শেরশাহের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা

শেরশাহের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা প্রসঙ্গে রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত, রাজস্ব ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য, জমি ভাগ, রাজস্ব নির্ধারণের প্রথা, ফসলের দাম নির্ধারণ, জরিবানা ও মহাশিলওয়ানা, খরা বা বন্যার সময় ঋণদানের জন্য কর, খুৎ ও মুকাদ্দম, কৃষকের প্রতি নায্য ব্যবস্থা ও পাট্টার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানবো।

শেরশাহের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা

ঐতিহাসিক ঘটনাশেরশাহের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা
রাজাশেরশাহ
সময়কাল১৫৪০-১৫৪৫ খ্রি
পাট্টাজমিতে রায়তের স্বত্ব
কবুলিয়তরাজস্ব দানের অঙ্গীকার
শেরশাহের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা

ভূমিকা :- শেরশাহের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা গবেষকদের বিশেষ আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। এক্ষেত্রে তিনি বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দেন।

রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত

শেরশাহ প্রধানত রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত চালু করেন। অর্থাৎ তিনি সরাসরি জমি জরিপ করে কৃষকের সঙ্গে ভূমি রাজস্ব বন্দোবস্ত করেন। তবে মালব, রাজস্থান ও মুলতানে তিনি জায়গীরদারী ব্যবস্থা বহাল রাখতে বাধ্য হন।

বৈশিষ্ট্য

শেরশাহের ভূমি রাজস্ব প্রথার বৈশিষ্ট্য হল –

(১) জমি জরিপ

তিনি জমি জরিপ করে জমির উৎপাদনের ভিত্তিতে রাজস্ব ধার্য করেন। আহমদ খাঁ নামে কর্মচারীর সাহায্যে তিনি জরিপের কাজ সম্পন্ন করেন। জমি জরিপের সময় স্থানীয় বাধাকে তিনি দমন করে জরিপের কাজ চালু রাখেন।

(২) পাট্টা

তিনি জরিপের ভিত্তিতে সরকারি খতিয়ান তৈরি করেন। সরকারি খতিয়ানে প্রতি প্লট বা দাগের জমির পরিমাণ, রায়তের নাম, দেয় রাজস্ব লিপিবদ্ধ করা হত। খতিয়ানের ভিত্তিতে রায়তকে তার স্বত্ব রক্ষার জন্য একটি পাট্টা দেওয়া হত।

(৩) কবুলিয়ত

পাট্টার বিনিময়ে রায়ত একটি কবুলিয়ত বা অঙ্গীকার পত্র দ্বারা অঙ্গীকার করত যে, সে সরকারের নির্দিষ্ট রাজস্ব আদায় দিবে।

(৪) সর্বত্র একই প্রকর মাপ

জমি জরিপের সুবিধার জন্য সাম্রাজ্যের সর্বত্র একই প্রকার জমির মাপ চালু করা হয়। এই জমি মাপার গজের নাম ছিল সিকান্দারী গজ। সিকান্দর লোদী এই মাপকাঠি চালু করেন। এই গজের মাপ ছিল ৪১ আঙ্গুল।

জমি ভাগ

জমির উৎপাদনের ভিত্তিতে জমিগুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় – সরেশ, মাঝারি ও নিরেশ জমি।

রাজস্ব নির্ধারণের প্রথা

তিন প্রকার জমির ফসলের গড় তৈরি করে তার ১/৩ (মতান্তরে ১/৪) ভাগ সরকারি ভূমি-রাজস্ব হিসেবে ধার্য করা হয়। রাজস্ব নগদ অর্থে নেওয়া হত, কখনও কখনও ফসলের ভাগ নেওয়া হত। নগদে রাজস্ব নিলে ফসলের গড় দাম ধরে তাঁর ১/৩ অংশ সরকারের রাজস্ব হিসেবে ধার্য হত।

ফসলের দাম নির্ধারণ

শেরশাহ জরিপের সময় ফসলের গড় দামের একটি তালিকা তৈরি করেন। এরই ভিত্তিতে ফসলের মোট দাম ধরে তার ১/৩ ভাগ রাজস্ব হিসেবে আদায় করা হত।

জরিবানা ও মহাশিলওয়ানা

শেরশাহ আইন করেন যে, ভূমি-রাজস্ব বিভাগের প্রশাসনিক খরচ রায়তদের দিতে হবে। এজন্য রায়তরা জরিমানা বা জরিপের খরচ এবং মহাশিলওয়ানা বা রাজস্ব আদায়কারীর খরচ বাবদ ফসলের শতকরা আড়াই থেকে ৫ ভাগ দিত।

খরা বা বন্যার সময় ঋণদানের জন্য কর

উৎপন্ন ফসলের শতকরা আড়াই ভাগ বন্যা বা খরার সময় ঋণদানের জন্য আদায় করা হত। এই শতকরা আড়াই ভাগ অনেক সময় নগদে না নিয়ে ফসলের ভাগে নেওয়া হত। এই শস্য জমা করা হত। খরা বা বন্যায় তা কৃষকদের বন্টন করা হত।

খুৎ ও মুকাদ্দম

শেরশাহ নিয়মিত রাজস্ব আদায়ের ওপর বিশেষ জোর দেন। তিনি খুৎ ও মুকাদ্দম প্রভৃতিকে রাজস্ব আদায়ের জন্যে কমিশন বা নানকার দিতেন।

কৃষকের প্রতি নায্য ব্যবস্থা

শেরশাহ কৃষকদের প্রতি উদার ব্যবহার করতেন। যাতে তাদের কাছ থেকে কোনো বাড়তি টাকা আদায় না করা হয় এজন্য তিনি কর্মচারীদের সতর্ক করে দেন। তিনি দুর্ভিক্ষের সময় কৃষকদের তাকাভি ঋণ দিতেন। কৃষকরা বছরে দুই কিস্তিতে রাজস্ব পরিশোধ করতে পারত।

পাট্টার উদ্দেশ্য

রায়তকে যে পাট্টা দেওয়া হত তা রায়তের একটি মূল্যবান দলিল ছিল। এই পাট্টায় রায়তের নাম, ধাম, তার জমির পরিমাণ এবং তার প্রদেয় রাজস্ব লেখা থাকত। পাট্টার উদ্দেশ্য ছিল রায়তকে জমিতে স্বত্ববান করা এবং তার কাছ থেকে যাতে উপরি আদায় না হয় তার ব্যবস্থা করা।

উপসংহার :- যুদ্ধের সময় যাতে কৃষকের ক্ষেত ও গ্রামের কোনো ক্ষতি না হয়। সেজন্য শেরশাহ যত্ন বিশেষ যত্ন নিতেন।

(FAQ) শেরশাহের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. রাজস্ব ক্ষেত্রে শেরশাহ প্রধানত কোন প্রথা চালু করেন?

রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত।

২. কবুলিয়ত ও পাট্টা চালু করেন কে?

শেরশাহ।

৩. পাট্টা কি?

শেরশাহের সরকার প্রজাকে জমির সীমানা, স্বত্ব প্রভৃতি স্বীকার করে যে দলিল প্রদান করত তাকে বলা হত পাট্টা।

৪. কবুলিয়ত কি?

শেরশাহের প্রজারা তাদের কর্তব্য, স্বত্ব ও খাজনার পরিমাণ উল্লেখ করে সরকারকে যে দলিল জমা দিত তাকে বলা হত কবুলিয়ত।

Leave a Comment