বাস্তিল দুর্গের পতন

ফ্রান্সে ফরাসি বিপ্লব কালে বাস্তিল দুর্গের পতন -এর কারণ হিসেবে জনতার উল্লাস, বিদেশি সৈন্য মোতায়েন, ফসলহানি ও দুর্ভিক্ষ, সাধারণ মানুষের মনে আশার সঞ্চার, জনপ্রিয় অর্থমন্ত্রী নেকারের পদচ্যুতি, জনতার হাতে রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ, বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ ও ধ্বংস, বাস্তিল দুর্গের পতনের গুরুত্ব হিসেবে রাজার মন্তব্য, রাজা ও অভিজাতদের মনোবল ভঙ্গ, প্যারিস কমিউন গঠন, জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠন, গুডউইনের মন্তব্য ও রাজার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার পতন সম্পর্কে জানবো।

বাস্তিল দুর্গের পতন

ঐতিহাসিক ঘটনাবাস্তিল দুর্গের পতন
ফরাসি স্বৈরতন্ত্রের প্রতীকবাস্তিল দুর্গ
পতনকাল১৪ জুলাই, ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দ
স্থানপ্যারিস
রাজাষোড়শ লুই
বাস্তিল দুর্গের পতন

ভূমিকা :- ফরাসি স্বৈরতন্ত্র ও অত্যাচারের একমাত্র কেন্দ্র ছিল বাস্তিল দুর্গ। এই দুর্গে রাজতন্ত্রের বিরোধী ব্যক্তিদের বন্দি করে রাখা হত ও অত্যাচার করা হত।তাই জনগণের কাছে বাস্তিল দুর্গ ছিল অত্যাচারের প্রতীক।

বাস্তিল দুর্গের পতনের কারণ

বাস্তিল দুর্গের পতনের কারণ গুলি ছিল নিম্নরূপ।–

(১) ফ্রান্সের প্যারিস ও ভার্সাই শহরের জনতার উল্লাস

জাতীয় সভার আহ্বান ও বুর্জোয়াদের সাফল্যে প্যারিস ও ভার্সাইয়ের জনতার মধ্যে প্রভূত উল্লাস দেখা যায়।

(২) ফ্রান্সের প্যারিস ও ভার্সাই শহরে বিদেশি সৈন্য মোতায়েন

তৃতীয় সম্প্রদায়ের দাবি মেনে নিলেও ষোড়শ লুই খুশি ছিলেননা। আন্দোলন দমনের জন্য তিনি প্যারিস ও ভার্সাইয়ে প্রায় ত্রিশ হাজার বিদেশি সৈন্য মোতায়েন করেন।

(৩) ফ্রান্সের প্যারিস শহরে ফসলহানি ও দুর্ভিক্ষ

প্যারিস শহরে তখন স্থায়ী লোকসংখ্যা ছিল প্রায় সাত লক্ষ। এই সময় ফসলহানি ও দুর্ভিক্ষ-জনিত কারণে খাদ্যের দাবিতে হাজার হাজার মানুষ গ্রাম থেকে প্যারিসে এসে শহরের সর্বহারা মানুষদের সঙ্গে যোগ দেয়। খাদ্যের দাবিতে প্যারিস উত্তাল হয়ে ওঠে।

(৪) ফ্রান্সের সাধারণ মানুষের মনে আশার সঞ্চার

লেফেভর বলছেন যে, স্টেটস জেনারেল আহ্বানের ফলে সাধারণ মানুষের মনে প্রবল আশার সঞ্চার হয় এবং তারা মনে করে যে তাদের দুর্দশার অবসান ঘটবে।

(৫) ফ্রান্সের জনপ্রিয় অর্থমন্ত্রী নেকারের পদচ্যুতি

ইতিমধ্যে ২২শে জুন ষোড়শ লুই জনপ্রিয় অর্থমন্ত্রী নেকারকে পদচ্যুত করলে গণ-অসন্তোষ চরমে ওঠে। জনতা হিংসাশ্রয়ী হয়ে ওঠে।

(৬) জনতার হাতে ফ্রান্সের রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ

রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড গড়ে ওঠে – অস্ত্রের সন্ধানে লুণ্ঠিত হয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বন্দুকের দোকান ও কামারশালা। রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ জনতার হাতে চলে যায়।

বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ ও ধ্বংস

প্যারিস শহরের উত্তেজিত জনতা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ই জুলাই কুখ্যাত বাস্তিল দুর্গ দখল করে ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে সমস্ত বন্দিরা মুক্তি পায়।

বাস্তিল দুর্গের পতনের গুরুত্ব

বাস্তিলের পতন একটি সাধারণ ঘটনা হলেও এর প্রতীকী মূল্য ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন –

(১) বাস্তিল দুর্গের পতন সম্পর্কে রাজার মন্তব্য

এই দুর্গের পতনের সংবাদে রাজা বলে ওঠেন –’That is a revolt.’। এর উত্তরে রাজার জনৈক সহচর বলেন, “Sire, it is not a revolt, it is a revolution!”.

(২) বাস্তিল দুর্গের পতনের ফলে রাজা ও অভিজাতদের মনোবল ভঙ্গ

বাস্তিল দুর্গ ছিল স্বৈরাচারী শাসনের প্রতীক। এখানে বিনা বিচারে নিরপরাধ মানুষদের বন্দি করে রাখা হত। বাস্তিলের পতনে রাজা ও অভিজাতবর্গ মনোবল হারিয়ে ফেলে।

(৩) বাস্তিল দুর্গের পতনের পর প্যারিস কমিউন গঠন

প্যারিসের শাসনভার বুর্জোয়াদের হাতে চলে যায়। তারা ‘প্যারিস কমিউন’ গঠন করে প্যারিসের পৌর শাসন পরিচালনা করতে থাকে। প্যারিসের অনুকরণে ফ্রান্স -এর অন্যান্য স্থানেও অনুরূপ ‘কমিউন’ বা পৌর পরিষদ গড়ে ওঠে।

(৪) বাস্তিল দুর্গের পতনের পর জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠন

বাস্তিল দুর্গের পতনের পর লাফায়েৎ-এর নেতৃত্বে ‘জাতীয় রক্ষীবাহিনী’ গঠিত হয়।

(৫) বাস্তিল দুর্গের পতন সম্পর্কে গুডউইনের মন্তব্য

ঐতিহাসিক গুডউইন বলেন, “বিপ্লবে বাস্তিলের পতনের মতো বহুমুখী ও সুদূরপ্রসারী ঘটনা আর ঘটেনি।” তাঁর মতে, কেবল ফ্রান্স নয়—এই ঘটনা সমগ্র বিশ্বের সর্বত্রই স্বাধীনতার অভ্যুদয়কাল বলে চিহ্নিত।

(৬) বাস্তিল দুর্গের পতনের ফলে রাজার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার পতন

উন্মত্ত জনতা কর্তৃক বাস্তিল আক্রমণ হল স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ প্রতিবাদ। বাস্তিলের পতন প্রমাণ করল যে, রাজধানী প্যারিসের উপর রাজার আর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।

উপসংহার :- বাস্তিল দুর্গের পতনের সংবাদ গ্রামাঞ্চলেও তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি করে। গ্রামাঞ্চলে কৃষকরা সামন্ত প্রভুদের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল।

(FAQ) বাস্তিল দুর্গের পতন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ফরাসি স্বৈরতন্ত্রের অত্যাচারের প্রতীক কাকে বলা হয়?

বাস্তিল দুর্গ।

২. বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটে কবে?

১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ই জুলাই।

৩. প্যারিসে কার নেতৃত্বে জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠিত হয়?

লাফায়েৎ।

৪. বাস্তিলের পতনের পর প্যারিসের শাসনভার কাদের হাতে চলে যায়?

বুর্জোয়াদের।

Leave a Comment