ফ্রান্সে কনস্যুলেটের শাসনব্যবস্থা -র সময়কাল, অষ্টম বছরের সংবিধান, ফরাসি বিপ্লবের চতুর্থ সংবিধান, প্রজাতন্ত্র রক্ষা, সংবিধানের স্বরূপ, তিনজন কনসাল, কোন শালদের ক্ষমতাও মেয়াদ, আইনসভার বিভাগ হিসেবে কাউন্সিল অব স্টেট, ট্রাইবুনেট, ব্যবস্থাপক সভা, সিনেট, প্রথম কনসালের ক্ষমতা, জনগণের প্রভাব বিহীন ভোটাধিকার ও নেপোলিয়নের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠা সম্পর্কে জানবো।
ফ্রান্সে কনস্যুলেটের শাসন ব্যবস্থা (১৭৯৯-১৮০৪ খ্রিঃ)
ঐতিহাসিক ঘটনা | ফ্রান্সে কনস্যুলেটের শাসন ব্যবস্থা |
সময়কাল | ১৭৯৯-১৮০৪ খ্রিস্টাব্দ |
কনসাল | তিনজন |
প্রথম কনসাল | নেপোলিয়ন বোনাপার্ট |
অবসান | ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দ |
ভূমিকা:- ডিরেক্টরির শাসন উচ্ছেদ করে নেপোলিয়ন ফ্রান্স -এ ‘কনস্যুলেট’ নামে নতুন এক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। নতুন এই সংবিধানের রচয়িতা হলেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ অ্যাবে সিয়েস।
অষ্টম বছরের সংবিধান
নেপোলিয়নের নির্দেশে রচিত এই সংবিধানটি ‘অষ্টম বছরের সংবিধান’ (Constitution of the Year VIII) নামে পরিচিত।
ফরাসি বিপ্লবের চতুর্থ সংবিধান
১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত এই সংবিধানটি হল ফরাসি বিপ্লব -এর চতুর্থ সংবিধান।
প্রজাতন্ত্র রক্ষা
ক্ষমতা দখলের অব্যবহিত পূর্বে নেপোলিয়ন ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি “স্বাধীনতা, সাম্য ও গণ-প্রতিনিধিত্বের পবিত্র নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা করবেন।
সংবিধানের স্বরূপ
বাস্তবে কিন্তু এই সংবিধান ছিল ‘গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে একনায়কতন্ত্র’, ‘আচ্ছাদিত সামরিক স্বেচ্ছাচারিতা’ (‘veiled mili tary despotism’), ‘কৃত্রিম একনায়কত্ব’ (‘thinly disguised autocracy’)।
তিনজন কনসাল
নতুন এই শাসনব্যবস্থায় তিনজন কনসাল-এর একটি ক্ষুদ্র সভা বা শাসন পরিষদের হাতে দেশের শাসনভার অর্পিত হয়। নেপোলিয়ন হলেন প্রথম কনসাল, এবং অপর দুই কনসাল হলেন অ্যাবে সিয়েস ও রজার ডুকোস (Roger Ducos)।
কনসালদের ক্ষমতা ও মেয়াদ
কনসালরা দশ বছরের জন্য নিযুক্ত হন। প্রথম কনসাল নেপোলিয়ন হলেন সর্বেসর্বা। তাঁর হাতে রইল আইন প্রণয়ন, মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত, সামরিক ও বেসামরিক কর্মচারী নিয়োগ এবং যুদ্ধ ঘোষণা ও শান্তি স্থাপনের অধিকার। বস্তুত তিনি হলেন অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী। অপর দুই কনসাল ছিলেন তাঁর সহকারী ও আজ্ঞাবাহী মাত্র।
আইনসভা
আইনসভাকে ভেঙে চারটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করা হয়। যথা –
(১)কাউন্সিল অবস্টেট
২৫ জন সদস্য-বিশিষ্ট কাউন্সিল অব স্টেট আইনের প্রস্তাব উত্থাপন করবে।
(২) ট্রাইবুনেট
১০০ জন সদস্য বিশিষ্ট ট্রাইবুনেট সেই প্রস্তাব সম্পর্কে আলোচনা করবে।
(৩) ব্যবস্থাপক সভা
৩০০ জন সদস্য-বিশিষ্ট ব্যবস্থাপক সভা কোনও প্রকার আলোচনা ছাড়াই প্রস্তাবটি ভোটে পাস করত।
(৪) সিনেট
৮৫ জন সদস্য বিশিষ্ট সিনেট সংশ্লিষ্ট আইনটির শাসনতান্ত্রিক যৌক্তিকতা বিচার করে আইনটি গ্রহণ বা বর্জন করত।
প্রথম কনসালের ক্ষমতা
আইনসভার হাতে বস্তুত কোনও ক্ষমতাই ছিল না। আইনের প্রস্তাবক ‘কাউন্সিল অব স্টেট’-এর সদস্যরা প্রথম কনসাল কর্তৃক মনোনীত হতেন এবং তিনি ছিলেন সভাপতি। সুতরাং তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কোনও আইনের প্রস্তাব উত্থাপিত হতে পারত না।
জনগণের প্রভাব বিহীন ভোটাধিকার
প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার স্বীকৃত হলেও ভোটদান পদ্ধতি এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে জনগণের কোনও প্রভাবই পড়ল না।
নেপোলিয়ন সর্বেসর্বা
এই আইন নেপোলিয়নকে সর্বেসর্বা করে তোলে। সংবিধানটি যখন রাস্তায় রাস্তায় ঘোষণা করা হচ্ছিল, তখন এক মহিলা তা শোনার সুযোগ পান নি। তিনি তাঁর এক প্রতিবেশীর কাছে জানতে চান যে, সংবিধানে কী আছে। প্রতিবেশী এর উত্তরে একটি কথাই বলেন-‘নেপোলিয়ন’। বাস্তবিকই সংবিধানে নেপোলিয়ন ছাড়া অন্য কিছু ছিল না।
উপসংহার:- কোবান বলেন যে, “কনস্যুলেটের শাসনযন্ত্রের ইঞ্জিন ও বাষ্প ছিলেন প্রথম কনসাল।” সংবিধানটি দৃশ্যত প্রজাতান্ত্রিক হলেও বাস্তবে তা ছিল নেপোলিয়নের একনায়কত্বের পথে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ – নেপোলিয়নের ‘ব্যক্তিগত সার্বভৌমত্ব’ প্রতিষ্ঠার বলিষ্ঠ অঙ্গীকার। তাঁর দুই কনসাল ছিলেন ঠুটো জগন্নাথ এবং আইনসভা ছিল সম্পূর্ণ আজ্ঞাবাহী।
(FAQ) ফ্রান্সে কনস্যুলেটের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৭৯৯ – ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দ।
নেপোলিয়ন, অ্যাবে সিয়েস ও রজার ডুকোস।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট।