শাহজাহানের রাজত্বকালে দুর্ভিক্ষ

শাহজাহানের রাজত্বকালে দুর্ভিক্ষ প্রসঙ্গে মহামারীর আক্রমণ, উত্তরে বহু লোকের আগমন, আব্দুল হামিদের অভিমত, দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা, সরকারি ত্রাণ ব্যবস্থা, খাদ্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, মৃত্যু, স্মিথের অভিমত ও ঈশ্বরী প্রসাদের অভিমত সম্পর্কে জানবো।

শাহজাহানের রাজত্বকালে দুর্ভিক্ষ

ঐতিহাসিক ঘটনাশাহজাহানের রাজত্বকালে দুর্ভিক্ষ
সময়কাল১৬৩০ খ্রি
স্থানগুজরাট, দাক্ষিণাত্য
সাম্রাজ্যমুঘল সাম্রাজ্য
সম্রাটশাহজাহান
শাহজাহানের রাজত্বকালে দুর্ভিক্ষ

ভূমিকা :- শাহজাহানের দরবারের ঐতিহাসিক আবদুল হামিদ লাহোরীর মতে, ১৬৩০ খ্রিস্টাব্দে ব্যাপক অনাবৃষ্টির ফলে গুজরাট খাদেশ ও দক্ষিণের অন্যান্য স্থানে শস্য হানি ঘটে। এর ফলে এক মারাত্মক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।

শাহজাহানের রাজত্বকালে মহামারীর আক্রমণ

খাদ্যাভাবে লোকে অখাদ্য কুখাদ্য খেতে বাধ্য হয়। মানুষের মাংসও মানুষের কাছে অভক্ষ্য ছিল না। এর ফলে এক মহামারীর আক্রমণে হাজার হাজার লোকের মৃত্যু হয়।

শাহজাহানের রাজত্বকালে উত্তরে বহু লোকের আগমন

রাস্তাঘাটগুলি নোংরা ও মৃতদেহে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বহুলোক প্রাণ বাঁচাতে দক্ষিণ থেকে উত্তরে চলে আসে।

শাহজাহানের রাজত্বকালে ভূমি সম্পর্কে হামিদের অভিমত

আবদুল হামিদের মতে, “একদা যে গ্রামগুলির ভূমি উর্বরতার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল এখন সেগুলি পতিত জমিতে পরিণত হয়।”

শাহজাহানের রাজত্বকালে দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা

ইংরাজ পর্যটক পিটার মান্ডিও এই দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতার কথা বলেছেন।

শাহজাহানের রাজত্বকালে সরকারী ত্রাণ ব্যবস্থা

শাহজাহান জনসাধারণের কষ্ট লাঘবের জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যেমন –

  • (১) লঙ্গরখানা হতে রান্না খাদ্য বিতরণের ব্যবস্থা করেন।
  • (২) বুরহানপুর প্রভৃতি স্থানে দুর্ভিক্ষ-পীড়িত লোকেদের মধ্যে প্রত্যহ ৫০০০ টঙ্কা বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়।
  • (৩) ৭০ লক্ষ টাকা রাজস্ব মকুব করা হয়।
  • (৪) মনসবদারদেরও দুর্ভিক্ষ পীড়িতদের জন্য সেবামূলক প্রকল্প চালু করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

শাহজাহানের রাজত্বকালে খাদ্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি

খাদ্যদ্রব্যের মূল্য কমার কোনো লক্ষণ দেখা যায় নি। পিটার মান্ডি বলেছেন যে, খাদ্যের দাম প্রায় ৭ গুণ বেড়ে যায়।

শাহজাহানের রাজত্বকালে বহু লোকের মৃত্যু

খাদ্যাভাবে দেশীয় লোক হাজারে হাজারে মারা যায়। ১১ জন ইংরাজ বণিক, ৩ জন ডাচ বণিক মহামারীর আক্রমণে মারা যায়।

স্মিথের বর্ণনায় শাহজাহানের সময় দুর্ভিক্ষ

ভিনসেন্ট স্মিথ মন্তব্য করেছেন যে, বাদশাহের দুর্ভিক্ষ নিরোধ ব্যবস্থা অপ্রচুর ছিল। দুর্ভিক্ষের সময় তিনি রাজস্বের কিছু অংশ হ্রাস করেন মাত্র। পুরোপুরি রাজস্ব আদায় মুলতুবী করেন নি। এজন্য বহু লোকের দুঃখ-কষ্ট বৃদ্ধি পায়।

শাহজাহানের রাজত্বকালে দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে ঈশ্বরী প্রসাদের অভিমত

ডঃ ঈশ্বরীপ্রসাদ, স্মিথের অভিমতের বিরোধিতা করেছেন। ঈশ্বরীপ্রসাদের মতে, রাজস্বের ১/৩ অংশ ছাড় দেওয়া হয়।

উপসংহার :- এই ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষের মোকাবিলায় শাহজাহান সর্বশক্তি নিয়োগ করেন এমন কথা বলা যায় না।

(FAQ) শাহজাহানের রাজত্বকালে দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. শাহাজাহানের আমলে কখন দুর্ভিক্ষ হয়?

১৬৩০ খ্রিস্টাব্দে।

২. শাহজাহানের আমলে কোথায় দুর্ভিক্ষ হয়?

গুজরাট ও দাক্ষিণাত্যে।

৩. শাহজাহানের আমলে দুর্ভিক্ষের বর্ণনা দিয়েছেন কে?

আব্দুল হামিদ লাহোরী।

৪. শাহজাহানের আমলে দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতার কথা কে বলেছেন?

ইংরেজ পর্যটক পিটার মান্ডি।

Leave a Comment