সন্দীপ অঞ্চল, অধিবাসী, জমিদারি স্থাপন, সন্দীপ বিদ্রোহের সময়কাল, স্থান, কারণ, প্রথম বিদ্রোহ, বিদ্রোহ দমন, বিদ্রোহের প্রকৃতি, কৃষকদের বিদ্রোহ ঘোষণা, বিদ্রোহের অবসান ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।
সন্দীপ বিদ্রোহ
ঐতিহাসিক ঘটনা | সন্দীপ বিদ্রোহ |
সময়কাল | ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দ |
নেতৃত্ব | আবু তোরাপ চৌধুরী |
স্থান | নোয়াখালি জেলার সন্দীপ অঞ্চল |
ফলাফল | ব্যর্থতা |
ভূমিকা :- ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান বাংলাদেশ -এর নোয়াখালি জেলার সন্দীপের দরিদ্র মুসলিম কৃষকদের বিদ্রোহ কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়।
সন্দীপ অঞ্চল
বঙ্গোপসাগরের বুকে কয়েকটিক্ষুদ্র ও বৃহৎ দ্বীপের সমষ্টিহল সন্দীপ। এই দ্বীপগুলি নোয়াখালি জেলার অন্তর্গত।
সন্দীপের অধিবাসী
সন্দীপ অঞ্চলের অধিবাসীদের অধিকাংশই ছিল মুসলিম।
সন্দীপ অঞ্চলের জমি জরিপ ও রাজস্ব ধার্যের দায়িত্ব
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর ভেরেলেস্ট-এর ‘বেনিয়ান’ গোকুল ঘোষালকে ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে সন্দীপে জমি জরিপ ও রাজস্ব ধার্য করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সন্দীপ অঞ্চলে জমিদারি স্থাপন
গোকুল ঘোষাল নানা উপায়ে সন্দীপের এক ব্যাপক অঞ্চলে নিজস্ব জমিদারি স্থাপন করেন।
সন্দীপ বিদ্রোহের কারণ
সন্দীপ বিদ্রোহের কারণগুলি ছিল –
(১) ব্রিটিশের কু-শাসন
ব্রিটিশ শাসনের প্রথমার্ধে সন্দীপ অঞ্চলে রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছিল চাঁদ খাঁ ও তার দুজন আত্মীয়। বংশপরম্পরায় এরাই ব্রিটিশের কল্যাণে জমিদার হন। এদের মাধ্যমে ব্রিটিশ অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের নামে যে অত্যাচার চালিয়েছিল, তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল সন্দীপবাসীরা।
(২) গোকুল ঘোষালের অত্যাচার
গোকুল ঘোষাল নামক এক লবণ ব্যবসায়ীর অত্যাচার ও শোষণে সন্দীপবাসীর নাভিশ্বাস ওঠে। তিনি আরও অনেক জমিদারি বাজেয়াপ্ত করেন এবং সন্দীপে লবণের একচেটিয়া বন্দোবস্ত নেন। শুরু হয় সন্দীপ অঞ্চল জুড়ে গোকুল ঘোষালের লুণ্ঠন, যাতে অতিষ্ঠ হয়ে সন্দীপবাসী বিদ্রোহের রাস্তায় নামে৷
সন্দীপের কৃষকদের প্রথম বিদ্রোহ
গোকুল ঘোষালের জমিদারি স্থাপনের কারণে সন্দীপের পূর্বতন জমিদার আবু তোরাপ চৌধুরী বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।
সন্দীপ বিদ্রোহ দমন
গোকুল ঘোষালের পরামর্শে সরকার এই বিদ্রোহ দমনে অগ্রসর হয়। এক যুদ্ধে আবু তোরাপ চৌধুরী পরাস্ত ও নিহত হন। তাঁর সব সম্পত্তি সরকার বাজেয়াপ্ত করে এবং গোকুল ঘোষাল তা বেনামে বন্দোবস্ত নেন।
সন্দীপ বিদ্রোহের প্রকৃতি
- (১) প্রকৃতিগত দিক থেকে সন্দীপ বিদ্রোহ ছিল একটি কৃষক বিদ্রোহ। কারণ, সন্দীপের মুসলিম কৃষকরাই এই বিদ্রোহের মূল চালিকাশক্তি ছিল।
- (২) নোয়াখালি জেলার এই দ্বীপগুলির শতকরা ৮০ ভাগ বাসিন্দা ছিল মুসলিম। সন্দীপ অঞ্চলের অধিকাংশ লোকের জীবিকা ছিল কৃষি।
- (৩) এখানে পেশাগত দিক থেকে কর্মকার, সুত্রধর, ভুঁইমালি, বেহারা, কৈবর্ত, যোগী প্ৰভৃতি শ্রমজীবীদের বসবাস ছিল। এরা সবাই বিদ্রোহে যোগ দিয়েছিল।
সন্দীপের কৃষকদের বিদ্রোহ ঘোষণা
তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে সন্দীপের কৃষকরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। জমিদারিচ্যুত জমিদাররাও বিদ্রোহী কৃষকদের সঙ্গে যোগ দেয়।
সন্দীপ বিদ্রোহের অবসান
শেষ পর্যন্ত ইংরেজ সেনাদল নির্মম অত্যাচারের মাধ্যমে এই বিদ্রোহ দমন করে।
সন্দীপ বিদ্রোহের গুরুত্ব
কয়েকটি দ্বীপের দরিদ্র, অসহায় কৃষকশ্রেণি যেভাবে ব্রিটিশের রক্তচক্ষুর বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছিল তাতে কৃষক বিদ্রোহই গৌরবান্বিত হয়েছিল। এই বিদ্রোহের সফলতা এখানেই যে বিদ্রোহীরা জমিদারি হারানো পূর্বতন জমিদারদেরও পাশে পেয়েছিল।
উপসংহার :- সন্দীপের ইতিহাসে ইংরেজদের সহায়তায় গোকুল ঘোষালের অত্যাচারের কাহিনী এবং তার বিরুদ্ধে কৃষক বিদ্রোহ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
(FAQ) সন্দীপ বিদ্রোহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে।
আবু তোরাপ চৌধুরী।
গোকুল ঘোষাল।