গৌতম বুদ্ধের পালিতা মাতা মহাপ্রজাপতি গৌতমী প্রসঙ্গে বুদ্ধদেব ও আনন্দ, মহাপ্রজাপতীর পরিচয়, বুদ্ধদেবের কাছে মহাপ্রজাপতীর প্রব্রজ্যা প্রার্থনা, পদযাত্রায় মহাপ্রজাপতি, মহাপ্রজাপতি সহ মহিলাদের সঙ্ঘে প্রবেশাধিকারের জন্য বুদ্ধদেবের নিকট আনন্দের প্রার্থনা, গৌতম বুদ্ধের প্রথম শিষ্যা মহাপ্রজাপতি, মহাপ্রজাপতীর হয়ে আনন্দের যুক্তি, মহাপ্রজাপতি সহ ভিক্ষুণীদের প্রতি অষ্টানুশাসন, মহাপ্রজাপতি কর্তৃক ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীদের সমমর্যাদার আবেদন এবং মহাপ্রজাপতীর প্রতি বুদ্ধদেবের উপদেশ প্রদান সম্পর্কে জানবো।
ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসে মহাপ্রজাপতি গৌতমী প্রসঙ্গে গৌতম বুদ্ধের পালিতা মাতা মহাপ্রজাপতি গৌতমী, মহাপ্রজাপতি গৌতমীর পরিচয়, গৌতম বুদ্ধের প্রথম শিষ্যা মহাপ্রজাপতি গৌতমী ও মহাপ্রজাপতী গৌতমীর প্রতি বুদ্ধদেবের উপদেশ প্রদান বিষয়ে জানব।
মহাপ্রজাপতি গৌতমী
ঐতিহাসিক চরিত্র | মহাপ্রজাপতি |
পরিচিতি | প্রথম বৌদ্ধ ভিক্ষুণী |
স্বামী | শুদ্ধোদন |
পালিত পুত্র | গৌতম বুদ্ধ |
ভূমিকা :- বৌদ্ধসঙ্ঘের প্রথম সংগঠনকালে স্ত্রীলোকদের সঙ্ঘে প্রবেশাধিকার ছিল না। বুদ্ধদেব মানবের দুর্বলতা সম্বন্ধে অভিজ্ঞ ছিলেন বলেই সঙ্ঘগণ্ডীর ভিতরে রমণীর প্রবেশের বিরোধী ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, যদি নারীজাতিকে ভিক্ষু-সম্প্রদায়ের সাথে মিশতে দেওয়া হয় তাহলে তার পরিণাম শুভ হবে না।
বুদ্ধদেব ও আনন্দ
আনন্দ বুদ্ধদেবের পিতৃব্যপুত্র ছিলেন। তিনি ও বুদ্ধ একই দিনে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। আনন্দ বুদ্ধদেবের প্রতি একান্ত স্নেহশীল ও অনুরাগী ছিলেন। বুদ্ধের পরিনির্বাণ পর্যন্ত আনন্দ সদাসর্বদা বুদ্ধের সঙ্গে থাকতেন এবং কায়মনো বাক্যে তার পরিচর্যা করতেন। তিনি সর্বদা একাগ্রচিত্তে বুদ্ধের উপদেশসমূহ শ্রবণ করিতেন এবং অতি মধুরভাবে অপরকে বুদ্ধদেবের সেই সকল উপদেশের গভীর তত্ত্ব বুঝাইয়া দিতেন ।
মহাপ্রজাপতীর পরিচয়
মহামায়া বুদ্ধদেবের জননী। মহাপ্রজাপতি মহামায়ার সহোদরা এবং সপত্নী। মহামায়ার মৃত্যুর পর মহাপ্রজাপতি বুদ্ধদেবকে শৈশবকালে লালনপালন করেছিলেন।
বুদ্ধদেবের কাছে মহাপ্রজাপতীর প্রব্রজ্যা প্রার্থনা
শুদ্ধোদনের মৃত্যুর পর মহাপ্রজাপতি বুদ্ধদেবকে বললেন “আমি বিধবা হয়েছি, আমাকে এক্ষণে প্রব্রজ্যা প্রদান কর।” বুদ্ধদেব এতে অস্বীকৃত হলেন।
পদযাত্রায় মহাপ্রজাপতি
মহাপ্রজাপতি এতে নিরস্তা হলেন না। তিনি শাক্যবংশীয়া আরও অনেক মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে ভিক্ষা করতে করতে পদব্রজে বৈশালীর দিকে যাত্রা করলেন। যে সকল মহিলা কোনোদিন রাজ অন্তঃপুর হতে বার হন নি আজ তারাই ধর্মের জন্য যোজনের পর যোজন পথ পদব্রজে অগ্রসর হতে লাগলেন। তাঁদের পা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল, তবু তারা সঙ্কল্প ত্যাগ করলেন না।
মহাপ্রজাপতি সহ মহিলাদের সঙ্ঘে প্রবেশাধিকারের জন্য বুদ্ধদেবের নিকট আনন্দের প্রার্থনা
এই দৃশ্য দেখে আনন্দের চিত্ত বিগলিত হল। তিনি বুদ্ধদেবের নিকট মহিলাদেরকে সঙ্ঘে গ্রহণ করবার জন্য অনুরোধ করলেন। তখন বুদ্ধদেব তাকে বললেন, “যদি স্ত্রীলোকেরা গৃহত্যাগিনী হয়ে সন্ন্যাসিনী না হয় তাহলে আমার প্রবর্তিত ধর্ম সহস্র বছরকাল জীবিত থাকবে। আজ তাঁদেরকে সঙ্ঘে প্রবেশাধিকার দিলে এই ধর্মের পবিত্রতা শীঘ্রই বিনষ্ট হবে, অল্প কালের মধ্যে সত্যধর্ম লোপ পাবে।”
গৌতম বুদ্ধের প্রথম শিষ্যা মহাপ্রজাপতি
অনেক সাধ্যসাধনার পর বুদ্ধদেব রমণীদেরকে ভিক্ষুদলে গ্রহণ করতে স্বীকৃত হলেন এবং মহাপ্রজাপতি দেবীকে তাঁর প্রথম শিষ্যারূপে গ্রহণ করলেন।
বুদ্ধদেবের কাছে আনন্দের প্রশ্ন
এই সময়ে বুদ্ধদেবের সাথে আনন্দের কথোপকথনটি প্রণিধানযোগ্য। আনন্দ মহিলাদিগকে সঙ্ঘমধ্যে গ্রহণ করবার পক্ষে অনুরোধ করতে গিয়ে বুদ্ধদেবকে বলেছিলেন, “স্ত্রীলোক সন্ন্যাসধর্ম অবলম্বন করলে কি তার ফল লাভ হয় না ? তারা কি আর্যমার্গ অনুসরণ করে অর্হৎ হবার অধিকারিণী নয় ?”
আনন্দের প্রতি বুদ্ধের উত্তর
বুদ্ধদেব উত্তরে বলেন, “তারা অধিকারিণী সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই”।
মহাপ্রজাপতীর হয়ে আনন্দের যুক্তি
“তবে কেন মহাপ্রজাপতীকে সঙ্ঘভুক্তা করতে অস্বীকৃত হচ্ছেন ? তিনি আপনার মাতৃবিয়োগের পর স্বীয় স্তনদুগ্ধ দিয়ে আপনাকে লালনপালন করেছিলেন। তিনি আপনার বিশেষ ভক্ত, পরম উপকারিণী সেবিকা, তাঁকে এই অধিকার হতে বঞ্চিত করা কর্তব্য নয়।”
মহাপ্রজাপতি সহ ভিক্ষুণীদের প্রতি অষ্টানুশাসন
আনন্দের এইরূপ যুক্তি ও তর্কের মধ্যে পড়ে অবশেষে বুদ্ধদেব মহাপ্রজাপতীকে সঙ্ঘমধ্যে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু বুদ্ধদেব তপস্বিনীদের জন্য কতকগুলি নিয়ম বেধে দিয়েছিলেন। সে সকল নিয়ম কতকটা মনুর বিধানের মত। সেই বিধানসমূহ অষ্টানুশাসন নামে অভিহিত।
মহাপ্রজাপতি কর্তৃক ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীদের সমমর্যাদার আবেদন
মহাপ্রজাপতি এই ধর্মানুশাসন মেনে নিয়ে বুদ্ধের প্রথমা শিষ্যা রূপে পরিগৃহীতা হয়েছিলেন। পরে এক সময়ে মহাপ্রজাপতি ভিক্ষু এবং ভিক্ষুণী গুণ ও কর্মানুসারে সমান মানমর্যাদার অধিকারী হতে পারে সেরূপ প্রস্তাব করেন, কিন্তু বুদ্ধদেব তা স্বীকার করেন নি।
মহাপ্রজাপতীর প্রতি বুদ্ধদেবের উপদেশ
আদর্শ সন্ন্যাসিনীর কিরূপ ভাবে জীবন যাপন করা কর্তব্য তা মহাপ্রজাপতীর প্রতি বুদ্ধদেবের উপদেশ হতে জানা যায়। তৃষ্ণা পরিহার, অল্পেতে সন্তুষ্ট থাকা, বৃথা আমোদ প্রমোদ হতে দূরে থেকে নির্জনে ধ্যানধারণা করা, ধর্ম পালন করা, আলস্য ত্যাগ করে শ্রমশীলা হওয়া, অভিমান পরিত্যাগ করে সুশীলা, বিনয়ী ও নম্র হওয়া, সকলের সাথে সদ্ভাবে সন্তোষের সাথে জীবন যাপন করা, প্রত্যেক বৌদ্ধতপস্বিনীরই অবশ্যকর্তব্য বলে বুদ্ধদেব ঘোষণা করেছিলেন ।
উপসংহার :- ভিক্ষুদের তুলনায় ভিক্ষুণীদের সংখ্যা কম হলেও, বৌদ্ধতাপসীরা জনসমাজে বিশেষ সম্মানিতা ছিলেন। তাদের বিদ্যা, বুদ্ধি, কৌশল, সম্ভ্রান্ত পরিবারে গতিবিধি, তাঁদের সামাজিক প্রতিষ্ঠার পরিচয়, আমরা নানা ভাবে জানতে পারি। বৌদ্ধ-পরিব্রাজিকারা নিজ বিদ্যাবুদ্ধি ও পুণ্যবলে শ্রমণ পদে আরূঢ়া হতে পারতেন। এমন কি অর্হতী হবার অধিকারিণীও হতেন। অনেক বৌদ্ধ তাপসীর বুদ্ধি ও পাণ্ডিত্য এবং কবি-প্রতিভা বৌদ্ধসমাজে বিশেষ ভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল।
(FAQ) মহাপ্রজাপতি গৌতমী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
গৌতম বুদ্ধের পালনকারী মাতা ও প্রথম শিষ্যা।
আনন্দ।
শুদ্ধোদন।