ভারতে পলিগার নাম, পলিগার বিদ্রোহের স্থান, সমবেত প্রতিবাদ, পলিগারদের প্রতিরোধ, পলিগারদের বিদ্রোহ, পলিগারদের পরাজয়, কোম্পানির শাসন, কর্ণাটক দখল, পলিগারদের কৃষকদের বিদ্রোহ ও চূড়ান্ত সংগ্রাম সম্পর্কে জানবো।
ভারতে পলিগার বিদ্রোহ
ঐতিহাসিক ঘটনা | পলিগার বিদ্রোহ |
সময়কাল | ১৭৮৩-১৮০৫ খ্রিস্টাব্দ |
স্থান | তিন্নিভেলি, উত্তর আর্কট, বেলারি, অনন্তপুর, কুডাপ্পা |
নেতৃত্ব | পাণ্ডেয়ম কাট্টাবোম্বান |
ফলাফল | ব্যর্থতা |
ভূমিকা :- অষ্টাদশ শতাব্দীতে দক্ষিণ ভারত -এর বিভিন্ন অঞ্চলে নানা বিদ্রোহ দেখা দেয়। এই সব বিদ্রোহগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল পলিগারদের বিদ্রোহ।
প্রতিপত্তিশালী কৃষক পলিগার শ্রেণী
খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকে বর্তমান তামিলনাডুতে একশ্রেনীর কৃষক কৃষিকার্যের দ্বারা যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং রাজনৈতিক ক্ষমতারও অধিকারী হয়। প্রকৃতপক্ষে এরা ছিল ধনী ভূস্বামী ও সমরনায়ক এবং নিজ নিজ এলাকায় তারা যথেষ্ট প্রতিপত্তিশালী ছিল।
পলিগার নাম
‘পলিগার’ নামটি ব্রিটিশ শাসকদের দেওয়া। মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির কালেক্টর টমাস মনরো পলিগারদের ইংরেজ শাসনের প্রধান প্রতিবন্ধক বলে মনে করতেন।
ভারতে পলিগার বিদ্রোহের স্থান
১৭৮৩ থেকে ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিন্নিভেলি, উত্তর আর্কট, বেলারি, অনন্তপুর, কুডাপ্পা ও কাল প্রভৃতি স্থানের পলিগাররা ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রবল সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
পলিগারদের সমবেত প্রতিবাদ
১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে আর্কটের নবাব ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে তিন্নিভেলি জেলার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দিলে পলিগাররা সমবেতভাবে প্রতিবাদ জানায়।
ইংরেজ বাহিনীর অব্যাহতি প্রার্থনা
ইংরেজ বাহিনী পলিগারদের দুর্গ আক্রমণ করেও ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত কোম্পানি আর্কটের নবাবের কাছে এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে নেয়।
পলিগারদের প্রতিরোধ
১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে আর্কটের নবাবের সঙ্গে ইংরেজ কর্তৃপক্ষের পুনরায় একই ধরনের চুক্তি হয়। পলিগাররা সাধারণ কৃষকদের নিয়ে গঠিত সেনাবাহিনীর সাহায্যে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই যুদ্ধে লেফটান্যান্ট ক্লার্ক নিহত হন।
পলিগার বিদ্রোহ
১৮০১ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় তিন্নিভেলির পলিগারদের সঙ্গে ইংরেজদের যুদ্ধ হয়। ইতিপূর্বে যে সব কৃষক-যোদ্ধাকে ইংরেজরা পালামকোট্টার কারাগারে বন্দি করে রেখেছিল, তারা কারাগার থেকে পালিয়ে এসে পলিগারদের সঙ্গে যোগ দেয়।
পলিগারদের পরাজয়
প্রথমে ইংরেজরা পরাজিত হলেও, কয়েক মাস পরে তারা পুনরায় পলিগারদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পলিগাররা পরাজিত হয়। অনেকের মৃত্যুদণ্ড হয়।
মহীশূর রাজ্যে কোম্পানীর শাসন
১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে টিপু সুলতান পরাজিত হলে তাঁর রাজ্যের একাংশে কোম্পানির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইংরেজ কোম্পানির কর্ণাটক দখল
১৮০১ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়েলেসলি কর্ণাটক দখল করেন। এই সব অঞ্চলের শাসনভার কোম্পানির হাতে গেলে নারাঘন্টি, বেলারি, অনন্তপুর, কুড়াপ্পা, কার্গুল প্রভৃতি স্থানের পলিগাররা একের পর এক বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
পলিগার কৃষক বিদ্রোহ
তাদের সমর্থন জানায় সাধারণ কৃষক ও প্রজারা। কোম্পানির সরকার সাময়িকভাবে এই সব বিদ্রোহ দমন করে। পলিগাররা সমরনেতা হলেও তাদের বিদ্রোহ ছিল কৃষক বিদ্রোহ এবং তারা ছিল কৃষক নেতা।
পলিগারদের চূড়ান্ত সংগ্রাম
১৮০৩ থেকে ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে উত্তর আর্কটের পলিগাররা ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়।
পলিগার বিদ্রোহীদের হাতে নিহত
অতি সাধারণ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা সুসজ্জিত ইংরেজ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করে। তাদের হাতে বহু ইংরেজ সেনা ও সেনাপতি নিহত হয়।
উপসংহার :- টমাস মনরো-ই পলিগারদের নিরস্ত্র করে ইংরেজ শাসনের প্রতি অনুরক্ত করে তোলেন। তা না হলে দক্ষিণ ভারতে ব্রিটিশ আধিপত্য স্থায়ী হত না।
(FAQ) পলিগার বিদ্রোহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৭৮৩-১৮০৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।
ব্রিটিশ শাসকদের।
লেফটান্যান্ট ক্লার্ক।
টমাস মনরো।
তিন্নিভেলি (তিরুনেলভেলি), উত্তর আর্কট,বেলারি, অনন্তপুর, কুড়াপ্পা ও কার্ণল প্রভৃতি স্থানে।