প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ -এর সময়কাল, বিবাদমান পক্ষ, হায়দার আলির সাথে ইংরেজদের বিরোধের কারণ, হায়দার বিরোধী মৈত্রী চুক্তি, ঐতিহাসিক ডডওয়েলের অভিমত, হায়দার আলির কূটকৌশল, প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের সূচনা, হায়দার আলির পরাজয়, হায়দার আলির সাফল্য, মাদ্রাজের সন্ধি, মাদ্রাজের সন্ধির শর্ত ও প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের সমাপ্তি সম্পর্কে জানবো।
১৭৬৭-৬৯ খ্রিস্টাব্দের প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ
সময়কাল | ১৭৬৭-৬৯ খ্রিস্টাব্দ |
বিবাদমান পক্ষ | মহীশূর রাজ্যের হায়দার আলি ও ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি |
মাদ্রাজের সন্ধি | ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দ |
ফলাফল | হায়দার আলির সাফল্য |
ভূমিকা :- রাজত্বের সূচনা-পর্বে হায়দার আলির সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কোনও কারণ ঘটে নি—বরং হায়দার আলি ইংরেজদের পছন্দই করতেন। কালক্রমে নানা কারণে হায়দার আলির সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।
হায়দার আলির সাথে ইংরেজদের বিরোধের কারণ
বিভিন্ন কারণে হায়দার আলি ও ইংরেজ কোম্পানির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। আর এর পরিণাম হল চারটি ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ এবং চূড়ান্ত যুদ্ধে মহীশূরের পরাজয় ও পতন। যেমন –
- (১) প্রশাসন ও সেনাবিভাগে নানা সংস্কার প্রবর্তন করে হায়দার আলি মহীশূরকে একটি শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত করেন যা ইংরেজদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।
- (২) ফরাসিদের সঙ্গে হায়দার ‘আলির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এবং তাঁর রাজসভায় ফরাসিদের আনা-গোনা ইংরেজদের মনঃপূত হয় নি।
- (৩) কর্ণাটকের তৃতীয় যুদ্ধ -এর (১৭৫৬ খ্রিঃ) সময় হায়দার আলি ফরাসি সেনাপতি কাউন্ট লালিকে ৪ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য দিয়ে সাহয্যে করলে ইংরেজরা প্রবল ক্ষুব্ধ হয়।
- (৪) হায়দারের অন্যতম প্রধান শত্রু ছিল ইংরেজ সমর্থন-পুষ্ট আর্কটের নবাব মহম্মদ আলি। তাঁকে কেন্দ্র করে ইংরেজদের সঙ্গে হায়দারের বিরোধ বাধে।
- (৫) হায়দার মহম্মদ আলি-র জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা এবং আর্কটের সিংহাসনের অন্যতম দাবিদার মাহফুজ খাঁ-কে নিজ দরবারে আশ্রয় দেন।
- (৬) মহম্মদ আলির আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী চাঁদাসাহেবের পুত্র রাজাসাহেবকেও তিনি নিজ অধীনে চাকরি দেন। এতে ইংরেজরা ক্ষুব্ধ হয়।
- (৭) আবার মহম্মদ আলির সঙ্গে হায়দারের বিবাদের কালে হায়দারের অনুরোধ অগ্রাহ্য করে ইংরেজরা মহম্মদ আলির সমর্থনে ভেলোরে একদল সৈন্য মোতায়েন করে। এতে হায়দার ক্ষুব্ধ হন।
- (৮) হায়দার যখন নিজ রাজ্যে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছিলেন, তখন ইংরেজরা তাঁকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে।
- (৯) মহীশূরের ক্ষমতাচ্যুত ও নজরবন্দি রাজার সঙ্গে ইংরেজরা হায়দার-বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে হায়দার প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন।
হায়দার বিরোধী মৈত্রী চুক্তি
দাক্ষিণাত্যে হায়দার আলির উত্থানে আশঙ্কিত হয়ে মারাঠা, নিজাম ও ইংরেজরা ১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দে হায়দার বিরোধী মৈত্রী চুক্তি সম্পাদন করে।
ডডওয়েলের অভিমত
ঐতিহাসিক ডডওয়েল বলেন যে, ইংরেজ, নিজাম ও মারাঠাদের এই জোট স্থায়ী হওয়ার কোনও সম্ভাবনা ছিল না। কারণ, তাদের স্বার্থছিল পরস্পর-বিরোধী।
প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের পূর্বে হায়দার আলির কূট কৌশল
সুচতুর হায়দার শীঘ্রই কুটকৌশল ও অর্থের বিনিময়ে মারাঠা ও নিজামকে ইংরেজ পক্ষ থেকে সরিয়ে আনেন।
প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ
১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে হায়দার আলি ইংরেজদের আশ্রিত কর্ণাটকের নবাব মহম্মদ আলি-র বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করলে প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ শুরু হয়।
প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে প্রথম পর্যায়ে হায়দার আলির পরাজয়
প্রথমে পরপর চারটি যুদ্ধে ইংরেজ সেনাপতি স্মিথের হাতে হায়দার পরাজিত হন।
প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে হায়দার আলির সাফল্য
অবশেষে ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে হায়দারের সেনাবাহিনী অতর্কিতে অরক্ষিত ইংরেজ ঘাঁটি মাদ্রাজের উপকণ্ঠে হাজির হলে ইংরেজ কর্তৃপক্ষ ভীত হয়ে পড়ে।
মাদ্রাজের সন্ধি
এই পরিস্থিতিতে ইংরেজরা হায়দার আলি প্রদত্ত শর্তে মাদ্রাজের সন্ধি (১৭৬৯ খ্রি.) স্বাক্ষরে বাধ্য হয়।
মাদ্রাজের সন্ধির শর্ত
এই দ্বারা স্থির হয় যে-
- (১) একে অন্যের অধিকৃত স্থানগুলি পরস্পরকে ফিরিয়ে দেবে।
- (২) এক পক্ষ অন্য কোনো তৃতীয় পক্ষের দ্বারা আক্রান্ত হলে অন্য পক্ষ তাকে সাহায্য করবে।
প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের সমাপ্তি
মাদ্রাজের সন্ধি দ্বারা প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ অমীমাংসিতভাবে শেষ হয় এবং এই যুদ্ধে কারও বিশেষ কোনও লাভ বা ক্ষতি হয় নি।
উপসংহার :- মাদ্রাজের সন্ধির ফলে হায়দারের মর্যাদা, মনোবল ও আত্মবিশ্বাস বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায় এবং অপরদিকে ইংরেজ-মর্যাদায় প্রবল আঘাত হানে।
(FAQ) প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৭৬৭-৬৯ খ্রিস্টাব্দ।
১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজের সন্ধি দ্বারা।
ভেরেলেস্ট।