পর্তুগিজ দমনে শাহজাহানের ভূমিকা

পর্তুগিজ দমনে শাহজাহানের ভূমিকা প্রসঙ্গে পর্তুগীজদের ঘাঁটি তৈরি, স্বতন্ত্র প্রশাসন গঠন, পর্তুগিজদের শুল্ক আদায়, মুঘল রাজস্বের ক্ষতি, স্থানীয় লোকেদের অতিষ্ঠ করা, অর্থ লুট, গুজরাটে পর্তুগীজদের অত্যাচার, পর্তুগিজ জলদস্যুদের বিভীষিকা, শাহজাহানের নির্দেশ, কাসেম খাঁর বাহিনী গঠন, কাসেম খাঁর অভিযান সম্পর্কে জানবো।

পর্তুগিজ দমনে শাহজাহানের ভূমিকা

ঐতিহাসিক ঘটনা পর্তুগীজ দমনে শাহজাহানের ভূমিকা
সম্রাট শাহজাহান
পর্তুগীজ ঘাঁটি হুগলি
অভিযান ১৬৪১ খ্রি
পর্তুগীজ দমন কাসেম খাঁ
পর্তুগীজ দমনে শাহজাহানের ভূমিকা

ভূমিকা :- মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে পর্তুগীজরা ভারতের উপকূলে নানাস্থানে কুঠী স্থাপন করে। জাহাঙ্গীরের আমলে দরবারে এবং অন্যত্র তারা বিশেষ প্রভাব-প্রতিপত্তি ভোগ করত।

পর্তুগীজদের ঘাঁটি তৈরি

পর্তুগীজরা বেআইনীভাবে বাংলার হুগলীতে গঙ্গার তীরে এক সামরিক ঘাঁটি তৈরি করে। হুগলীর ঘাঁটির তিনদিকে পরিখা খুঁড়ে কামান পেতে সুরক্ষিত করা হয়; আর নদীবক্ষে পর্তুগীজ যুদ্ধ জাহাজ নদী তীরে ঘাটি রক্ষা করতে থাকে।

স্বতন্ত্র প্রশাসন গঠন

হুগলীতে এরূপ সামরিক ঘাঁটি তৈরি ছিল মুঘল আইন অনুসারে ঘোরতর অপরাধ। এই ঘাঁটির আশ্রয়ে পর্তুগীজরা গঙ্গার দুদিকের গ্রামগুলির ওপর আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা করে। স্থানীয় লোকেদের উৎপীড়ন করে। অর্থ আদায় করতে থাকে। এইভাবে পর্তুগীজরা মুঘল প্রশাসনের ভেতর একটি স্বতন্ত্র প্রশাসন গড়ে তুলে।

পর্তুগীজদের শুল্ক আদায়

পর্তুগীজরা এতে সন্তুষ্ট না হয়ে গঙ্গা নদীর পথে যে মাল চলাচল করত তার ওপর শুল্ক আদায় আরম্ভ করে।

মুঘল রাজস্বের ক্ষতি

পর্তুগীজরা শুল্ক আদায় করায় বাংলার সুবেদারের পক্ষে শুল্ক আদায় কমে যায়। এজন্য মুঘল রাজস্বের ক্ষতি হয়।

লোকেদের অতিষ্ঠ করা

পর্তুগীজরা মুঘল আইনকে গ্রাহ্য করত না। তারা পাদশাহের প্রজাদের ওপর হামলা করত, দাঙ্গা-হাঙ্গামা করত এবং স্থানীয় সুবাদারকে গ্রাহ্য করত না। তাদের উপদ্রবে নদী ও সমুদ্র উপকূলের লোকেরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে।

অর্থ লুঠ

যে কোনো সময় তারা হঠাৎ জাহাজে চড়ে এসে কামান ও বন্দুকের দ্বারা স্থানীয় লোকদের হঠিয়ে অর্থ লুঠ করত এবং স্বাস্থ্যবান যুবক-যুবতীদের দাসরূপে বিক্রি করার জন্য ধরে নিয়ে যেত। এই সকল বে-আইনী কাজের জন্য শাহজাহান পর্তুগীজদের ওপর অসন্তুষ্ট হন।

গুজরাটে পর্তুগীজদের অত্যাচার

শুধু বাংলায় নয়, গুজরাটেও পর্তুগীজরা উপদ্রব চালাচ্ছিল। পর্তুগীজ পাদ্রীরা এদেশীয় লোকেদের জোর করে খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত করতে থাকে।

পর্তুগীজ জলদস্যুদের বিভীষিকা

পর্তুগীজ বোম্বেটেরা জলদস্যুতা দ্বারা বাংলার উপকূল অঞ্চলে বিভীষিকা সৃষ্টি করে। এই জলদস্যুদের সাহস এতদূর বেড়ে যায় যে, বেগম মমতাজ মহলের দুই ক্রীতদাসীকে পর্তুগীজ বোম্বেটেরা আটক করে এবং স্থানীয় মুঘল কর্মচারী তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী জানালে তাতে তারা কর্ণপাত করেনি।

শাহজাহানের নির্দেশ

পাদশাহ শাহজাহানের কাছে পর্তুগীজদের ঔদ্ধত্যের খবর গেলে, তিনি বাংলার সুবাদার কাসেম খাঁকে পর্তুগীজদের বাংলা থেকে বিতাড়নের আদেশ দেন।

কাসেম খাঁর বাহিনী গঠন

কাসেম খাঁ পর্তুগীজদের সঙ্গে উপযুক্ত লড়াইয়ের জন্য নৌকায় কামান সাজিয়ে এক নৌবহর গঠন করেন। এছাড়া তিনি স্থলবাহিনীও নিয়োগ করেন।

কাসেম খাঁর অভিযান

এরপর একযোগে হুগলী ও চট্টগ্রামে পর্তুগীজদের বিরুদ্ধে (১৬৪১ খ্রি) অভিযান চালান হয়। গঙ্গার দুই তীরের পর্তুগীজ ঘাঁটি উৎখাত করা হয়। সাড়ে তিন মাস অবরোধের পর হুগলীর পতন ঘটে। বহু পর্তুগীজ সম্মুখ যুদ্ধে নিহত হয়। ১০ হাজার দেশীয় লোক যারা পর্তুগীজদের হাতে বন্দী ছিল তারা মুক্ত হয়।

উপসংহার :- উঃ ঈশ্বরীপ্রসাদের মতে, সম্রাট খ্রীষ্টান পর্তুগীজদের দমনে কিছুটা ধর্মীয় উন্মত্ততা দেখান।

(FAQ) পর্তুগিজ দমনে শাহজাহানের ভূমিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কার আমলে পর্তুগীজরা বাংলায় সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেন?

শাহজাহান।

২. বাংলার কোথায় পর্তুগীজরা ঘাঁটি স্থাপন করে?

হুগলি।

৩. পর্তুগীজ দমনের জন্য কাকে পাঠানো হয়?

কাসেম খাঁকে।

৪. শাহজাহান কখন পর্তুগীজদের বিরুদ্ধে অভিযান পাঠান?

১৬৪১ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Reply

Translate »