ফিরোজ শাহ তুঘলকের অর্থনীতি

ফিরোজ শাহ তুঘলকের অর্থনীতি প্রসঙ্গে জিনিসপত্রের সস্তা দাম, ফিরোজের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য, দুর্ভিক্ষ হয়নি, অন্ধকারময় দিক, রাজস্ব ব্যবস্থার ত্রুটি, জাগীর প্রথা বংশানুক্রমিক জাগীর প্রথা ও খাদ্য শস্যের মূল্য সম্পর্কে জানবো।

ফিরোজ শাহ তুঘলকের অর্থনীতি

ঐতিহাসিক ঘটনাফিরোজ শাহ তুঘলকের অর্থনীতি
সুলতানফিরোজ শাহ তুঘলক
বংশতুঘলক বংশ
মুদ্রাজিতল
ফিরোজ শাহ তুঘলকের অর্থনীতি

ভূমিকা :- ঐতিহাসিক আফিফ ফিরোজ শাহের রাজত্বকালকে “প্রাচুর্য ও জিনিষপত্রের নিম্ন দামের আদর্শ যুগ” বলে অভিহিত করেছেন।

জিনিসপত্রের সস্তা দামে

আফিফের মতে ফিরোজ শাহের আমলে দিল্লীতে এক মণ গমের দাম ছিল ৮ জিতল, এক মণ ছোলা ও এক মণ যবের দাম ছিল প্রতি মণ ৪ জিতল।

ফিরোজের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য

ফিরোজের সমকালীন ঐতিহাসিকরা তার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য হিসেবে তার আমলে সস্তা দরে খাদ্যশস্যের সরবরাহ ও কর্মচারীদের উঁচু হারে বেতন প্রদানের কথা উল্লেখ করেছেন।

দুর্ভিক্ষ হয় নি

ফিরোজের রাজত্বকালে কোনো দুর্ভিক্ষ বা মহামারী হয় নি। এজন্য ঐতিহাসিকরা সুলতানের খাদ্য ও কৃষিনীতির প্রশংসা করেছেন। তার শাসন নীতিতে অভিজাত ও জনসাধারণ সন্তুষ্ট ছিল বলেই তার বিরুদ্ধে কোন বিদ্রোহ বা বড় ধরনের চক্রান্ত হয়নি।

অনুকরণ ধর্মগুরু

উলেমা ও ধর্মগুরুরা ফিরোজের প্রতি সদয় ছিলেন। কারণ, ধর্মগুরু হিসেবে তাদের প্রাপ্য অর্থ ও মর্যাদা তিনি দিতেন। ধর্মস্থানে তিনি ভূমি দান করতেন। তিনি সরকারী কর্মচারীদের বংশানুক্রমিক পদ ও জাগীর দেওয়ার ফলে তারা তার প্রতি অনুরক্ত ছিল।

অন্ধকারময় দিক

ফিরোজ শাহ তুঘলকের অর্থনীতির হয়ত উজ্জ্বল দিকের পাশাপাশি এই নীতির একটি অন্ধকারময় দিকের প্রতিও নিরপেক্ষভাবে দৃষ্টি দেওয়া দরকার।

রাজস্ব ব্যবস্থার ত্রুটি

ডঃ ত্রিপাঠী ফিরোজের রাজস্ব নীতির কয়েকটি ত্রুটির উল্লেখ করেছেন। ফিরোজ ইজারা প্রথা চালু করে রাজস্ব ব্যবস্থাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যান। ইজারা প্রথার প্রভাবে মধ্যস্বত্বভোগী, নীলামদার ও দুর্নীতিপূর্ণ সরকারী কর্মচারীরা বেশীরভাগ ভূমি রাজস্ব লুটে পুটে নেয়।

জাগীর প্রথা

তিনি সরকারী কর্মচারীদের বেতন হার চড়া হারে বেঁধে দেন এবং নগদ বেতনের স্থলে জাগীর দেওয়ার নিয়ম চালু করেন। এর ফলে এক শ্রেণীর কর্মচারী ফুলে ফেঁপে ওঠে। সরকারের হাতে যথেষ্ট রাজস্ব না থাকলেও, এই দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মচারীরা হঠাৎ ধনী হতে থাকে।

বংশানুক্রমিক জাগীর প্রথা

  • (১) ফিরোজ জাগীরগুলিকে বংশানুক্রমিকভাবে বন্দোবস্ত দেওয়ার ফলে এক কায়েমী স্বার্থভোগী ক্ষমতাশালী বাশানুক্রমিক অভিজাত শ্রেণীর উদ্ভব হয়। এরা রাষ্ট্রের অধিকাংশ ক্ষমতা ও অর্থ আত্মসাৎ করে।
  • (৩) ফিরোজ শাহ সৈন্যদলকে নগদ বেতনের পরিবর্তে জাগীর দেওয়ায়, সৈন্যদল সেই জাগীরের রাজস্ব নগদ টাকার বিনিময়ে নীলামদার ও মহাজনদের হাতে ছেড়ে দেয়। এই অস্থায়ী মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণী ছিল ভয়ানক শোষক ও অত্যাচারী। তারা ফিরোজের নির্দিষ্ট হারে রাজস্ব আদায় না করে চড়া হারে রাজস্ব আদায় করত।

শাস্তি দিতে অসমর্থ

আইন-ই-মহরুর মতে, রাজস্ব কর্মচারীরা সরকারকে প্রাপ্য রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ঘোরতর দুর্নীতি করত। সুলতান অপরাধী কর্মচারীদের কঠোর শাস্তি দিতে অসমর্থ হওয়ায় তাদের সাহস বেড়ে যায়।

খাদ্য শস্যের মূল্য

ফিরোজের আমলে সকল সময় ও রাজ্যের সকল স্থানে খাদ্যদ্রব্যের দাম সস্তা ছিল না। মূলতানে খাদ্য শস্যের দাম আলাউদ্দিনের আমল অপেক্ষা বেশ চড়া ছিল। খাদ্যশস্যের দাম চড়া হওয়ার ফলে শ্রমিক, কারিগরদের মজুরী বৃদ্ধি পায়।

উপসংহার :- সুফী রচনা খয়ের-উল-মজলিসের ভিত্তিতে অধ্যাপক খালাক নিজামী মন্তব্য করেছেন যে, আলাউদ্দিনের আমলে দিল্লীতে খাদ্যদ্রব্য সহ সকল প্রয়োজনীয় জিনিষ যত সস্তায় পাওয়া যেত ফিরোজ শাহের আমলে সকল জিনিষ সেরকম সস্তা আদপেই ছিল না।

(FAQ) ফিরোজ শাহ তুঘলকের অর্থনীতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কোন সুলতান বংশানুক্রমিক জাগীর প্রথা চালু করেন?

ফিরোজ শাহ তুঘলক।

২. ফিরোজ শাহ তুঘলকের মুদ্রার নাম কি ছিল?

জিতল।

৩. কোন সুলতান ভারতের সেচ পরিকল্পনার জনক নামে পরিচিত?

ফিরোজ শাহ তুঘলক।

৪. কোন সুলতান জনহিতকর কার্যাবলীর জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন?

ফিরোজ শাহ তুঘলক।

Leave a Comment