ভক্তি আন্দোলনের কারণ

ভক্তি আন্দোলনের কারণ প্রসঙ্গে সামাজিক বঞ্চনা, শাসকদের উদারতা, সমন্বয়বাদের কারণ, সুফীবাদের প্রভাব, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তি, বর্ণবৈষম্যের বিরোধিতা ও ঈশ্বরলাভে ভক্তির পথ সম্পর্কে জানবো।

ভক্তি আন্দোলনের কারণ

ঐতিহাসিক ঘটনাভক্তি আন্দোলনের কারণ
গুরুকবীর, নানক, শ্রীচৈতন্য
ধর্মহিন্দু ধর্ম
দেবতাকৃষ্ণ বা রাম
ভক্তি আন্দোলনের কারণ

ভূমিকা :- ভারতবর্ষ-এ সুলতানি যুগে ধর্মীয় জগতে দেখা দেয় এক নবজোয়ার। এই জোয়ারের বাহক ছিল ভক্তি ও সুফী আন্দোলনকারীরা।

ভক্তি আন্দোলনের কারণ

বিভিন্ন কারণে ভারতে ভক্তি আন্দোলন-এর সূত্রপাত হয়। যেমন –

(১) সামাজিক বঞ্চনা

হিন্দু ধর্মের পিছিয়ে পড়া মানুষরা নানা সময় উচ্চবর্ণের মানুষদের কাছে শাোষিত হত। তাদের সামাজিক মর্যাদাও ছিল নগন্য। সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে সমাজ ছিল অসাম্যে ভরা। তাই তারা সামাজিক মুক্তির আশায় ভক্তিবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়।

(২) শাসকদের উদারতা

বলা বাহুল্য, এদেশের বহু শাসক ভক্তিবাদ দ্বারা আকৃষ্ট হন। তাই তাঁদের ধর্মীয় সহনশীলতা ও উদারতায় ভারতে ভক্তি আন্দোলনে জোয়ার আসে। এই ব্যাপারে বাংলার সুলতান হুসেন শাহ, কাশ্মীরের সুলতান আদিল শাহ প্রমুখের নাম করা যায়।

(৩) সমন্বয়বাদের কারণ

ভক্তিবাদী সাধকরা ছিলেন উদার। ধর্ম সম্পর্কে তাঁদের সহজ ব্যাখ্যা সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে। ভক্তি ধর্মের সাধকরা একেশ্বরবাদ প্রচার করেন। তাঁরা জাতিভেদ ও কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন মানতেন না। তাঁদের প্রচেষ্টাতেই এদেশে গড়ে ওঠে এক সমন্বয়বাদী সংস্কৃতি।

(৪) সুফিবাদের প্রভাব

ভক্তিবাদের উন্মেষে সুফীবাদ-এর ভূমিকাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সুফি সন্তরা আল্লাহর প্রতি ভক্তিকেই মুক্তির একমাত্র পথ বলে মনে করেন। তাঁরা অতীন্দ্রিয়, দিব্য উপলব্ধি, ভক্তিতত্ত্ব, নৈতিকতা এবং হিন্দু-মুসলিম সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এই ধর্মীয় চিন্তা ভক্তিবাদের উন্মেষে বিশেষভাবে সহায়তা করে।

(৫) সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তি

  • (ক) ভক্তি আন্দোলনের উদ্ভবের পেছনে তৎকালীন সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। হিন্দু সমাজের উচ্চবর্ণের লোকেরা ছিল খুৎ, মুকাদ্দম ও সামন্ত শ্রেণীর মানুষ।
  • (খ) মুসলিম শাসক শ্রেণীও ছিল সামন্ততান্ত্রিক। দরিদ্র কৃষক, নিম্নবর্ণের মানুষ, শহরের কারিগর শ্রেণী ছিল নিপীড়িত ও শোষিত। ভক্তিবাদ সামাজিক ন্যায়ের কথা প্রচার করে এই সকল মানুষদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে।

(৬) বর্ণবৈষম্যের বিরোধিতা

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে সামাজিক ক্ষেত্রে বর্ণবৈষম্য তীব্র আকারে উপস্থিত ছিল। এই অবস্থায় রামানন্দ, কবির, শ্রীচৈতন্য প্রমুখ ভক্তিবাদের প্রচারকগণ বর্ণবৈষম্যের তীব্র বিরোধিতা করেন ও সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার বাণী প্রচার করেন।

(৭) ঈশ্বর লাভে ভক্তির পথ

হিন্দু ধর্মের বহুত্ববাদ, জটিল অনুষ্ঠান সর্বস্বতা ইত্যাদির পরিবর্তে শুধুমাত্র ভক্তির মাধ্যমেই ঈশ্বর লাভ করার এই ধর্মীয় মত হিন্দু ধর্মের একাংশকে ভক্তিবাদের প্রসারে উৎসাহিত করে।

উপসংহার :- এইভাবে ভারতবর্ষের অগণিত অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষ ভক্তি আন্দোলনের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়। ফলে এদেশে ভক্তি মতবাদ প্রসারের পথ সহজ হয়।

(FAQ) ভক্তি আন্দোলনের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ভক্তি আন্দোলনের দুজন গুরুর নাম লেখ।

গুরু নানক, শ্রীচৈতন্য, কবীর, রামানন্দ।

২. বাংলার কোন সুলতান ভক্তি আন্দোলনে বিশেষ অবদান রাখেন?

হুসেন শাহ।

৩. ভক্তিবাদ কি?

হিন্দু ধর্মে মনুষ্যরূপে ভগবানকে ভালবাসা ও ভক্তির মাধ্যমে লাভ করাই ভগবদ্ভক্তি বা ভক্তিবাদ।

৪. ভক্তির মূল কথা কি?

ঈশ্বরের প্রতি অশেষ অনুরাগ।

Leave a Comment