গঙ্গাসাগর স্থানটি প্রসঙ্গে অবস্থান, ভৌগোলিক দিক, পর্যটকদের আকর্ষণ, কপিল মুনির জন্ম রহস্য, সগর রাজার কাহিনী, হিন্দু তীর্থস্থান, গঙ্গাসাগর মেলা, কপিলমুনির আশ্রম ও স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে জানবো।
ঐতিহাসিক স্থান গঙ্গাসাগর
ঐতিহাসিক স্থান | গঙ্গাসাগর |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা |
বিশেষ দ্রষ্টব্য | কপিলমুনির আশ্রম |
মেলা | গঙ্গাসাগর মেলা |
ভূমিকা :- ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সাগর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের একটি গ্রাম গঙ্গাসাগর।
গঙ্গাসাগরের অবস্থান
২১°৩৯′১০″ উত্তর ৮৮°০৪′৩১″ পূর্বে গঙ্গাসাগর অবস্থিত। সমুদ্র সমতল থেকে স্থানটির গড় উচ্চতা হল ৪ মিটার।
গঙ্গাসাগরের ভৌগোলিক দিক
সম্পূর্ণ স্থানটি গঙ্গা ডেল্টায় অবস্থিত। ডেল্টার দক্ষিণ অংশে হেনরি দ্বীপ, সাগর দ্বীপ, ফ্রেডরিক দ্বীপ এবং ফ্রেজারগঞ্জ দ্বীপের মতো অসংখ্য দ্বীপ রয়েছে।
পর্যটকদের আকর্ষণের স্থান গঙ্গাসাগর
এই অঞ্চলটি বিশেষ করে গঙ্গাসাগর এবং ফ্রেজারগঞ্জ-বকখালী বিপুল সংখ্যক পর্যটককে আকর্ষণ করে। ভবিষ্যতে গোবর্ধনপুরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
গঙ্গাসাগরে অবস্থানরত কপিল মুনির জন্ম রহস্য
কার্দম মুনি নামে একজন পবিত্র ঋষি বিষ্ণুর সাথে একটি চুক্তি করেছিলেন যে তিনি বৈবাহিক জীবনের কঠোরতা ভোগ করবেন যদি বিষ্ণু তাঁর পুত্র হিসাবে অবতারিত হন। এরপর যথাসময়ে কপিল মুনি বিষ্ণুর অবতার হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং এক মহান সাধক হয়েছিলেন। কপিল মুনির আশ্রম গঙ্গাসাগরে অবস্থিত।
সগর রাজার কাহিনী সম্পর্কে গঙ্গাসাগর
- (১) একদিন রাজা সগরের যজ্ঞের ঘোড়া অদৃশ্য হয়ে গেল। আসলে এই ঘোড়া ইন্দ্র দ্বারা চুরি করা হয়েছিল। রাজা তাঁর ৬০,০০০ পুত্রকে ঘোড়ার সন্ধানে পাঠান। তারা কপিল মুনির আশ্রমের পাশে ঘোড়াটি পেয়েছিলেন। আসলে ইন্দ্রই ঘোড়াটিকে এখানে লুকিয়ে রেখেছিল।
- (২) এই চোরের জন্য রাজার ছেলেরা কপিল মুনিকে অভিযুক্ত করেছিল। মিথ্যা অভিযোগের কারণে মুনি তার ক্রোধে এই ছেলেদের ছাইয়ে পরিণত করেন এবং তাদের প্রাণকে নরকে প্রেরণ করেছিলেন।
- (৩) পরে কপিল মুনি রাজা সগরের বংশধরদের প্রার্থনা স্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেন যদি দেবী গঙ্গা পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়ে আসেন তার পবিত্র জলের সঙ্গে ছাই মিশ্রণে (“তর্পণ”) তারা উদ্ধার হবে।
- (৪) গভীর ধ্যানে মগ্ন হয়ে রাজা ভাগীরথ গঙ্গাকে স্বর্গ থেকে নামার জন্য শিবকে প্ররোচিত করেছিলেন। এর ফলে গঙ্গার মর্তে আগমন ঘটে এবং ৬০,০০০ পুত্র মুক্তি বা মোক্ষ লাভ করে। তবে গঙ্গা নদী পৃথিবীতেই থেকে যায়।
গঙ্গাসাগরে মকর সংক্রান্তি উৎযাপন
মর্তে গঙ্গার এই আগমনের তারিখটি ছিল বর্তমান গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের জানুয়ারীর ১৫ তম দিন, যা মকর সংক্রান্তি নামে পরিচিত। এই সময় সূর্য মকর নক্ষত্রমুখে প্রবেশ করে।
হিন্দু তীর্থস্থান গঙ্গাসাগর
গঙ্গাসাগর হিন্দু তীর্থস্থান। প্রতিবছর মকর সংক্রান্তির দিন কয়েক লক্ষ হিন্দু গঙ্গা ও বঙ্গোপসাগরের সঙ্গমে পবিত্র স্নানের জন্য ভিড় জমায় এবং কপিল মুনি মন্দিরে প্রার্থনা করতে আসে।
ঐতিহাসিক গঙ্গাসাগর মেলা
সাগর দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলে যেখানে গঙ্গা বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করেছে সেখানেই প্রতিবছর গঙ্গাসাগর মেলা হয়। এই সঙ্গমকে গঙ্গাসঙ্গম বা গঙ্গাসাগরও বলা হয়।
গঙ্গাসাগরে কপিল মুনির আশ্রম
এই গঙ্গাসঙ্গমের কাছে কপিল মুনির মন্দির। গঙ্গাসাগর তীর্থযাত্রা ও মেলা কুম্ভ মেলার ত্রিবার্ষিকী স্নানের পরে মানবজাতির দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত এই গঙ্গাসাগর মেলা।
বিখ্যাত স্থান গঙ্গাসাগরের স্বাস্থ্য সেবা
গঙ্গাসাগরে একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে ৬ টি শয্যা আছে। তাছাড়া সরকার এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
উপসংহার :- কথায় রয়েছে, ‘সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার।’ মানুষের বিশ্বাস, গঙ্গাসাগর একবার যাওয়াই সব তীর্থস্থানে পুণ্য লাভের সমান।
(FAQ) গঙ্গাসাগর স্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
পশ্চিমবঙ্গ।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা।
গঙ্গাসাগরে।
গঙ্গাসাগর মেলা।