জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর জন্ম, বাণী, গান্ধীজির অনুপ্রেরণামূলক বাণী, সত্য নিয়ে গান্ধীজির বাণী, অহিংসা নিয়ে গান্ধীজির বাণী, শান্তি ও প্রেম সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী, স্বাধীনতা সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী, দেশ ও গণতন্ত্র সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী, পাপ ও পূণ্য সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী, প্রার্থনা সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী, ধর্ম সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী এবং ভয় ও ক্ষমা সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী গুলি সম্পর্কে জানবো।
মহাত্মা গান্ধীর বাণী প্রসঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর অনুপ্রেরণা মূলক বাণী, মহাত্মা গান্ধীর সত্য সম্পর্কে উক্তি, মহাত্মা গান্ধীর অহিংসা সম্পর্কে বাণী, মহাত্মা গান্ধীর শান্তি ও প্রেম সম্পর্কে বাণী, মহাত্মা গান্ধীর স্বাধীনতা সম্পর্কে বাণী, দেশ ও গণতন্ত্র সম্পর্কে মহাত্মা গান্ধীর বাণী, পাপ-পূণ্য সম্পর্কে মহাত্মা গান্ধীর বাণী, ধর্ম সম্পর্কে মহাত্মা গান্ধীর বাণী, মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষা মূলক বাণী ও উক্তি।
জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর বাণী
জন্ম | ২ অক্টোবর, ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ |
উপাধি | জাতির জনক |
অবদান | ভারত -এর স্বাধীনতা আন্দোলনের কাণ্ডারী |
বিখ্যাত উক্তি | “আমার জীবন আমার বার্তা” |
মৃত্যু | ৩০ জানুয়ারি, ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ |
ভূমিকা :- ভারতবর্ষ তথা বিশ্বের ইতিহাসে এমন কিছু মানুষের আবির্ভাব হয়েছিল যারা নিজেদের মতাদর্শ ও কর্মকান্ডের মাধ্যমে মানব সভ্যতা ও চিন্তাধারার মধ্যে আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন, যা সমাজ ও সভ্যতার উন্নতিতে এক অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। এরকমই এক জন মহান ব্যক্তি ছিলেন মহাত্মা গান্ধী বা গান্ধীজি।
গান্ধীজির জন্ম
তিনি ১৮৬৯ সালের ২রা অক্টোবর গুজরাটের পোরবন্দরে জন্মগ্রহণ করেন। তার সম্পূর্ণ নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। তার জন্মদিনে সারা দেশ জুড়ে গান্ধী জয়ন্তী উদযাপন করা হয়।
গান্ধীজির বাণী
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার অবদান অনঃস্বীকার্য। এর পাশাপাশি তিনি এমন কিছু উক্তি করেছিলেন, মা আমাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। এই উক্তি গুলিই গান্ধীজির বাণী হিসেবে অমর হয়ে আছে।
মহাত্মা গান্ধীর অনুপ্রেরণামূলক উক্তি
স্বাধীনতা সংগ্ৰামী মহাত্মা গান্ধীর অনুপ্রেরণামূলক বাণীগুলি হল –
- ১. ”আপনি নিজে সেই পরিবর্তন হোন যা আপনি সারা বিশ্বে সবার মধ্যে দেখতে চান।“
- ২. ”এমন ভাবে বাঁচো যেন কাল তুমি মরবে। এমনভাবে শেখো যেন তুমি সর্বদা বাঁচবে।“
- ৩. ”যদি সঠিক পথ বেছে নেন, তাহলে আশা ছাড়বেন না। কারণ, যতই বাধা-বিপত্তি আসুক না কেন একদিন না একদিন ভাল মানুষদের জয় হবেই হবে।“
- ৪. ”আপনার বিশ্বাস আপনার চিন্তাধারা হয়ে যায়, আপনার চিন্তাধারা আপনার শব্দে পরিণত হয়, আপনার শব্দ আপনার কর্ম হয়ে যায়, আপনার কর্ম আপনার অভ্যাসে পরিণত হয়, আপনার অভ্যাসই আপনার মূল্য, আপনার মূল্যই আপনার নিয়তি।”
- ৫. ”কাউকে সন্তুষ্ট করতে বা কোনও ঝামেলা এড়াতে কোনও কাজে ‘হ্যাঁ’ বলাটা সবথেকে বড় পাপ। যদি মনে করেন এই কাজটা আপনি করতে পারবেন না, তাহলে বিশ্বাসের সঙ্গে ‘না’ বলতে শিখুন।“
- ৬. ”একজন মানুষের চরিত্র এবং জীবন কতটা সুন্দর হবে, তা নির্ভর করে তাঁর মানসিকতার উপরে। তাই কোনও মানুষকে যদি ভিতর থেকে চিনতে চান, তাহলে তাঁর মানসিকতা কেমন, তা জানার চেষ্টা করুন।“
- ৭. ”এমন হতে পারে যে আপনি জানতে পারলেন না আপনার কর্মের ফলাফল কি হল। কিন্তু আপনি যদি কিছু না করেন, তবে কোন ফলাফলই উৎপন্ন হবে না।“
- ৮. ”মানুষ তার চিন্তাধারা নির্মিত প্রাণী, সে যা ভাবে তাই হয়ে যায়।“
- ৯. ”নিজস্ব প্রয়োজনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছোট জীব ইতিহাস পরিবর্তন করতে পারে।“
- ১০. ”এমন হতে পারে যে আপনি জানতে পারলেন না আপনার কর্মের ফলাফল কি হল। কিন্তু আপনি যদি কিছু না করেন, তবে কোন ফলাফলই উৎপন্ন হবে না।“
- ১১. ”সামান্য অভ্যাস অধিক উপদেশের থেকে ভালো।“
- ১২. “আমার অনুমতি ছাড়া আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে মানসিকভাবে আঘাত করতে পারেনি।“
- ১৩. ”নোংরা পায়ে ঘরের ভিতরে আসা যেমন ঠিক নয়, তেমনই নেতিবাচক চিন্তাকে প্রশ্রয় দেওয়াও উচিত নয়।“
- ১৪. ”পরিশ্রম করেই সন্তুষ্ট থাকুন। তার ফল কী ফেলেন তা নিয়ে বেশি ভাবতে যাবেন না।“
- ১৫. ”মানুষ হিসেবে আমাদের সবথেকে বড় দক্ষতা কি জানেন? নিজেকে বদলে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে আমাদের মধ্যে।“
- ১৬. ”কর্ম তার ফলের থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে সঠিক কর্ম করতে হবে। আপনি সেই কর্মের ফল পাবেন কিনা তা আপনার হাতে নেই। তার মানে এই নয় যে আপনি সঠিক কর্ম করা ছেড়ে দেবেন।“
- ১৭. “ক্রোধ এবং অসহিষ্ণুতা হল সঠিক বোধগম্যতার শত্রু।“
- ১৮. ”আমার জীবন আমার বার্তা।“
- ১৯. ”তখনই কথা বলো যখন তা মৌন থাকার থেকে ভালো।“
সত্য নিয়ে গান্ধীজির বাণী
জীবনে সত্যের গুরুত্ব অপরিসীম। সত্য সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী গুলি হল –
- ১. ”সত্য এক, পথ অনেক।“
- ২. ”যে সত্যে নম্রতার ছোঁয়া নই, সেই সত্য অহংকারীর ক্যারিকেচার ছাড়া আর কিছুই নয়।“
- ৩. ”সততা, নম্রতা এবং সাহস, প্রতিটি মানুষের মধ্যেই এই তিনটি গুণ থাকা চাই।“
- ৪. ”জনসমর্থন ছাড়া সত্য দাঁড়িয়ে থাকে। সত্য আত্মনির্ভরশীল।“
- ৫. ”সাহসীরাই মন খুলে ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারেন। কারণ, এই কাজ ভীতুদের সাধ্যের বাইরে।“
অহিংসা নিয়ে গান্ধীজির বাণী
জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর জীবনে অহিংসা এক অপরিহার্য উপাদান। অহিংসা সম্পর্কে তার বাণীগুলি হল –
- ১. ”আমি হিংসার বিরোধিতা করি কারণ যখনই মনে হয় হিংসার দ্বারা কিছু ভালো হচ্ছে তখন সেটা অস্থায়ী হয় আর খারাপ হলে সেটা স্থায়ী হয়।“
- ২. ”হিংসার ছাপ সহজে মিটতে চায় না। তাই অহিংসার পথে অগ্রসর হলেই মানুষের মঙ্গল।“
- ৩. ”হিংসা গড়তে জানে না। সে শুধু ধ্বংস করে।“
শান্তি ও প্রেম নিয়ে গান্ধীজির বাণী
জীবনে শান্তি ও প্রেম সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী গুলি হল –
- ১. ”শান্তির কোন পথ নেই, কেবলমাত্র শান্তি আছে।“
- ২. ”যে দিন প্রেমের শক্তি, শক্তির প্রেম থেকে বড় হবে সেই দিন বিশ্বে শান্তি কায়েম হবে।“
- ৩. ”প্রত্যেক মানুষকে তার নিজের মধ্যেই শান্তি খুঁজতে হবে। আর শান্তিকে বাস্তবায়িত করার জন্য বাহ্যিক পরিস্থিতি দ্বারা নিজেকে অপ্রভাবিত রাখতে হবে।“
- ৪. ”আমরা যদি দুনিয়াতে প্রকৃত শান্তি চাই, তবে তা শিশুদের সাথে শুরু করতে হবে।“
- ৫. ”যেখানে ভালবাস রয়েছে, সেখানেই তো জীবনের সন্ধান মেলে।“
স্বাধীনতা সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী
স্বাধীনতা বিষয়টি সকলের কাছেই স্বতন্ত্র মর্যাদা বহন করে আনে।স্বাধীনতা সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী গুলি হল –
- ১. ”আমি যেমন, ঠিক সেই ভাবে নিজেকে মেলে ধরাটাই আসল স্বাধীনতা।“
- ২. ”জীবন না দিলে যেমন স্বাধীনতার স্বাদ মেলে না, তেমনই স্বাধীনতাকে বাঁচিয়ে রাখতেও প্রয়োজনে জীবন দিতে হবে।“
- ৩. ”স্বাধীনতা এবং দাসত্ব, দুইই হল মানুষের মেন্টাল স্টেট।“
- ৪. ”দেশের স্বাধীনতা শুধু বীরত্বের মধ্যে দিয়েই অর্জন করা যায় না।“
- ৫.”ভুল করার স্বাধীনতা না থাকলে সেই স্বাধীনতা মূল্যহীন।“
দেশ ও গণতন্ত্র সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী
দেশ ও গণতন্ত্র সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী গুলি হল –
- ১. ”সাধারণ মানুষের হাতে যদি নিজেদের মতো করে বেঁচে থাকার অধিকার না থাকে, তাহলে সেই রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের তকমা দিলে ভুল কাজ হবে।“
- ২. ”রাষ্ট্র নিজের দায়িত্ব সঙ্গে পালন না করলে শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাধ গড়ে তোলাটাই একজন নাগরিকের প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য।“
- ৩. ”প্রকৃত গণতন্ত্রে একজন সবল ব্যক্তির যে অধিকার, সেই একই অধিকার একজন দুর্বলেরও থাকা উচিত।“
- ৪. “গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সবারই মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে।“
- ৫. ”একটি দেশের মহানতা এবং নৈতিক প্রগতি এই বিষয়ে মাপা যেতে পারে যে সেই দেশে জন্তু-জানোয়ার দের সাথে কি রকম ব্যবহার করা হয়।“
পাপ পূণ্য সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী
জীবনে পাপ পূণ্য সম্পর্কে প্রতিটি মানুষেরই নিজস্ব ভাবনা চিন্তা আছে।পাপপূণ্য সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী গুলি হল –
- ১. “কর্মহীন ধন, অন্তরাত্মা হীন সুখ, মানবতাহীন বিজ্ঞান, চরিত্রহীন জ্ঞান, নীতিহীন রাজনীতি, নৈতিকতা ছাড়া ব্যবসা, ত্যাগ ছাড়া পুজো – এই সাতটি মহাপাপ।“
- ২. ”পাপকে ঘৃণা করুন, পাপীকে নয়।“
প্রার্থনা সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী
আমরা প্রত্যেকেই নিজের মতো করে প্রার্থনা করে থাকি। প্রার্থনা সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী গুলি হল –
- (১) ”প্রার্থনা চাওয়া নয়। প্রার্থনা হল আত্মার লালসা। প্রার্থনা হল প্রতিদিন নিজের দুর্বলতার স্বীকারোক্তি। প্রার্থনার বচনে মন লাগানো, বচন থাকতেও মন না লাগানোর থেকে ভালো।“
- ২. ”একটি কাজের মাধ্যমে কাউকে খুশি করা প্রার্থনায় রত হাজার মাথার থেকে ভালো।“
ধর্ম সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী
মানব জীবনে ধর্ম ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে। ধর্ম সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী গুলি হল –
- ১. ”বিশ্বের সব ধর্ম অন্যান্য বিষয়ে নানা মত পোষণ করলেও এই বিষয়ে একমত যে দুনিয়াতে সত্য ছাড়া আর কোনো কিছুই চিরদিন বাঁচেনা।“
- ২. ”আমার ধর্ম সত্য ও অহিংসার উপর নির্ভরশীল। সত্য আমার ঈশ্বর। অহিংসা তাকে পাওয়ার উপায়।“
- ৩. ”আমি তাকেই ধার্মিক মনে করি যে অন্যের ব্যথা বুঝতে পারে।“
- ৪. ”আমি দুনিয়ার সব ধর্মের মূল সত্যে বিশ্বাস করি।“
- ৫. ”হ্যাঁ আমি একজন মুসলিম, একজন খ্রিস্টান, একজন বৌদ্ধ এবং একজন ইহুদি।“
- ৬. ”ঈশ্বরের কোন ধর্ম নেই।“
বিশ্বাস নিয়ে গান্ধীজির বাণী
বিশ্বাস বিষয়টি মানুষের জীবনে এক আলাদা অনুভূতি।বিশ্বাস সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী গুলি হল –
- ১. “কোন কিছুতে বিশ্বাস করা কিন্তু তাতে জীবন অতিবাহিত না করা অন্যায়।”
- ২. ”মনুষত্বের উপর বিশ্বাস হারাবেন না। মনুষত্বপবিত্র সাগরের মত। সাগরের কয়েক ফোঁটা জল নোংরা হলে সমস্ত সাগর নোংরা হয়ে যায় না।“
- ৩. ”চিন্তার থেকে অধিক আর কোন কিছুই শরীরের ক্ষতি করে না এবং যে একটু হলেও ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস রাখে তার কোনো কিছুর জন্য চিন্তা হলে লজ্জিত হওয়া উচিত।“
ভয় ও ক্ষমা নিয়ে গান্ধীজির বাণী
মানুষের জীবনের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি গুলির মধ্যে ভয় ও ক্ষমা অন্যতম।ক্ষমা সম্পর্কে গান্ধীজির বাণী গুলি হল –
- ১. ”ভয়ই হল শত্রু, যদিও আমরা সেটাকে ঘৃণা ভেবে থাকি, কিন্তু আসলে এটা ভয়।“
- ২. ”যে দুর্বল সে কোনোদিনও ক্ষমা করতে পারে না। ক্ষমা হল বলবানের লক্ষণ।“
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “মহাত্মা গান্ধীর বাণী” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) গান্ধীজির বাণী আলোচনা প্রসঙ্গে মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
২ রা অক্টোবর, ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ।
মহাত্মা গান্ধী।
বিহারের চম্পারণ সত্যাগ্ৰহ।
নাথুরাম গডসে।