দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ

দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ প্রসঙ্গে যুদ্ধের সময়কাল, যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, যুদ্ধের গতি, যুদ্ধের অবসান, যুদ্ধের ফলাফল ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।

২০০৩ খ্রিস্টাব্দের দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ প্রসঙ্গে দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়কাল, দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধের প্রেক্ষাপট বা পটভূমি বা কারণ, দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি, দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধের অবসান ও দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে জানব।

দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ

ঐতিহাসিক যুদ্ধদ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ
অন্য নামদ্বিতীয় খাঁড়ি যুদ্ধ
সময়কাল২০০৩ খ্রি
বিবাদমান পক্ষআমেরিকা ও ইরাক
ইরাকের রাষ্ট্রপতিসাদ্দাম হুসেন
মার্কিন রাষ্ট্রপতিজর্জ বুশ (জুনিয়র)
সাদ্দাম হুসেনের ফাঁসি৩০ ডিসেম্বর ২০০৬ খ্রি
দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ

ভূমিকা :- প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ– আমেরিকার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর কাছে ইরাকের রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হুসেনের শোচনীয় পরাজয় তাঁর ললাটে পতনের চিহ্ন এঁকে দিয়েছিল। নিজের ললাটের সেই চিহ্ন তিনি নিজের চোখে দেখতে না পেয়ে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করেন।

উপসাগরীয় সংকটের বহিঃপ্রকাশ

মূলত যে তিনটি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে উপসাগরীয় সংকটের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল সেগুলি হল – (ট) ইরাক-ইরান যুদ্ধ (১৯৮০-৮৮ খ্রি.), (খ) ইরাক কর্তৃক কুয়েত দখলের ফলে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ (১৯৯০-৯১ খ্রি.) এবং (গ) দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ (২০০৩ খ্রি.)।

দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

আমেরিকা ইরাকের রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হুসেনের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ আনেন। এগুলি হল –

(১) কুর্দ অঞ্চলে ইরাকি সেনা

১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করে ইরাকের রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হুসেন ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে কুর্দ অঞ্চলের উড়ানমুক্ত অঞ্চলে ইরাকি সেনা পাঠান।

(২) পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার

আমেরিকা দাবি করে যে, সাদ্দাম ইরাকে প্রচুর মারাত্মক পারমাণবিক ও রাসায়নিক মারণাস্ত্র মজুত করেছে।

(৩) আল-কায়দার সঙ্গে সাদ্দামের যোগ

আমেরিকা অভিযোগ করে যে, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ওসামা বিন লাদেন এবং তাঁর সংগঠন ‘আল কায়দা’র সঙ্গে সাদ্দাম হুসেনের যোগ আছে।

(৪) ইরাক আক্রমণের সিদ্ধান্ত

আমেরিকা বেশির ভাগ অভিযোগই প্রমাণ করতে না পারলেও একপ্রকার গায়ের জোরে ইরাককে দোষী সাব্যস্ত করে এবং ইরাক আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। আমেরিকার প্রতিটি সিদ্ধান্তে ইংল্যান্ড সম্মতি জানায়।

ইরাকে আমেরিকার সেনা সমাবেশ

এই সব অভিযোগে ২০০৩ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশ (জুনিয়র) উপসাগরীয় অঞ্চলে সেনা সমাবেশ করেন।

দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধের সূত্রপাত

আসলে মধ্যপ্রাচ্যের তৈলসম্পদের ওপর আমেরিকার একচ্ছত্র আধিপত্যের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ইরাকের রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হুসেন। লৌহ-দৃঢ় সাদ্দাম হুসেনকে ধ্বংস করতে আমেরিকা ইরাকের বিরুদ্ধে অবরোধ ঘোষণা করে এবং ২০ মার্চ ইরাকের ওপর আক্রমণ শুরু করে। এই যুদ্ধ দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ বা দ্বিতীয় খাঁড়ি যুদ্ধ নামে পরিচিত।

দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধে ইরাকের পরাজয়

এই দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধে আমেরিকার হাতে ইরাকের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে।

দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধের ফলাফল

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধের ফলাফল ছিল গুরুত্বপূর্ণ। যেমন –

(১) ইরাকের ক্ষাক্ষতি

ইরাকের ওপর মার্কিন আক্রমণে ইরাকের অগণিত মানুষের মৃত্যু হয় এবং বহু অর্থনৈতিক অঞ্চলের ক্ষতি হয়।

(২) সাদ্দামের পলায়ন

যুদ্ধে পরাজয়ের পর রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হুসেন পালিয়ে এক ভূগর্ভস্থ গৃহে আশ্রয় নেন। কিন্তু মার্কিন সামরিক শক্তি এই গোপন আশ্রয়স্থল থেকেও সাদ্দাম হুসেনকে খুঁজে বের করে এবং আন্তর্জাতিক আদালতে তাঁর বিচার শুরু করে।

(৩) সাদ্দামের ফাঁসি

বিচারে সাদ্দাম হুসেনের বিরুদ্ধে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ এর অভিযোগ আনা হয় এবং তাঁর ফাঁসির সাজা ঘোষণা করা হয়। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে (৩০) ডিসেম্বর) তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়।

উপসংহার :- সাদ্দাম হুসেনের মৃত্যুর পর ইরাকের তেলের ভাণ্ডারের দখলদারি এবং সেই সঙ্গে ইরাকের ভাগ্য নিয়ে টালমাটাল অবস্থা চলতে থাকে।

(FAQ) দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয় কখন?

২০০৩ খ্রিস্টাব্দে।

২. দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ অন্য কি নামে পরিচিত ছিল?

দ্বিতীয় খাঁড়ি যুদ্ধ।

৩. দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ইরাকের রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?

সাদ্দাম হুসেন।

৪. দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় আমেরিকার রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?

জর্জ বুশ (জুনিয়র)।

৫. সাদ্দাম হুসেনের ফাঁসি কার্যকর করা হয় কখন?

৩০ ডিসেম্বর ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Comment