ্রোহ থেমে গেলেও পরবর্তীকালে ১৮২৫, ১৮৩৬ এবং ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভিল জাতি বারবার বিদ্রোহে শামিল হয়েছিল।
(FAQ) ভিল বিদ্রোহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে।
খান্দেশ অঞ্চলে।
চিলনায়েক, হিরিয়া, শিউরাম।