একনাথ শিন্ডে

মহারাষ্ট্রের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে প্রসঙ্গে তার জন্ম, শিক্ষা, ব্যক্তিগত জীবন, ডি লিট উপাধি লাভ, অটোরিকশা চালক, রাজনৈতিক গুরু, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, রাজনীতিতে আগমন, থানে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের নেতা, মহারাষ্ট্র বিধানসভায় যোগ, ক্যাবিনেট মন্ত্রী, ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী, করোনাকালে কাজ, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদ গ্ৰহণ ও জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে তার কাহিনী সম্পর্কে জানবো।

মহারাষ্ট্রের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে

ঐতিহাসিক চরিত্রএকনাথ শিন্ডে
জন্ম৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৪ খ্রি:
পরিচিতিভারতীয় রাজনীতিবিদ
রাজনৈতিক দলশিবসেনা
বর্তমান পদমহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী
পূর্বসূরিউদ্ভব ঠাকরে
মহারাষ্ট্রের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে

ভূমিকা :- একনাথ সম্ভাজি শিন্ডে একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ। তিনি ৩০ জুন ২০২২ সাল থেকে ভারত-এর মহারাষ্ট্র রাজ্য-এর ২০ তম এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

একনাথ শিন্ডের জন্ম

৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে একনাথ শিন্ডে মহারাষ্ট্রের সাতারার জাওয়ালি তালুকের দারে গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

একনাথ শিন্ডের বংশ পরিচয়

তার পরিবার মারাঠা সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। তার পরিবার থানে অঞ্চলে চলে আসে।

একনাথ শিন্ডের শিক্ষা

  • (১) তিনি থানের মঙ্গলা হাই স্কুল অ্যান্ড জুনিয়র কলেজে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। শিন্ডে তার পরিবারকে সমর্থন করার জন্য স্কুল ছেড়ে দিয়েছিলেন।
  • (২) তিনি সরকারী মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পর ২০১৪ সালে তার শিক্ষা পুনরায় শুরু করেন। তিনি ২০২০ সালে যশবন্তরাও চ্যাবন মহারাষ্ট্র ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

একনাথ শিন্ডের ডি. লিট. উপাধি লাভ

২৮ মার্চ ২০২৩ সালে নবি মুম্বাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে ডিওয়াই পাটিল ইউনিভার্সিটি থেকে এবং মহারাষ্ট্রের গভর্নর রমেশ বাইস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ডক্টর বিজয় পাতিলের হাত থেকে শিন্ডে ডি.লিট. (ডক্টর অফ লিটারেচার) অর্জন করেন।

একনাথ শিন্ডের ব্যক্তিগত জীবন

  • (১) ব্যক্তিগত জীবনে একনাথ শিন্ডে লতা শিন্ডেকে বিয়ে করেন। ২০০০ সালের ২ জুন তাদের ছেলে দীপেশ (১১ বছর) এবং মেয়ে শুভদা (৭ বছর) মহারাষ্ট্রে তাদের নিজ গ্রামের কাছে একটি হ্রদে বোটিং করতে গিয়ে নৌকা উল্টে জলে ডুবে মারা যায়।
  • (২) এই ঘটনায় শিন্ডে বিষণ্নতার মধ্যে পড়েছিলেন। আনন্দ দীঘে তাকে মানসিক ভাবে সমর্থন দিয়েছিলেন। তাঁর মনকে আচ্ছন্ন রাখতে এবং বিষণ্ণতা থেকে দূরে রাখার জন্য দীঘে তাকে আরও বেশি দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন।
  • (৩) তাদের জীবিত সন্তান শ্রীকান্ত শিন্ডে একজন অর্থোপেডিক সার্জন। তিনি ২০১৪ সাল থেকে কল্যাণ কেন্দ্র থেকে লোকসভার নির্বাচিত সংসদ সদস্যও হয়েছেন এবং ২০১৯ সালে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন।

অটোরিকশা চালক একনাথ শিন্ডে

রাজনীতিতে আসার আগে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য একনাথ শিন্ডে অটোরিকশা চালাতেন।

একনাথ শিন্ডের রাজনৈতিক গুরু

উদ্ধব ঠাকরের সাথে বিরোধ থাকলেও তার বাবা বালাসাহেব ঠাকরেই ছিলেন একনাথ শিন্ডের রাজনৈতিক গুরু।

শিন্ডের উচ্চাকাঙ্খা

উদ্ধব ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি শীর্ষ পদ পাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করেছিলেন বলে মনে করা হয়। উদ্ধব ঠাকরের কার্যপ্রণালী এবং মিত্র কংগ্রেস পার্টির আধিপত্যের কারণে শিন্ডে দলের প্রধান সমস্যা সমাধানকারী হিসাবে আবির্ভূত হন।

শিন্ডের প্রভাব কমানোর উদ্যোগ

একনাথ শিন্ডের প্রভাব কমানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল বাকি শিবসেনা কর্মীরা। কিন্তু তাদের কথায় গুরুত্ব দেন নি উদ্ধব ঠাকরে। শিন্ডের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই যোগাযোগ রেখেছিলেন গুজরাট বিজেপির সদস্য ও মন্ত্রী কিশোর পাটিল। তিনি মারাঠি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। আর শিন্ডে দলে কোনঠাসা হতেই বিজেপির কাছাকাছি চলে যায় বলেও মনে করছে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা।

একনাথ শিন্ডের রাজনীতিতে আগমন

১৯৮০ সালের গোড়ার দিকে থানে এর শিবসেনা সভাপতি আনন্দ দীঘের মাধ্যমে শিন্ডে রাজনীতিতে পরিচিত হন। ২০০১ সালে দীঘের মৃত্যুর পর শিন্ডে তাঁর উত্তরাধিকারী হন।

থানে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের নেতা একনাথ শিন্ডে

১৯৯৭ সালে তিনি থানে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে প্রথমবারের মতো কর্পোরেটর হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে থানে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের নেতার পদে নির্বাচিত। ২০০২ সালে দ্বিতীয়বারের মতো থানে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে নির্বাচিত হন।

মহারাষ্ট্র বিধানসভায় একনাথ শিন্ডে

২০০৪ সালে একনাথ শিন্ডে প্রথমবারের মতো মহারাষ্ট্র বিধানসভায় নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৯ সালে মহারাষ্ট্র বিধানসভায় পুনঃনির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে মহারাষ্ট্র বিধানসভায় টানা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালে তিনি টানা চতুর্থবারের জন্য মহারাষ্ট্র বিধানসভায় নির্বাচিত হন।

শিবসেনার প্রধান একনাথ শিন্ডে

২০০৫ সালে থানে জেলার শিবসেনার প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনিই প্রথম বিধায়ক যাকে দলে এত লোভনীয় পদে নিয়োগ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে তিনি শিবসেনা পার্টির নেতা হিসেবে নিযুক্ত হন।

একনাথ শিন্ডের সময় শিবসেনার নেতৃত্বে বিরোধ

  • (১) সরকার প্রতিষ্ঠা করার পর তিনি উদ্ধব ঠাকরের অনুমতি ছাড়াই শিবসেনার নাম ও প্রতীক ব্যবহার শুরু করলে সমস্যা তৈরি হয়। কারণ, উদ্ধব ঠাকরেও নিজেকে শিবসেনার নেতা বলে দাবি করেছিলেন।
  • (২) উদ্ধবের দল এর বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছিল, যা শেষ পর্যন্ত ভারতের নির্বাচন কমিশনে স্থানান্তরিত হয়েছিল। কমিশন একনাথ শিন্ডের দলটিকে আসল শিবসেনা দল হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা নেতৃত্বের বিরোধের অবসান ঘটিয়েছে।
  • (৩) নির্বাচন কমিশন উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বে ২০১৮ সালে শিবসেনা দলের গঠনতন্ত্রে করা পরিবর্তনগুলিকে অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। সংশোধনীগুলি দলের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্রীভূত করেছে এবং দলীয় পদের জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের অনুমতি না দেওয়ার জন্য সমালোচিত হয়েছিল।

ক্যাবিনেট মন্ত্রী একনাথ শিন্ডে

তিনি ২০১৪-১৯ সালে মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের PWD এর ক্যাবিনেট মন্ত্রী হন। ২০১৯ সালে মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের জনস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণের ক্যাবিনেট মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২০১৯ সালেই মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের জনস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণের ক্যাবিনেট মন্ত্রী এবং নগর উন্নয়ন ও গণপূর্ত (পাবলিক আন্ডারটেকিংস) মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন।

অভিভাবক মন্ত্রী একনাথ শিন্ডে

২০১৪-১৯ সালে তিনি থানে জেলার অভিভাবক মন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত হন। ২০২০ সালে পুনরায় তিনি থানে জেলার অভিভাবক মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন।

ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে

২৮ নভেম্বর ২০১৯ থেকে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন।

করোনাকালে একনাথ শিন্ডের কাজ

করোনাকালে শিন্ডে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। অসুস্থদের জন্য হাসপাতাল আর পথ্যের ব্যবস্থা করার জন্য দিনরাত ধরে পরিশ্রম করেছিলেন।

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে

তিনি ৩০ জুন ২০২২ সালে মহারাষ্ট্রের ২০ তম মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন।

একনাথ শিন্ডের মন্ত্রীগণ

মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের মন্ত্রীপরিষদের মন্ত্রীরা হলেন – দেবেন্দ্র ফড়নবিশ, অজিত পাওয়ার, রাধাকৃষ্ণ পাতিল, চন্দ্রকান্ত পাতিল, গিরিশ মহাজন, বিজয়কুমার পাতিল, সঞ্জয় রাঠোড়, সুরেশ খাদে, উদয় সামন্ত, রবীন্দ্র চ্যবন, আব্দুল সাত্তার, শম্ভুরাজ দেশাই, মঙ্গল লোধা, ধনঞ্জয় মুণ্ডে, হাসান মুসরিফ, অদিতি তাতকরে, অনীল পাতিল প্রমুখ।

মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংকটে শিন্ডের ভূমিকা

  • (১) একনাথ শিন্ডে আঘাদি জোট ভেঙে ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে জোট পুনঃপ্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলেন। তিনি উদ্ধব ঠাকরেকে কংগ্রেস পার্টি এবং এনসিপি দ্বারা আদর্শগত পার্থক্য ও অন্যায় আচরণের কারণে মহা বিকাশ আঘাদি জোট ভাঙতে অনুরোধ করেছিলেন।
  • (২) তার সহকর্মী শিবসেনা সদস্যরা বলেছেন যে উদ্ধব ঠাকরে তাদের অভিযোগ উপেক্ষা করেছেন এবং উদ্ধব তার নিজের শিবসেনা সদস্যদের উপর কংগ্রেস পার্টি ও এনসিপির পক্ষ নিয়েছেন। শিন্ডে তার অনুরোধ সমর্থন করার জন্য তার দলের দুইয়ের তিন ভাগ সদস্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হন।
  • (৩) সঙ্কট শুরু হয় ২১ জুন ২০২২ সালে যখন শিন্ডে এবং মহা বিকাশ আঘাদি (MVA) জোটের আরও বেশ কয়েকজন বিধায়ক বিজেপি শাসিত গুজরাটের সুরাটে চলে গিয়ে জোটকে বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেলে দেন।
  • (৪) শিন্ডের বিদ্রোহের ফলে উদ্ধব ঠাকরে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। শিন্ডে সফলভাবে বিজেপির সাথে একটি জোট পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন এবং 20 তম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। ভারতীয় জনতা পার্টির দেবেন্দ্র ফড়নবিশ উপ-মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত হন।

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে একনাথ শিন্ডে

আনন্দ দীঘে ও একনাথ শিন্ডের জীবনকে কেন্দ্র করে ২০২২ সালে প্রভিন টারদে ধর্মবীর নামে একটি ভারতীয় মারাঠি ভাষার জীবনীমূলক নাটক মঞ্চস্থ করেন। একনাথ শিন্ডে চরিত্রে অভিনয় করেন ক্ষিতিজ দাতে। এই নাটকে একনাথ শিন্ডে দীঘের সবচেয়ে অনুগত পাদদেশীয় সৈন্যদের একজনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।

উপসংহার :- মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংকটের শেষ প্রান্তে শিবসেন বিদ্রোহের নেপথ্য নায়ক দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ঘোষণা করেন “মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন একনাথ শিণ্ডে। একনাথ শিণ্ডেকে সমর্থন করবে বিজেপি। মহারাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দেবেন একনাথ শিণ্ডে।”

(FAQ) মহারাষ্ট্রের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. একনাথ শিন্ডে কে?

শিবসেনার প্রধান নেতা ও বর্তমান মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী।

২. একনাথ শিন্ডে কখন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে নিযুক্ত হন?

৩০ জুন ২০২২ সালে।

৩. একনাথ শিন্ডের পূর্বে কে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন?

উদ্ভব ঠাকরে।

৪. একনাথ শিন্ডের রাজনৈতিক গুরু কে?

বালাসাহেব ঠাকরে।

Leave a Comment