শিবাজির সাফল্যের কারণ প্রসঙ্গে শিবাজীর চাতুর্য ও উপস্থিত বুদ্ধি, গেরিলা যুদ্ধনীতি, হিন্দুদের সমর্থন লাভ, জিজিয়া করের বিরোধিতা, মুসলিমদের শ্রদ্ধা অর্জন, উন্নত গুপ্তচর বাহিনী, ভৌগোলিক অবস্থান, হাল্কা দ্রুতগামী সেনা, সংগঠন শক্তি ও মুঘলদের দুর্বলতা সম্পর্কে জানবো।
শিবাজির সাফল্যের কারণ
ঐতিহাসিক ঘটনা | শিবাজির সাফল্যের কারণ |
মারাঠা নেতা | শিবাজী |
পিতা | শাহজী ভোঁসলে |
মাতা | জীজাবাঈ |
সমকালীন মুঘল সম্রাট | ঔরঙ্গজেব |
ভূমিকা :- শিবাজী তাঁর মৃত্যুর আগেই একটি স্বাধীন রাজ্য বা স্বরাজ্য স্থাপন করতে সক্ষম হন। এই সাম্রাজ্য-এর হৃদপিণ্ড ছিল মহারাষ্ট্র, কোঙ্কন ও কর্ণাটকের কিছু অংশ। শিবাজীর সাফল্যের জন্য নানাবিধ কারণ নির্দেশ করা যায়।
শিবাজীর চাতুর্য ও উপস্থিত বুদ্ধি
শিবাজী ছিলেন অত্যন্ত চতুর, ধূর্ত ও বাস্তববুদ্ধির অধিকারী। তিনি যুদ্ধ ও কূটনীতি উভয় ক্ষেত্রে অসাধারণ চাতুর্যের পরিচয় দেন। তাঁর উপস্থিত বুদ্ধি ছিল তীক্ষ্ণ। যে কোনো বিপদে ধৈর্য না হারিয়ে তিনি সাহস করে সমাধানের পথ খুঁজতেন। আফজল খাঁর হত্যা ও আগ্রায় বন্দীদশা থেকে পলায়ন তাঁর উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় দেয়।
শিবাজীর গেরিলা যুদ্ধনীতি
যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শত্রুর দুর্বলতা লক্ষ্য করতেন এবং দুর্বল স্থানে আঘাত করতেন। তিনি মুঘলদের সঙ্গে যতদূর সম্ভব সম্মুখ যুদ্ধ এড়িয়ে চলেন। গেরিলা যুদ্ধের দ্বারা তিনি শত্রুকের ক্ষতিগ্রস্ত ও হতবুদ্ধি করেন।
শিবাজীর প্রতি হিন্দুদের সমর্থন
শিবাজী ঔরঙ্গজেবের ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে হিন্দুদের আত্মরক্ষার প্রতীক হিসেবে দাঁড়ান। তিনি ব্রাহ্মণ, নারী ও মন্দিরের রক্ষক ছিলেন। এভাবে তিনি হিন্দুদের সমর্থন লাভ করেন। ফলে লোকে তাঁকে হিন্দু রাষ্ট্রের স্থাপয়িতা ও রক্ষক বলে মনে করত। রাজা জয়সিংহ, যশোবন্ত সিংহ, গোলকুন্ডার ব্রাহ্মণ মন্ত্রী মদন্না, আকান্না শিবাজীর প্রতি সহানুভূতি দেখান।
জিজিয়া করের বিরোধিতায় শিবাজী
- (১) শিবাজী ঔরঙ্গজেবের জিজিয়া করের বিরোধিতা করে হিন্দু সম্প্রদায়ের সমর্থন পান। শিবাজী জিজিয়া করের বিরুদ্ধে ঔরঙ্গজেবকে প্রতিবাদপত্র পাঠান। শিবাজী বলতেন যে, ঔরঙ্গজেব তার ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছেন।
- (২) এজন্য যুদ্ধের খরচ মেটাতে তিনি মুঘল সাম্রাজ্য থেকে চৌথ ও সরদেশমুখী আদায় করতে বাধ্য হচ্ছেন। হয়ত এটি শিবাজীর কূটনৈতিক প্রচার ও বাক্চাতুর্য। কিন্তু লোকের ওপর এই প্রচারের গভীর প্রভাব ছিল।
মুসলিমদের শ্রদ্ধা অর্জনে সক্ষম শিবাজী
শিবাজী তার অধিকৃত অঞ্চলের মুসলিমদের ওপর নায্য ব্যবহার করতেন একথা খাফী খাঁ বলেছেন। তিনি মসজিদ ও কোরাণকে সম্মান করতেন এবং মুসলিম নারীদের ওপর অত্যাচার না করতে সেনাদলকে নিষেধ করেন। এজন্য মুসলিমরাও তাকে শ্রদ্ধা করতেন।
শিবাজীর উন্নত গুপ্তচর বাহিনী
শিবাজীর গুপ্তচর বাহিনী ছিল খুব দক্ষ। শত্রুপক্ষের শিবিরের অবস্থা ও তাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি আগাম খবর যোগাড় করতেন।
মারাঠা রাজ্যের ভৌগোলিক অবস্থান
মহারাষ্ট্রের ভৌগোলিক অবস্থা বুঝে শিবাজী তার রণকৌশল স্থির করেন। তিনি জানতেন যে, মুঘলের মত শক্তিশালী সেনাদল তাঁর নেই। সুতরাং তিনি মহারাষ্ট্রের গিরি দুর্গগুলি এবং গেরিলা যুদ্ধ এই দুই বিষয়কে সম্বল করে তাঁর রণ-পরিকল্পনা তৈরি করেন। তিনি গেরিলা যুদ্ধের নীতি অনুসারে অতর্কিত আক্রমণ এবং আত্মরক্ষার জন্য গিরি দুর্গগুলিকে ব্যবহার করেন।
শিবাজীর হাল্কা দ্রুতগামী সেনা
শিবাজীর সেনাদল ছিল হাল্কা, দ্রুতগামী। তিনি অশ্বারোহী ও পদাতিকের ওপরেই বেশী নির্ভর করেন।
মারাঠা নেতা শিবাজীর সংগঠন শক্তি
শিবাজী কেবলমাত্র কৌশলী যোদ্ধা ছিলেন না। তিনি ছিলেন দক্ষ সংগঠক। তিনি তাঁর প্রশাসনকে কার্যকরী ও শৃঙ্খলাপূর্ণ করে গড়ে তোলেন। প্রশাসন ছিল তাঁর প্রতি অত্যন্ত অনুগত।
শিবাজীর সময় মুঘলদের দুর্বলতা
এদিকে মুঘল সেনাপতিদের মধ্যে মতভেদ ও দ্বন্দ্ব মুঘলদের শক্তি দুর্বল করে দেয়। ঔরঙ্গজেব দক্ষিণের সুবাদারী ছেড়ে উত্তরাধিকারের যুদ্ধে যোগ দিতে উত্তরে গেলে সেই সুযোগে শিবাজী তাঁর ক্ষমতার গোড়া পত্তন করেন।
উপসংহার :- মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব ২৩ বছর উত্তরে বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত থাকায় শিবাজী ক্ষমতা বিস্তার করেন। পরে আর শিবাজীকে দমন করা সহজ হয় নি।
(FAQ) শিবাজির সাফল্যের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
গেরিলা যুদ্ধনীতি।
বাঘনখ ও বিছুয়া।
ঔরঙ্গজেব।
আফজল খাঁর হত্যা কৌশলে।